সাহাদাত উদরাজী www.udrajirannaghor.wordpress.com
অনেকে বলেন বা ভাবেন আমি কেন সরকারের সমালোচনা করি! আমি কেন সরকারের বিপক্ষে কথা লিখি!
কিন্তু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন সরকারের সমালোচনা না করে আমাদের উপায় কি? ধরা যাক একটা পরিবারের কথা। পরিবারের প্রধান যদি ভাল না হন তবে সেই পরিবারটা কি ভাল চলে। পরিবারের প্রধানের বিবেক, বিবেচনা, বিচারিক ক্ষমতাই সেই পরিবার ভাল থাকার প্রধান উৎস। পরিবারের প্রধান যে সিদ্বান্ত নেবেন, সেটাতেই পরিবার চলবে এবং পরিবারের ভাল মন্দ সেটার উপরেই নির্ধারিত হবে। পরিবারের সাধারন সদস্য পরিবারের প্রধানের সিদ্বান্ত মেনে চলবেন এবং সেই মোতাবেক পরিবার চালিত হবে।
এখন এখানে পরিবারের প্রধানের যদি ভুল সিদ্বান্ত আসে, সেটাতে সাধারন সদস্য কথা বলবেই এবং তাদের সেই কথা বলার অধিকার আছে বলেই ধরা হয়। যিনি পরিবারের প্রধান হবেন, তিনি তাদের কথা শুনতে বাধ্য এবং যদি তার ব্যাখ্যা থাকে তবে তিনি তা প্রদান করবেন। সদস্যগন যদি ভুল বলে থাকেন তবে তার ব্যাখ্যা দিতে তাদের শান্ত করবেন এবং মাঝে মাঝে তিনি কঠোর সিদ্বান্ত নিয়ে প্রমান করবেন, তিনি যে সিদ্বান্ত নিচ্ছেন তাই ভাল সিদ্বান্ত।
দেশ আর রাষ্ট্র পরিচালনা মোটামুটি একই ধরা যেতে পারে। দেশের ক্ষমতার প্রধান যিনি তিনি পরিবারের প্রধানের মত করেই দেশ চালাবেন, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
পরিবারের যেমন নানা মতের, নানা জাতের লোক থাকে তেমনি রাষ্ট্রের কথাও একই। রাষ্ট্রকে বড় করে চিন্তা করলে তার নানা বিভাগ, নানা স্থানের ব্যাপারটা একই কথা। আমাদের প্রতিটা জেলা/উপজেলার যেমন একজন প্রধান আছে, তেমনি সকল মন্ত্রনালয় সহ সব কিছুর প্রধান আছেন। তারা তাদের পরিসরে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন এবং নিজে ভুল না করে সেই আইনের প্রযোগ করবেন আর প্রতিদিন তিনি তার এরিয়ার জন্য রাষ্ট্র প্রধানকে রিপোর্ট করবেন। সংক্ষেপে বললে বলা যায় রাষ্ট্রপ্রধান শুধু তদারকি করবেন এবং প্রতিটা অন্যায় বা ভুল আইনের/বিচারের দিকে খেয়াল রাখবেন।
আর অন্য বিশেষ দিক হচ্ছে, রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বিশেষ নির্দেশনা দিবেন! এই তো!
কোন রাষ্ট্রের মানুষই চায় না, রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্র/সরকার তাদের বাসায় গাড়ী ভরে টাকা দিয়ে আসুক। সাধারন আমজনতা চায়, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সুষ্টু বিচার ব্যবস্থা। অবকাঠামোর অর্থ হচ্ছে, সে চায় তার পথচলা যেন সহজ ও সাধারন হয়, সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাবার সহ সকল মৌলিক অধিকার সমূহে। আর বিচার ব্যবস্থা আমরা সবাই চাই এই জন্য যে আমরা নিজেরা যেন কোন অন্যায় না করি এবং আমার সাথে কোন অন্যায় হলে যেন তার বিচার হয়। সাধারন মানুষ হিসাবে আমি আমার পথ বের করে নেব, আমার চাকুরী, ব্যবসা যা ইচ্ছা হয় আমি তাই করবো।
আমি প্রতারিত হলে রাষ্ট্র আমাকে সাহায্য/আমার পক্ষে দাঁড়াবে এবং আমি প্রতারনা করলে রাষ্ট্র আমার বিচার করবে। এই তো! খুব সংক্ষেপে বললে বলা যায়, রাষ্ট্র তাকে একটা আর্দশ প্লাটফর্মে দাড় করিয়ে রাখবে দেশের সকল মানুষের জন্য। রাস্ট্র তাকে দেশের একশতভাগ মানুষের জন্য নিজকে প্রস্তুত রাখতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে সবাই সমান। ধনী দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষিত, নারী পুরুষ, অধিবাসী, যে কোন ধর্মের, সকল লিংগের, গ্রাম শহর মোদ্দাকথা আবালবৃদ্ধবনিতা সকলের জন্য সমান।
রাষ্ট্র কখনো পক্ষপাত আচরণ করতে পারে না!
এখন কথা হচ্ছে এই রাষ্ট্রের যিনি প্রধান বা যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় (সরকারে) থাকেন তারাই রাষ্ট্রকে এমন সমতায় নিয়ে যেতে পারেন, আমজনতা চান্স পেয়ে ভোটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করে দেন মাত্র, তারা এটা ভেবেই করেন যে তাদের ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্র প্রধান/সরকার সে ভুল করবেন না এবং দেশ দেশের মত করেই চলবে, রাষ্ট্র তাদের জন্যই চলবে। সরকারের প্রচেষ্টা এবং আমজনতার সমর্থনই রাষ্ট্র সকলের রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে। যিনি রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে থাকবেন তার মেধা, সততা, বিচারিক ক্ষমতা, বিবেক, ঘটনার বিশ্লেষনের দক্ষতার উপর নির্ভর করবে একটা সফল রাষ্ট্র। আর এর বিপরীত দেখলে অথবা মেধাহীন ঘটনা, ঘুষ, চুরি, দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, নিরাপত্তাহীনতা, বিচারহীনতা, গুম, খাদ্য ভেজাল **, প্রায় সকল ব্যবসাহীর প্রতারনা, চাকুরী দাতাদের অদ্ভুত আচরণ দেখলে কে না কথা বলবে? বেঁচে না থাকার উপায় দেখলে কে না বলবে? রাষ্ট্র ছাড়া কে আমাকে বাঁচাতে পারে?
তাই আমি সরকারের সমালোচনা করবো না তো কার সমালোচনা করবো?
* খাদ্যে ভেজালের কথা মনে হলে আমার মনে হয় দেশে কোন সরকারই নেই! সরকার বা প্রধানমন্ত্রী থাকলে, দেশে খাদ্যে ভেজাল চলতেই পারে না, না, না!
** খাদ্যে ভেজাল যতক্ষন না বন্ধ হবে, আমি বলেই যাব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।