আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুলি

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মানসিক ডাক্তার রাহেলার চেম্বারে বসে বসে রহিম সাহেবের ঝিমুচ্ছিলেন। পাশে চাচাতো ভাই শফিক একটা ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছিল। ডাক পড়তেই রহিম সাহেব ঢুকে গেলেন চেম্বারে, শফিকও সাথে যেতে চাইল কিন্তু থামিয়ে দিল ডাক্তারের সহকারী। প্রতিবারই একই ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটে। শফিক কাজটি বুঝে করে নাকি না বুঝে তা বুঝার উপায় নেই।

রাহেল তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলেন তার রোগীর অবস্থা। এই কেসটিতে একটু বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন রাহেলা। ইন্টারেষ্টিং। রহিম সাহেব মানুষটিকেও পছন্দ হয়েছে তার। ভদ্রলোক দুই মাস আগে বৌকে হারিয়ে দিন দিন নিস্তেজ আর ফুরিয়ে যাচ্ছেন।

জীবনের কোন কিছুতেই আর উতসাহ পাচ্ছেন না। বিষন্নতায় ভুগতে ভুগতে জাগতিক কাজ কর্ম সব কিছুই ত্যাগ করেছেন। বৌকে একটু বেশি ভালবাসতেন বলেই নিকট আত্মীয়দের প্রায় সবাইকে দুরে ঠেলে দিয়েছিলেন। তাই রহিম সাহেবের এই অবস্থা চলতে থাকলে আস্তে আস্তে সবাই হাত গুটিয়ে ফেলেছে, আশা ছেড়ে দিয়েছে তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। চাচাতো ভাই শফিকও বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে এসেছে বড়ভাই শফিকের জন্য।

শেষ চেষ্টাটুকু চালানোর নিমিত্তেই রাহেলার কাছে নিয়ে আসা। আপনার স্ত্রীর ডাকনাম ত তুলি, পুরো নামটি কি ছিল জানতে পারি কি জান্নাতুল ফেরদৌসী রাহেলা এরই মাঝে রহিম সাহেবের ফাইলটি উল্টে পাল্টে দেখতে থাকেন। ভদ্রলোকের বিয়েটা অ্যারেন্জেড ম্যারেজ নয়। কোন এক কারনে রহিম সাহেবের পরিবারের লোকজন বিয়েতে রাজী ছিলেন না। রাহেলা অবশ্য এখন কারনটি জানেন।

সবার অমতে বিয়ে করতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে যে মনোমালিন্যের সুচনা ঘটে তার দিনকে দিন অবনতি ঘটতে থাকে। তুলি অসম্ভব সুন্দরী ছিল। তুলির সুন্দর চেহারাটাই সম্ভবত রহিম সাহেবকে আকৃষ্ট করেছিল। একসময় রহিম সাহেবের জীবনটি শুধুমাত্র তুলিকে নিয়ে আবর্তিত হতে থাকে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন জগতের অন্যসব কিছু থেকে।

ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু ঘটে তুলির। বাপের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেল দুদিনের জন্য। মাসের দুইটা দিন অনীহা সত্তেও শুধুমাত্র বৌকে খুশী করার জন্য বাপের বাড়ীতে বেড়ানোর অনুমতি দিতেন রহিম সাহেব। পুর্ন বয়স্ক একজন মানুষের এভাবে ছাদ থেকে পড়ে মরে যাওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে সবাই। অনেকে আবার এটিকে অশুভ কিছুর কাজ বলেও চালিয়ে দিতে চাইছে।

রহিম সাহেব স্ত্রীর মৃত্যুটাকে আপনি সহজভাবে নিয়েছেন জানি, কিন্তু ঘটনাটির ব্যাপারে সবিস্তারে জানার সুযোগ ঘটেছিল কি আপনার। ওকে হারিয়ে আমি সব হারিয়েছি, তাই জানার কোন আগ্রহ দেখাইনি, জেনে লাভটাই বা কি। আপনার মনে পড়ে কি, আপনার জন্য আপনার স্ত্রী শেষ কি উপহার কিনেছিল। উপহার যা কিছু দেওয়ার আমি দিতাম। তা আপনাকে উপদেশ দিয়েছিলাম দুটাদিন গায়ের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসতে গিয়েছিলেন কি।

জ্বী। রাহেলা বুঝলেন তার রোগীর কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটছে। ছেলেবেলয়ার যে ঘাটে বসে চাদ দেখে দেখে পুরো একটা রাত কাটিয়ে দিয়েছিলেন সে ঘাটটিতে আবার বসার সুযোগ ঘটেছিল কি। জ্বী, তবে মাত্র কয়টা মিনিটের জন্য। ঔষধপত্র ঠিকমত খাওয়া হচ্ছে কিনা জেনে নিয়ে রোগীকে বিদায় জানালেন রাহেলা।

প্রস্থানে উদ্যত রহিম সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে হঠাত করেই রাহেলা শুধালেন রহিম সাহেবকে, তুলি আপনাকে শেষবার খুব একটা দামী মোবাইল উপহার দিয়েছিল , ওটাকি এখনো ব্যবহার করছেন। তুলি আমাকে কখনো কোন মোবাইল উপহার দেয়নি। থমকে দাড়িয়ে উত্তর দিলেন রহিম সাহেব। শেষ দুইমাসে সে তার একাউন্ট থেকে প্রায় দু লাখ টাকা তুলেছিল তার কিছু জানেন কি। ওর একাউন্টে মাসে মাসে একটা বিশেষ অংকের টাকা জমা দিতাম, এর থেকে সে কিছু খরচ করছে কিনা তা কখনো জানার সুযোগ ঘটেনি বা জানতে চাইনি।

চলবে..........।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।