আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনহ্যাপী ভ্যালেনটাইনস্‌ ডে-০১

যেখানেই থাকো......ভালো থেকো!!!!!

(এই গল্পের প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত ব্যক্তি বা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। যদি কখনও কারও জীবনের সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় তবে তা অনাকাঙ্খিত কাকতাল মাত্র। )  ভূমিকাঃ কোনো এক প্রেমিক প্রবর তার ভালবাসার বর্ষপূর্তিতে প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে খুব মনখারাপ করে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে এই চিঠিখানা লিখেছিলো, যাতে উঠে এসেছে তাঁদের যুগল জীবনের অনেক হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি। পাঠককে সেই প্রেমিক পুরুষের মানসিক অবস্থার সাথে পরিচয় করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আপনার সকাশে এ চিঠি হাজির করা হলো।

যদিও সে ২৩ নভেম্বর, ২০০৪ইং এই চিঠি লিখা শুরু করেছিলো, কিন্তু তা শেষ করতে তার প্রায় ২/৩ মাস লেগে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এ চিঠিখানা তার প্রেমিকার নিকট পৌঁছেছিল কিনা তা আর জানা যায় না, কিন্তু সামনে ভালবাসা দিবসে পাঠক যাতে এই চিঠিখানা Miss না করেন, সে জন্যই অধমের এই প্রয়াস। আর ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়ে পাঠক'কে মূল ঘটনায় নিয়ে যাচ্ছি শীঘ্রই। নভেম্বর ২৩, ২০০৪ইং রাত - ৯.১৫ মিঃ হিয়া, হৃদয় আমার - অনেক অনেক আদর ও ভালবাসা নিও। কেমন আছ? প্রশ্নটা অবান্তর।

তবুও জানতে ইচ্ছে হয়। তোমার সাথে শেষবার কথা বলেছিলাম ৬ নভেম্বর| সেদিন তুমি ফোন করেছিলে ১০ তারিখ ফোন করতে পারবেনা বলে। আর জানিয়েছিলে ২০ নভেম্বরের অগ্রিম শুভেচ্ছা, সেই সাথে জানিয়েছিলে ২৭ নভেম্বরের আগে ফোন করতে পারবেনা। তবুও আমি আশা করেছিলাম ২০ নভেম্বর তুমি ফোন করবে। কিন্তু আমার আশা পূর্ণ হয় নি।

এমনকি তোমার কোন খোঁজ খবর পাচ্ছিনা এই কয়দিন। দাদাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলাম। সেও তোমার কোন খবর জানাতে পারেনি। তুমি নাকি তার সাথেও কোন যোগাযোগ করনি। গত ২০ নভেম্বর ছিল আমদের ভালবাসার ৪র্থ বর্ষপূর্তি।

এবার আমাদের ভালবাসা পঞ্চম বর্ষে পদার্পন করল। আর এই দিনে আমরা শত শত মাইল দূরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছি। গত কয়েকদিন আমার সময়টা ভাল কাটছেনা। তোমাকে খুব অনুভব করছি; খুব Miss করছি। আমার সয়য় কাটছে আমাদের বিগত দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে।

তোমার কি সব মনে আছে? আজ এই চিঠি লিখার উদ্দেশ্য তোমাকে স্মৃতির সাগরে ডুবিয়ে দেয়া। দেখা যাক কতটুকু সফল হই। ............... ক্যাম্পাসে তোমাদের ক্লাস শুরু হয় নভেম্বর, ৯৮ সালে। তার ঠিক ২ বছর পর আমাদের যুগল পথ চলা শুরু। এক্ষেত্রে তোমার দুই বন্ধু এবং আমার দুই বন্ধুর সহযোগিতা আমাকে সফল হতে সহায়তা করেছিলো।

তুমি প্রেম করার ব্যাপারে বেশ Rigid ছিলে। দুই বৎসরে কেউ তোমার ধারে কাছে ঘেঁষতে সাহস পায়নি। অনেকেই চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তোমার অনমনীয় মনোভাবের কাছে সবাই পরাজিত হয়েছিলো। আমারও ভয় ছিলো, যদি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও।

সেই ভয়ে নিজে তোমার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে জানাতে পারিনি নিজের ভালবাসার কথা। তাই সহায়তা নিতে হয়েছিলো তোমার এবং আমার বন্ধুদের। তোমার সম্মতি আমাকে কতটা আপ্লুত করেছিলো তা নিশ্চয়ই আমার চিঠিগুলো পড়ে অনুভব করতে পেরেছিলে। রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী হতে ডায়লগ চুরি করে আমি তোমাকে লিখেছিলাম - 'আমি পাইলাম। অবশেষে আমি তোমাকে পাইলাম।

' কিন্তু পরে জানতে পেরেছিলাম আমার সেই চিঠিখানা নাকি তুমি হারিয়ে ফেলেছিলে। কিন্তু তুমি দাদার কাছ থেকে বোধহয় জানতে পেরেছিলে চিঠির বিষয়বস্তু এবং প্রত্যুত্তরে লিখেছিলে-'আপনার অনুভূতি থেকে আমার অনুভূতি পুরোপুরি ভিন্ন। প্রতিনিয়ত আমার মাঝে একটি ভয় কাজ করছে। যে দিন সুন্দরভাবে সব কিছুর সমাপ্তি হবে সেদিনই আমার সে ভয় দূর হবে। অনুভূতি হয়তো ভয়ের নীচে চাপা পড়ে আছে।

তবে হ্যাঁ পূর্বের আমি আর এই আমির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। ‘ঐ’ দিনের পর থেকে সব সময় মনে হয় আমার সাথে ছায়ার মত একজন আছে - ঘুরে বেড়াচ্ছে। ' ধীরে ধীরে আমরা দু’জন দু’জনকে জানতে শুরু করলাম। নিজেদের পরিবার, নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, নিজেদের ভাললাগা-মন্দলাগা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে লাগল। চিঠির মাধ্যমে যেভাবে তুমি আমাকে তোমার পরিবারের সাথে পরিচিত করে তুললে তেমনি আমার পরিবারেরও কেউ তোমার কাছে আর অপরিচিত রইল না।

আমার বয়স যখন ৩ বছর তখন আমার আব্বু মারা যান। তোমার আব্বুর প্রসঙ্গ যখন আসল, তুমি লিখেছিলে -'আপনার তো আব্বু নেই, দোয়া করবেন আমার আব্বুকে যেন আল্লাহ্‌ বাঁচিয়ে রাখেন অনেকদিন। আমাদের প্রতি আল্লাহ্‌ যদি সদয় হন তবে আমার আব্বুর কাছে আপনি সে আদরটা পাবেন। কারণ আব্বু আমার দুই দুলাভাইকেই খুব আদর করেন। আর আমার মেঝ দুলাভাই খুব ছোট বেলায় আব্বু হারান বলে ওনাকে খুবই আদর করেন।

‘আব্বু’ বলে এদের সম্বোধন করেন। ' না, আমার সৌভাগ্য হয়নি আব্বুর আদর পাওয়ার। আল্লাহ্‌ আব্বুকে তাঁর কাছে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের প্রেমের ১ বছরের মধ্যেই। আমাদের প্রেমের প্রাথমিক পর্যায়ে আমি তোমার মুখোমুখি হইনি। আমাদের যোগাযোগ হচ্ছিল চিঠির মাধ্যমে।

যতদিন পর্যন্ত আমার শুভাকাঙ্খিরা তোমার সম্মতি আদায় করতে সক্ষম হচ্ছিলনা ততদিন পর্যন্ত তারা আমাকে তোমার সম্মুখে উপস্থাপন করেনি। তাই তুমি উক্তি করেছিলে - 'যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই। ' কিন্তু পাড়া-পড়শীরা এখন নিশ্চিন্তে-ই ঘুমায়। ঘুম নেই শুধু আমার চোখে। ধীরে ধীরে তুমি তোমার খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করলে।

জানাতে লাগলে আমার প্রতি তোমার অনুভূতি। তুমি লিখেছিলে -'আপনি আমার কাছ থেকে শুধু চিঠি আদায় করে নিতে সক্ষম হননি, ভালবাসাও কেঁড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এর পরেও আমার এখনকার মতো অনুভূতি হয়নি। আপনার সাথে তো ভাল করে কথা বলার সুযোগও হয়নি, চিঠির মধ্যেই যোগাযোগ। চিঠি পড়ে পড়েই আর ক্যাম্পাসে আপনাকে দেখে এখন যেন মনে হয় আপনার প্রতি আমার ভালবাসাটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আপনার সাথে কথা বলতে আমার এখন রীতিমত ভয়ই হচ্ছে। আরো যদি গভীর মায়াজালে জড়িয়ে যাই, তাহলে আমার দিনগুলি কাটবে কি করে?' হ্যাঁ, আমি ধীরে ধীরে আমার মায়াজালে তোমাকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের সে দিনগুলিও তাই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা মিলিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। (চলবে...)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।