আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনহ্যাপী ভ্যালেনটাইনস্‌ ডে-০৩

যেখানেই থাকো......ভালো থেকো!!!!!

পূর্ব প্রকাশিতের পর (আনহ্যাপী ভ্যালেনটাইনস্‌ ডে-০১ , আনহ্যাপী ভ্যালেনটাইনস্‌ ডে-০২ ) ক্যাম্পাসে যেহেতু আমরা লুকিয়ে দেখা করতাম, তাই অন্যদের মতো একসাথে ক্যাম্পাসে হাটা কিংবা রিক্সায় করে ঘুরে বেড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আর লুকিয়ে দেখা হতো কালে-ভদ্রে, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু আমাদের আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তখন চিঠি ও টেলিফোনের স্থান ছিল যথেষ্টই। ধীরে ধীরে তুমি চিঠি লিখা ভূলে গেলে। এখন মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয় কিছুদিন অন্তর।

তো টেলিফোনে বাক্যালাপের মাধ্যমে আমি তোমাকে জানাতাম আমার আদর, ভালবাসা। প্রথম যেদিন তোমাকে তা জানাই তোমার তখনকার অনুভূতি ছিল ঠিক এ ধরনের - “আপনি আমার চেয়ে একধাপ এগিয়ে। ঐ যে, ঐ দিন টেলিফোনে কি সুন্দর করে বললেন অনেক অনেক আদর, যা আমি বলতে পারিনি। এখন অবশ্য পারব-এরকম করে বলতে। ফোনে আপনার আদর পেয়ে আমার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো, অনেকক্ষণ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসেছিলাম।

স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগেছে। " "আপনার ভালবাসা আমাকে যে কি দূর্বার করেছে, আমি নিজেই অবাক। বাসায় কেউ থাকার পরও আপনার কাছে ফোন করার সাহস করে ফেলি। আজ যখন ফোন করি তখনতো আম্মা বাসায় ছিলেন। ” হ্যাঁ, আমাদের দুর্বার ভালবাসার কারণে ফোনই আমাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠল।

বাসার অন্যদের সামনেই আমরা কথা বলতাম। তবে তা সীমিত পর্যায়ের। আর যখন বাসার সদস্যরা অন্য কোথায় বেড়াতে যেতেন তাহলে আমরা বেশ দীর্ঘ সময় কথা বলতাম। আর এ জন্য আমার সখ্যতা গড়ে উঠল কার্ডফোন বুথের সাথে। সেই সাথে পেয়ে বসল এক নতুন রোগে।

হলের পাবলিক ফোনটা বেজে উঠলেই মনে হতো, তুমি ফোন করেছ। কান পেতে রইতাম কখন নিচের থেকে হলের গার্ডরা ডাক দেয়, ... ... ...জ... ...ন ... ভা...ই..., আপনার ফোন। হলে থাকলে সারাক্ষণ ফোনের রিঙ্গার কানে বাজত। খাওয়া, টি.ভি. দেখা কোন কিছুতেই মন দিতে পারতাম না। আমার এই রোগ আমার হল জীবনের শেষ অবধি বজায় ছিল।

এখনও যদি হলের ফোনের অনুরূপ রিঙ্গার কোথাও শুনতে পাই তৎক্ষণাৎ হল জীবনের সেই মুহুর্তগুলো মনের মাঝে ভেসে ওঠে। ফোন আমাদের কাছে এতই প্রিয় হয়ে উঠল যে আমরা চিঠি লিখার কথা প্রায় ভূলেই গেলাম। এ নিয়ে আমি অভিযোগ করাতে প্রত্যুত্তরে তুমি জানিয়েছিলে, “আমার প্রতি তোমার এতো অভিযোগ চিঠি দেইনা বলে। যখন তুমি মাস্টার্স শেষ করে যাবে তখনতো চিঠিই হবে তোমার-আমার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তাই আপাতত; ফোনে কথা বলার সুযোগ যেহেতু রয়েছে সেহেতু তার সদ্ব্যবহার করবো না কেন?” হ্যাঁ আমরা ফোনের সদ্ব্যবহার ঠিকই করেছিলাম।

কিন্তু ঐ যে মাস্টার্স শেষ হবার পর চিঠি লিখার যে কথা তুমি উল্লেখ করেছিলে তা আর আমার জীবনে সত্য হয়নি। বিগত ৮ মাসে আমি তোমাকে ২/৪ খানা চিঠি লিখলেও আমাকে চিঠি লিখার মতো সময়, সাহস এবং ইচ্ছা কোনটাই তোমার হয়নি। তুমি হয়ত পরিবেশ-পরিস্থিতির দোষ দেবে, কিন্তু আমি তা মানতে নারাজ। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, “If there is a will, there is a way.” তোমার ইচ্ছা হয়নি, তাই তুমি লিখনি। আর চিঠি লিখাটা বরাবরই তোমার কাছে একটি কষ্টের কাজ ছিল।

সে জন্যও আমাকে তোমার হাতের লিখা চিঠি হতে বঞ্চিত হতে হয়েছে। সে প্রসঙ্গে তুমি লিখেছিলে, “আমার চিঠি লিখতে ভাল লাগেনা সেটা তো তোমাকে বলেছি। আর তোমার কাছে এতোদিন না লিখে তাতেই আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ” হ্যাঁ, তুমি এখন নতুন করে অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছো, আশাকরি ভবিষ্যতেও আরো নতুন নতুন অনেক কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, যেখানে আমার অস্তিত্ব থাকবেনা। আর একথাতো সত্যি যে, মানুষ পৃথিবীতে অমর নয়, সুতরাং আমাকে ছাড়া তোমায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে, এটাই চিরন্তন সত্য।

আমাকে প্রথমাবস্থায় তুমি “আপনি” সম্বোধন করতে। কি চিঠিতে, কি ফোনে। তা নিয়ে আমার বেশ আক্ষেপ ছিল। এবং চাইতাম তুমি আমাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করো। আর আমি ‘তুমি’ সম্বোধনটা তুলে রেখেছিলাম আমার প্রিয়ার জন্য।

আম্মুকে আমি কথোপকথনে তুমি সম্বোধন করে আসছি আমার মুখে কথা ফোটার পর থেকেই। কিন্তু চিঠি লিখতে গেলে কখনই আম্মুকে তুমি সম্বোধন করতে পারতাম না। কলেজে পড়ার সময় যখন প্রথম আম্মুকে ছেড়ে ঢাকায় চলে এলাম তখন প্রয়োজন পড়ল আম্মুর সাথে চিঠিতে যোগাযোগ করার। সে সময় আম্মুকে যখন প্রথম চিঠি লেখার প্রয়োজন পড়ল তখন আমি প্রথমটায় তুমি সম্বোধন চিঠি শুরু করলেও অর্ধেকটা শেষ করার পর মনে হলো আম্মুর জন্য তো এই সম্বোধন নয়, এ সম্বোধনটা তো নিজের প্রিয়তমার জন্য। তখন আম্মুকে নতুন করে চিঠি লিখলাম আপনি সম্বোধন করে আর তুমি সম্বোধনটা তুলে রাখলাম তোমার জন্য।

তাই যখন আমার জীবনে তুমি আসলে তখন আমি চাইতাম তুমিও আমাকে তুমি সম্বোধনে ডাক, কথা বল। কারণ নিজের প্রিয়তমার তুমি সম্বোধনে যে মাধুর্য তা আমি প্রথম থেকেই উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। আমার অনুরোধে তোমার উত্তর ছিল এরকম- “যদি কখনও আপনার সাথে মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ হয় সেদিন না হয় হয় ‘তুমি’ করে বলব। আপাতত আপনি করে চলুক। ” অবশ্য এর কিছুদিন পরেই আমার এ সাধ পূর্ণ হয়েছিলো।

সবচেয়ে মজা পেয়েছিলাম তুমি যখন ঠোটে লিপস্টিক মেখে চিঠিতে তোমার ঠোটের ছাপ সহ আমাকে আদর পাঠালে। খুব উপভোগ করেছিলাম তোমার সে আদর। সেই আদরের প্রত্যুত্তরে তোমাকে এখন এই মুহুর্তে (যখন তুমি আমার এই চিঠি পড়ছ) অনেক, অ-নে-ক, অ...নে....ক আদর; মনপ্রাণ উজাড়, করা, হৃদয় পাগল করা, তনু-মন জয় করা, রক্তের অনুতে অনুতে শিহরণ জাগানিয়া এক রাশ আদর নিও - প্রিয়তমা আমার। (চলবে........)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।