যেখানেই থাকো......ভালো থেকো!!!!!
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আমার কাছে লিখা কোন এক চিঠিতে তুমি আমার প্রতি তোমার ভালবাসা প্রকাশ করেছিলে ঠিক এইভাবে, “আল্লাহর কাছে আমার সব সময়ের জন্য দোয়া থাকে যে, আল্লাহ্ যেন তোমার ভালবাসা ধরে রাখার ক্ষমতা যতোদিন আছে ততোদিনই শুধু আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন। তা ব্যতিত এক সেকেন্ডও আমি বাঁচতে চাইনা। কারণ, আমি যে তোমায় ভীষন ভীষন ভালবাসি। ” তোমার ভালবাসার প্রতি আমার অবিশ্বাস ছিলনা কোনদিনই এবং এখনও নেই। কিন্তু তোমার ইদানিংকার চিন্তাধারাকে আমি সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছিনা।
আর সে কারণে আমার কাছে তুমি ধীরে ধীরে অপরিচিত হয়ে উঠছ। তুমি তো এমনটা ছিলেনা কখনও!! সত্যিই তুমি কি আমার আছ? সেই আমার, যে আমি তোমাকে সব সময় বলে এসেছি, আমাদের হয়তো সম্পদের ঐশ্বর্য নেই, তবে তুমি যদি আমার হও তবে সুখের অভাব হবে না কোনদিন। আমি সবসময় তোমায় সুখে রাখব, কখনও তোমার মনে দুঃখ দিবনা। কিন্তু আজকাল তোমার কথা শুনে মনে হয় সুখের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে অর্থ। অর্থ নেই তো সুখ নেই।
আর তাই তুমি আমাকে উপদেশ দাও অর্থ রোজগারের। ডাল-ভাতের ব্যবস্থা দ্বারা তোমার সুখ হবেনা, তোমার চাই পোলাও-কোরমা-বিরিয়ানির ব্যবস্থা। তাই তুমি সন্দেহ প্রকাশ কর তোমার নিজের ক্ষমতার উপর যে, আবেগ তাড়িত হয়ে যদিও আমাকে বিয়ে কর, বিয়ের পর তা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তোমার ক্ষমতার উপর আমার নিজের খুব প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল, তুমি পারবে এটিই ছিল দৃঢ় বিশ্বাস। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি হতে পারবে, আমাদের পরিবারের সবচেয়ে আদরের বউ, যে তার নিজ গুনাবলীর জোরে সবার আদর কেড়ে নেবে এবং হবে পরিবারের - “বধু নাম্বার ওয়ান”।
আর তুমি ভাল করেই জান যে, আমি আমার পরিবার বলতে শুধু মাত্র আম্মু, ভাইয়াকে বুঝাই না; আমার নানাবাড়ীর সবাইকে বুঝাই। এ পরিবারে আজ পর্যন্ত যতজন বউ হয়ে এসেছেন তাদের সাথে তুলনাতে তুমিই এখন পর্যন্ত এগিয়ে ছিলে এবং কেউ তোমার সমকক্ষ নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু তুমি নিজেই যখন সন্দেহ প্রকাশ কর, তুমি হয়তো পারবেনা, সেক্ষেত্রে আমার বিশ্বাসের তো আর কোন ভিত্তি রইল না।
আমি ক্যাম্পাসে থাকাকালীন একজন আরেকজনকে না দেখে বেশী দিন থাকতে পারতাম না, বোধকরি তোমার অবস্থাও ছিল তদ্রুপ। কোন এক সময় তুমি লিখেছিলে, “তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
কিন্তু দাদাকে বারবার বলতেও লজ্জা লাগে। আমাদের জন্য একটু জায়গাও নেই কোথাও যে দু’জন একসাথে বসে গল্প করব, কিছু সময় কাটাবো। কবে যে এই যন্ত্রণাদায়ক দিনগুলো শেষ হবে?” শেষ দু’বার আমি তোমার সাথে দেখা করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি তোমার আর এখন এমনটি ইচ্ছে করেনা। করলেও তা থেকে নিজেকে সংযত রাখ; যতটা পারা যায় আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা কর বলেই মনে হয়। হয়তবা আমার ধারণা অমূলক, হয়তোবা না।
আমার কেন জানি মনে হয়, তুমি যে কি চাও সেটিই সঠিক করে তুমি জাননা। আমি মনে হয় তোমার কাজ কিছুটা সহজ করে দিতে পারি!!
আমাদের প্রেম, বিয়ে নিয়ে তোমার চিন্তাভাবনা যে কতটা প্রানহীন ছিল, এবং তুমি যে প্রথম থেকেই আমার স্থানে অন্য কাউকে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলে তা ফুটে উঠে তোমার একটা লিখা থেকে। যদিও সে লিখাটার ব্যাপারে আমি তৎক্ষনাৎই রাগ ঝেড়েছিলাম এবং তুমিও খুব ভালো যুক্তিতে তা খন্ডনও করেছিলে। কিন্তু তোমার স্থানে আমি হলে এধরনের কথা মুখে আনতে পারতামনা কিছুতেই। ২০০২ সালে জুলাই/আগস্ট মাসের দিকে তুমি যখন আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা তুললে তখন আমি বোধহয় শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম কি করে আমি আমার আম্মুকে আমার নিজের বিয়ের কথা বলবো, আর তোমার কথাইবা বলব কি করে।
আর তাই তুমি রাগ করে লিখেছিলে, “সত্যি বলতে কি আমি তোমার উপর এতোটাই নির্ভরশীল যে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন নেতিবাচক কথা শুনলে আমি ভীষণ কষ্ট পাই এবং ঘাবড়ে যাই। তবে এটা সত্যি, আমাদের বিয়ে তোমার উপর নির্ভর করে। তুমি যদি চাও বিয়ে হবে যদি না চাও হবে না। যখন তুমি বললে আম্মুকে Manage করবে কিভাবে, তখন আমার ‘দেবদাস’ ছবির কথা মনে পড়লো, যে কিনা ইচ্ছা করলেই পার্বতীকে বিয়ে করতে পারতো। কিন্তু বাবার কথায় পার্বতীকে বিয়ে করলো না।
প্রিয়াঙ্কা'র কথাই ধরনা কেন, দেবাশীষ এতোদিন ঠিকই প্রেম করে গেলো। এখন কিনা বলে, পরিবারের সবাই রাজী না। আসলে এসব ক্ষেত্রে ছেলেদের ইচ্ছা শক্তির অভাবটাই বেশী হয়ে দেখায়। তখন তারা নানা রকমের অজুহাত বানিয়ে নেয়।
আমি জানি, তোমার জন্য মেয়ের অভাব হবেনা এবং আমারও যদি তোমার সাথে বিয়ে নাও হয় হয়তো অন্য কোন ছেলের সাথে হবে, কারোও বিয়ে থেমে থাকবে না।
কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসি। সে জন্যই চাই সারাটা জীবন একসাথে কাটাতে। ” তোমার এ লিখাটায় তুমি একতরফাভাবে ছেলেদের দোষ দিয়ে গেলে। কিন্তু একথাটা নিশ্চয়ই ভেবে দেখনি যে, দেবদাস জীবনেই আর বিয়ে করেনি, পার্বতী কিন্তু ঠিকই স্বামীর ঘর করেছিলো। আর আমার ইচ্ছা শক্তির কথায় যদি আস তবে তা নিশ্চয়ই এখন তোমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হবেনা।
আমি তোমার কথা আম্মুকে বলেছিতো অবশ্যই এবং ভাইয়াকে ডিঙিয়ে তোমার পরিবারের কাছে আমার পরিবারকে পাঠিয়েছিলাম প্রস্তাব নিয়ে। তোমার ইদানিংকার কথা শুনে আমার আজকাল আশঙ্কা হয় বোধহয় ভবিষ্যতে আমাকে দেবদাসের পরিনতিই গ্রহণ করতে হবে!! এখন ভাইয়া যখন আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান এবং তা যখন তার পছন্দ হয়না - আমাকে বেশ দু’চার কথা শুনিয়ে দেন। আমাদের পূর্বেকার ছেলে-মানুষী পরিকল্পনা যে ভেস্তে গেছে, তা ধরে নিয়ে ভাইয়া আমাকে বকা-ঝকা করতেই পারেন এবং করেনও। আর তার ওই বকাগুলি আমি হযম করতে পারিনা এবং তার উপর প্রচন্ড রাগ হয়। কিন্তু কেন জানি এ নিয়ে তোমার উপর রাগ করতে পারিনা কখনও।
আমাদের সেই পূর্বেকার ভেস্তে যাওয়া পরিকল্পনা নিয়ে আজ পর্যন্ত আমি তোমার উপর রাগ দেখেয়েছি এমনটি তুমি বলতে পারবে না। তুমি হয়তো এখন আমার বর্তমান রাগের উৎস জানতে চাইতে পার। আমার বর্তমান রাগের উৎস তোমার আজকালকার চিন্তাভাবনার গতি-প্রকৃতি, চালচলন, যার অনেকটাই অন্যের কথার উপর নির্ভরশীল। তোমার স্বতন্ত্র কোন চিন্তা-ভাবনা নেই। আজ বি.টি.ভি'তে ছায়াছন্দের একটা গান খুব মনে ধরেছে, কেন জানি গানের কথা গুলির সাথে নিজের খুব মিল পাচ্ছিলাম।
তাই তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। যদি মুখে খালামণিকে বলছিলাম, কি বি.টি.ভি দেখেন-Change করেন। রায়হান ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো এবং আমার সাথে দুষ্টামি করছিল। গানটি ছিল এমন.........
“কিছু কিছু মানুষের জীবনে....
ভালবাসা চাওয়াটাই ভুল,
সারাটি জীবন ধরে..... দিতে হয়,
শুধু সেই ভুলের মাশুল.....”
২০০৩ সালে ডিসেম্বর মাসের কথা, তখন তোমার দু’জন Cousin এর বিয়ে নিয়ে তোমাদের বাসায় বেশ কথাবার্তা হচ্ছিল। আর সে সময়টাতে তুমি আমাদের বিয়ে নিয়েও বেশ উদ্বিগ্ন ছিলে।
তোমার কথা ছিল, আমি যে করেই হোক তোমার বাসায় একটা প্রস্তাব পাঠাই। তুমি লিখেছিলে, “এখন বুঝো সব মিলিয়ে আমাদের সবাই আমার জন্য পাত্র খুঁজতে অস্থির হয়ে উঠেছেন। সবার সাথে আমার একা লড়াই করাটা আমার জন্য খুব কষ্টের হচ্ছে। একটা কথা আছে না, না পারি বলতে, না পারি সইতে। তোমার একটা চাকুরী হয়ে গেলে আর তোমাদের বাসা থেকে প্রস্তাব পাঠালে (অবশ্যই আম্মু আসার আগে ফয়েজ স্যারের মাধ্যমে)।
যদি (আল্লাহ না করুন) সেটা Negative Ans. হয় তবে তখন আমি কথা বলতে পারব। তবে ইনশাল্লাহ্ Negative Ans. হবেনা। ” কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের ফরিয়াদ শুনেননি। তোমার পরিবারের উত্তর ছিল ‘না’ বাচক। তুমি কথাও বলেছিলে আমার পক্ষ নিয়ে।
আবার পরিবারের কাছে শপথও করেছিলে আমাকে ভুলে যাবার। এখন তুমি প্রতিনিয়ত পরিবারের কাছে অভিনয় করে যাচ্ছ যে, তুমি আমাকে ভুলে গেছ এবং বেশ ভালই আছ।
ইতি
তোমার প্রিয়
(পুনশ্চঃ- এই চিঠি সংরক্ষণ যোগ্য নয়, এ কথা আমি রাগ করে লিখছিনা। বুঝে, শুনেই লিখছি। কেননা এ চিঠির একটি কপি আমার কাছে রয়েছে।
তাই অবশ্যই অবশ্যই এই চিঠি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ড্রেন বা ডাস্টবিনে ফেলা বাঞ্ছনীয়। কেননা এ চিঠি আমাদের প্রেমের গোপন দলিল। এতে এমন অনেক উপাদানই রয়েছে যা, আমাদের দু’জন ব্যতীত অন্যকারো কাছে প্রকাশ করা অনুচিত। )
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।