যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
অজু করে ঢোকার নিয়ম। অজুস্থানের সামনের দেয়ালে সাবলীল বাংলায় নিয়মাবলী লেখা আছে। আমাদের দলের সবাই অজু করে রুমে ঢুকতেই আলখেল্লা পরিহিত যুদ্ধাপরাধী সর্দার আন্তরিকভাবে অভিবাদন জানালেন। তারপরে ঘুরে দাড়িয়ে পাঞ্জাবী টেনে তুললেন উপরে। মোহতারিম, কষে একটা লাথি কষান এবার! জামাতে ইসলামীর আমীর এভাবেই প্রায়শ্চিত্য করছেন ইদানিং - বিষয়টা আমাদের জানা ছিল।
রাজাকার রপ্তানীর সম্ভাবনা নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের নেতার সাথে উদ্বৃত্ত পন্য রপ্তানীকারক সমিতির মিটিং নির্ধারিত ছিল আগেই। বিগত প্রায় ছ'মাস যাবত আমরা রপ্তানীর জন্য কিছু রাজাকার বরাদ্দ চাচ্ছি। কিন্তু তিনি দিচ্ছেন না। শেষমেষ এ আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
জায়নামাজে বসে তিনি আমার পা টেনে নিলেন।
তার নুরানী দাড়ীতে ঘসতে ঘসতে বললেন, দেখুন, রাজাকার রপ্তানী খুবই সম্ভাবনাময় বাণিজ্য হলেও - আমরা আপাতত দেশের চাহিদা মিটিয়ে শেষ করতে পারছি না। এই যে দেখুন ছাব্বিশ মার্চ চলে এলো, সেখানে একশ রাজাকার সাপ্লাই দিতে হবে। সব হতে হবে অরিজিনাল, রাজাকারপুত্র হলে চলবে না।
আমাদের নড়ে চড়ে বসতে হয়। ইন্ডিয়া, পাকিস্থান, আফগানিস্থান, ইরাক ও প্যালেষ্টাইনের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের রপ্তানীকারক সংঘের একটা দারুণ হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে।
ইরাকের শিয়া, সুন্নী আর কুর্দীরা তো আভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনে বাংলাদেশের রাজাকারদের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে ব্যাকুল। কাশ্মির সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি গেলবার আমাদের খাদ্যশষ্য ক্রয়ের আবেদন করার সময় রাজাকার চালানের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিলেন। যেভাবে জামাত ইসলামীর নেতৃত্বে এদেশের রাজাকারেররা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে সমস্ত দেশবাসীর কাছে নিজেদের নিতম্ব বিলিয়ে দিয়েছেন এবং তার প্রভাবে দেশের মানুষ ইচ্ছেমত সভা সেমিনারে তাদের কষিয়ে লাথি মারার সুযোগ পাচ্ছে সেটা অভাবনীয়। এই রীতি চালু হবার পরে রাজাকারদের নিধনের জন্য এদেশে আর কোন বিচারের প্রয়োজন হয় নি। বরঞ্চ রাজাকারেরা সবাই নথিভুক্ত হয়েছে সরকারের বিশেষ কোঠায়।
তাদের কোন কাজ করতে হয় না, সরকারী ভাতা পায় - বিনিময়ে সরকারী সভা, সমিতি থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় সকল আলোচনা সভায় তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়। উপস্থিত সবাই আসন গ্রহণের পূর্বে তাদের নিতম্বে লাথি কষাতে থাকে, প্রতি লাথিতে স্বাধীণতার চেতনা জাগ্রত হয় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। অর্থনীতি, শিল্পনীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতে এর প্রভাব পড়ে কল্পনাতীত। বছরখানেকের মধ্যেই জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পনের ছাড়িয়ে গেছে।
সুযোগ বুঝে আমি রাজাকারপুত্রদের কথা বলি।
যুদ্ধাপরাধী সর্দার এবার একটু হেসে ওঠেন। নিজের পাছা ডলতে ডলতে ডাকতে বলেন তার পুত্রকে। তারপর আমার মাথায় একটা চাটকি মেরে বলেন, কি যে বলেন আপনারা! আমার বৃদ্ধ পাছায় আমি যা সামলাতে পারি এই নবীনেরা ততটা কিভাবে ধারণ করবে? উপরন্তু যে সমস্ত দেশের কথা বললেন সেখানের লোকজন লাথি মারার জন্য আমাদের সন্তানদের আমদানী করতে চায় না, এর উদ্দেশ্য অন্য কিছু।
কি সেই উদ্দেশ্য আমাদের মাথায় ঢোকে না। ইতোমধ্যে বাচ্চারাজাকার এসে হুজুর পাশে দাড়িয়েছে।
তিনি তাকে টুপি দিয়ে চোখ ঢাকতে বললেন। তারপরে আমাদের পাশে এসে পাজামা খুলে তার নিতম্ব প্রদর্শন করলেন। আতঁকে ওঠার মত দশা হলো আমাদের। তারপরে জিজ্ঞেস করলেন, কি দেখলেন?
আমরা দেখলাম হুজুরে নিতম্ব জুরে কয়েকটা দেশের ন্যাশনাল ফ্লাগ। কোনটাতে কাস্তে, কোনটাতে তরবারী।
তিনি বললেন, আমারা সুদীর্ঘকাল ধরে এসমস্ত কাস্তে তরবারীওয়ালাদের এভাবেই নিতম্ব ভাড়া দিয়ে এসেছিলাম। মনে হয় বিষন্ন একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন।
তারপরের ইতিহাস তো আপনারা জানেন। এখন আমাদের লাথি যোগ্য শর্তে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সন্তানদের আর এ পরিনতির দিকে ঠেলে দেব না।
ওদেরও আমাদের মত নিতম্বনাশ হোক - সেটা আমরা চাই না। একসময় আমরা থাকবো না, তখনতো ওরাই সুযোগ পাবে ন্যাশনাল প্যারেডে লাথি অর্জনের; এ এক বিরাট সৌভাগ্য। তরবারী, কাস্তেওয়ালাদের কাছে বিকিয়ে দিতে হবে না নবীন নিতম্ব!
যুদ্ধাপরাধ সর্দারের কথায় রাজাকার রপ্তানীর স্বপ্ন আপাতত আমাদের ভেস্তে গেলেও দেশ থেকে কখনই রাজাকারমুক্ত হবে না এই সম্ভাবনা দেখে আমরা আল্লাদিত হই। হয়তো একদিন সত্যিই এই নাবালক রাজাকারদের রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।