যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
উনি উপগত হয়ে বললেন, দিন, একটা জোরে লাথি দিন। আমি প্রধান উপদেষ্টার পাছায় তখনই লাথি কষালাম। এখন এটাই রীতি। বিনীত কর্তা যখন এভাবেই সমর্পন করলেন তখন লাথি কষানো ভদ্রতা। আমি বললাম, আরো কিছু ভক্ত আছে আপনার।
উপদেষ্টার বুভুক্ষ চোখ তাঁতিয়ে উঠলো। আল্লাদে গদগদ হয়ে গেলেন এই প্রাক্তন বিশ্বব্যাংক এম্পলয়ী। আরে নিয়ে আসো জলদি! অনেক দিন এমন লাথি কপালে জোটে নি!
আমার সঙ্গীরা সারাদিন প্রধান উপদেষ্টার নাম জপে। এই করেছে, সেই করেছে, নতুন সব তেলেসমাতি, ডিগ্রী, ইংরেজী সব কেমন চোশত্! তারা এসে লাথি কষাতে থাকলো আবলুস কাঠের বিশাল সেক্রিটারিয়েট টেবিলের সামনে ডগি স্টাইলে দন্ডয়মান প্রধান উপদেষ্টাকে।
লাথি পর্ব শেষ হলে প্রধান উপদেষ্টা পাছা ডলতে ডলতে তার চেয়ারে গিয়ে বসলেন।
চাল রপ্তানীকারকদের প্রতিনিধিদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বসতে চাইছিলেন না অনেকদিন যাবত। তিনি বাংলাদেশ থেকে কোন ধরণের চাল রপ্তানীতে রাজী নন। অথচ আমাদের উদ্বৃত্ত শষ্যের গুদাম ভরে গিয়ে এখন রাস্তায় রাস্তায় বস্তাবন্দী হয়ে পড়ে আছে আউষ, আমন, বোরো। মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা চালের বস্তা দিয়ে নদী ভাঙন রোধ করছে, কেউ কেউ ভিটে বাড়ী উঁচু করার কাজে ব্যবহার করছে।
ধানের চিটাগুলো সলিউবল বলে এর নানামুখী ব্যবহার বেড়েছে। গৃহপালিত পশু পক্ষী ঘাসের বদলে ধান খেয়ে খেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছে। রান্না করা ভাতেও তাদের অরুচী।
অথচ ইন্ডিয়াতে কি ব্যাপক খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে যখন রাস্তায় ফেলে দেওয়া খাদ্যের বস্তার উপরে লোকজনের পেশাব করার দৃশ্য সম্প্রচারিত হয় এবং বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা তা নিয়ে মূল্যবোধের নাটিকা প্রচার করে, তখন তারা টিভির স্ক্রিন চাটতে থাকে।
এভাবেও নাকি তাদের ক্ষুধার কিঞ্চিত নিবৃত্তি ঘটে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদ এরপরেও খাদ্য রপ্তানী করবেন না। তাদের বক্তব্য উদ্বৃত্ত চাল আমাদের আন্তর্জাতিক রাজনীতির ট্রাম্পকার্ড। এর বিনিময়ে দীর্ঘদিন যাবত কতগুলো গ্লোবাল স্ট্রাটেজিক ইস্যু নিয়ে বিদ্যমান অচলাবস্থা দূর করা সম্ভব।
আমি অতশত বুঝি না।
প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম, স্যার, আপনার তো এই চাল দাবার গুটি হিশেবে ব্যবহার করার দরকার নেই! অন্যভাবেই সমাধা করতে পারেন দাবী-দাওয়াগুলো!
প্রধান উপদেষ্টা নড়েচড়ে বসলেন। কিভাবে?
যেভাবে আপনি আমাদের দেশের খাদ্য সমস্যা সমাধান করেছেন!
হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। আরে গর্ধভ, আমাদের দেশে লোকজন না হয় নেতাদের লাথি মেরে খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা মেটাচ্ছে, কিন্তু বিদেশীরা তাতে সন্তুষ্ট হবে না!
কেন কেন? আমার মাথায় ঠোকে না। তীব্র খাদ্যসংকটে যখন দেশে চালের দাম বেড়ে গিয়ে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছিল, তখন এই উপদেষ্টাই নতুন এক ফর্মুলা জাতির কাছে উপস্থাপন করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণের পরে দেশের মানুষ চালের উপরে তাদের ঐতিহাসিক নির্ভরতা থেকে চিরজীবনের মত মুক্ত হতে পেরেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন থেকে মূল্যবৃদ্ধি না কমলে জনগন তাদের নিতম্বে লাথি কষাতে পারবেন; প্রতিটা অঞ্চলের সরকারী প্রতিনিধিরা জনগনের জন্য তাদের নিতম্ব উন্মুক্ত করে দেবে, এবং জনগণ তাদের ইচ্ছেমত লাথি কষাবে। এই রীতি বহাল হলো সরকারী যে কোন সৌজন্যতা প্রকাশেও। সভা, সেমিনার উদ্বোধনের শুরুতে ও শেষে থাকলো এই বিশেষ রীতিনীতির প্রয়োগ। ফলশ্রুতিতে ভোজভাজির মত উধাও হয়েছে দেশের খাদ্য সংকট। জনগনের আর ভাত খেতে হয় না।
যে একবার প্রধান উপদেষ্টাকে লাথি কষাতে পারে, তার তিনমাসের জন্য ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগে না। দেশে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয় তার পুরোটাই থেকে যায় উদ্বৃত্ত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উদারচিত্তে তাদের নিতম্ব প্রদর্শন করে বেড়াচ্ছেন। জনগন খুশি, সরকারের নিতম্বও খুশী।
প্রধান উপদেষ্টা আবার ডলতে থাকেন তার নিতম্ব।
আরে, সেটা যদি হতো তবে আমার আর জনগণের লাথি খেতে হতো না!
আমি আরও অবাক হয়ে যাই। এসব কি বলছেন, এ নিউ ব্রান্ড অব ডেমোক্রেসির প্রবক্তা যিনি সফলতার সাথে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলা করেছেন, তিনি লাথি খেয়ে সন্তুষ্ঠ নন!
বিষ্ময় আমার চোখমুখ দিয়ে ঠিকরে বের হয়। প্রধান উপদেষ্টা চেয়ার থেকে উঠে আমাদের সামনে তার পশ্চাতদেশ উন্মুক্ত করে দেন। সপ্তাশ্চার্য দেখার মত আমরা চমকিত হই। অসংখ্য বিদেশি রাস্ট্রের স্টিকার লেগে আছে সেখানে।
তারপরে আবার তিনি ঢেকে দেন। এই প্রথম তার কণ্ঠস্বর কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে। আদ্রস্বরে বলেন, বিদেশীরা প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে স্টিকার বসিয়ে দিচ্ছে। সেসমস্ত খেয়েও যখন আমরা তাদের সন্তুষ্ট করে যাচ্ছি, ভাবলাম, জনগণের লাথি খেয়েও সম্ভবত তাদের সন্তুষ্ট করা যাবে। একটা এক্সপেরিমেন্টই ছিল - কিন্তু এটা যে এভাবে স্বার্থক হয়ে যাবে সেটা কিন্তু আমাদের ধারণাতেও ছিল না!
চাল রপ্তানীর জন্য অনুমতি প্রার্থণা স্থগিত রেখে আমরা বিদায় নেই।
সরকার এখন চাল রাজনীতিতেই ব্যস্ত থাকুক - যে বাঁশ তাদের যাচ্ছে প্রতিনিয়ত - সে থেকে একটু না হয় মুক্তি মেলবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।