আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যতক্ষন পর্যন্ত ন্যায় বিচার না হয় - বিচার ততক্ষন পর্যণ্ত অমিমাংসিত থাকে।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

বিশেষ সময়ে বিশেষ কারনে যদি একটা বিচার কার্য সম্পন্ন হয় - আর বিচার যদি ন্যায় বিচার না হয় - যদি ভুল হয় - যদি ধামাচাপার বিচার হয় ততক্ষন পর্যণ্ত কি আমরা বলবো ন্যায় বিচার হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের কয়েকজন ছাত্র একটা পরিকল্পনা তৈরী করে। এরা এদের সেই পরিকল্পনার কথা অধ্যাপককে জানায়। অধ্যাপকের পরামর্শে এরা ইংল্যান্ডের একটা সংস্থা - যা ভুল বিচারের আটকে থাকা লোকজনকে সহায়তা করে থাকে - এদের সাথে কাজ করতে রাজী হয়। এগিয়ে আসেন টরন্টোর বিশিষ্ট আইনবিদরা। শুরু হয় ছাত্রদের গবেষনার কাজ।

এরা পত্রিকা দেখে পুরানো এবং আলোচিত মামলার একটা তালিকা তৈরী করে। গ্রুপ করে এরা সেই মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা আর দন্ডপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলে। সেই মোতাবেক - বেশ কিছু মামলা নিয়ে এরা পুনরায় আইনী লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা করে। এই গ্রুপের অনুরোধে তৎকালীন বিচার মন্ত্রী (২০০০ সালের) কানাডার ক্রিমিনাল কোডের কিছু অংশ সংশোধন করিয়ে যে কোন দন্ডপ্রাপ্ত যাতে একজন বিচারককে তার মামলায় কেন ভুল বিচার হয়েছে তা বলতে পারে সেই সুযোগ তৈরী করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এই বিচার হয়তো সুপ্রীম কোর্ট পর্যণ্ত গিয়ে থাকবে - তারপরও দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুরোধে পুনরায় মামলার শুনানীর বিষয়ে সেই বিচারক নির্দেশ দিতে পারবেন।

আইনী পরিবর্তনের সুযোগে আইনের ছাত্রদের গ্রুপটি - বেশ কিছু মামলা কোর্ট উঠায় এবং লক্ষ্যনীয় যে - তাদের প্রায় সবাই বেকসুর মুক্তি পায়। গতকাল সেই রকম একজন মুক্তি পেয়েছে - যার পচিশ বছর সাজা হয়েছিলো এবং ১৫ বছর জেল খেটে "ভুল বিচার" হওয়ার সুবাদে বেকসুর খালাস পেয়েছে। এখন ওন্টারিও সরকার তার সাথে আলোচনা চালাচ্ছে কি পরিমান অর্থ তাকে ক্ষতিপুরন হিসাবে দিয়ে সরকার নিজেকে ল-স্যুট থেকে মুক্ত রাখতে পারবে। এই যাবত যারা মুক্তি পেয়েছে - তাদের মধ্যে কয়েকটা আলোচিত মামলার তালিকা দিলামঃ ১) জেমস ড্রিসকেলঃ ১৯৯০ সালে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পায়। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারী মাসে কোর্ট পুনরায় শুনানীতে তাকে বেকসুর খালাস দেয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা সাজনোর অভিযোগ করেছে কোর্ট। ২) রোমিও ফিলিওনঃ অটোয়ার এক ফায়ারফাইটারকে হত্যার অভিযোগে ৩৪ বছরের জেল হয় এই লোকের ১৯৭২ সালে। ২০০৩ সালে কোর্টে প্রমানিত হয় - সে সেইদিন অটোয়ায় ছিলোই না। ৩) থমাস সাপিনো: ১৯৮১ সালে পুলিশ ডিএনএ সেম্পল দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা সাজায় - বাকী জীবন জের হয়। কিন্তু সেই সেম্পলিং ছিলো ভুল।

২০০১ সালে সে মুক্তি এবং ২.৬ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপুরন সহ মুক্তি পায়। ৪) ডেভিড মিলগার্ডঃ ১৯৭০ সাল থেকে জেলে - হত্যা মামলায় - ২০০৩ সালে মুক্তি পায় এবং ১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপুরন পায়। একই ধরনের আরো অনেকগুলো মামলার বিচার ভুর প্রমানিত হয় এবং সরকারকে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরনসহ তাদের মুক্তি দিতে হয়েছে। আজ খবরে শুনলাম - ওন্টারিও সরকার এই ভুলগুলো কেন হলো তা বের করার জন্যে একটা কমিশন গঠন করেছে। (২) বাংলাদেশ প্রসংগে কিছু কথা আসার কারনেই এই পোস্ট।

কেউ কেউ বলছে - শুনছি ৩৭ বছর হয়ে গেছে এখন আর বিচারের দরকার কি? কেউ কেউ বলছে - এই বিচারের ফয়সালা হয়ে গেছে - আবার বিচার কি? তাদের কাছে প্রশ্নঃ ১) বিচার কি শেষ হয়েছে? নাকি থামানো হয়েছে? ২) বিচার থামিয়েছে কে? কোর্ট? প্রশাসন? ৩) দালাল/ যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যে সমস্ত আদেশ বা নির্দেশ দিয়েছে তা কি জনগনের অনুমোদন সাপেক্ষে করেছেন? ৪) কোন দিন কি সংসদে দালাল আইন বাতিল বা বিচার বন্ধের বিষয়ে কোন ম্যান্ডেট গ্রহন করা হয়েছে। ৫) বিচার চলাকালীন সময়ে বিচার প্রার্থীকে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে বিচার বন্ধ করে যদি কেউ বলে বিচার শেষ, কোন যুক্তিতে বিচারপ্রার্থীরা সন্তুস্ট হবে? ৬) বিচার হবে কি না হবে - একজন অভিযুক্ত সে বিষয়ে কথা বলার অধিকার পায় কোথা থেকে? লক্ষ্যনীয় যে, যুদ্ধাপরাধী বিচারের মতো একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে একটা নির্দেশ বিচারালয় এবং সংসদকে পাশ কাটিয়ে বন্দুকে আগায় বাঁধা কলম দিয়ে সই স্বাক্ষর করা হলে - তা বিচারপ্রার্থী মানবে কেন? আর তার বৈধতাই বা কি? একটা বিষয় আমাদের সুস্পষ্ট ভাবে মনে রাখতে হবে - শেখ মুজিবুর রহমান সাধারন ক্ষমার ধুয়া তোলে আর জিয়াউর রহমানের একটা সামরিক নির্দেশের কারনে স্থগিত হয়ে যাওয়া যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিষয়টা জনসমক্ষের থেকে আড়ালে রাখার চেস্টা করা হয়েছে। এই বিচারে দাবী কোন দলের না - এই দাবী ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ নির্যাতিত নারীর উত্তরাধিকারের - যতক্ষন না একটা ন্যয় বিচারে মাধ্যমে এই বিষয়টার ফয়সালা হবে ততদিনই যুদ্ধাপরাধীরা আসামী কাঠগড়ায় দাড়িয়ে থাকবে। একজন যুদ্ধপরাধী নিজামী আর তার অনুসারীদের ফতোয়া কখনই ন্যয় বিচারের দাবীকে থামাতে পারবে না। দেশের স্বার্থে - সমাজের স্বার্থে - এই বিচার হতেই হবে।

যতদেরী হবে - দেশের প্রগতি আর অগ্রগতি ততটাই পিছিয়ে পড়বে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.