কত অজানারে!
একেবারে ‘পাক্কা নিয়ত’ করে বসেছি। কিছুমিছু একটা লিখতেই হবে। মজার ব্যপার হল, আমি দিনে কম করে হলেও পাঁচ ছয় বার বিভিন্ন বিষয়ে ‘পাক্কা নিয়ত’ করে বসি! যার সবগুলোই এত বেশি ‘পাঁকা’ থাকে যে কিছু বুঝার আগেই পঁচে যায়। এদিকে মাথার ভিতর বিপুল পরিমান আব্জাব এসে জমা হয়ে গেছে। এসব মাথা থেকে বের করে দেওয়া দরকার।
নাইলে কয়েক দিনের মধ্যেই মাথা থেকে গবর পঁচা গন্ধ বের হবে। কোন নাপিত আর আমার চুল কাটতে রাজি হবে না। কিন্তু মাথার ভিতরে কোন ফাঁক ফোঁকর দিয়ে কিছু ভাল জিনিষও ঢুঁকে গেছে মনে হয়! এইসব ভাল জিনিস পঁচা জিনিসদের বেরুতে বাধা দিচ্ছে। তাই আজকের নিয়ত বাইপাস সার্জারি করা। কোন একটা কিছু আজ করতেই হবে।
সার্জারি এর জন্য রামু নাপিতকে পেলে ভাল হত। কিন্তু তারও আমার মতই অবস্থা!! তার উপর তার এক্সপার্টিজ হল ফোঁড়া কাটায়। গুজব আছে, ফর্মে থাকতে দিনে দুচারটে বাইপাস সার্জারিও নাকি চালিয়ে দিতো!! তার গল্প অবশ্য পুরান। পুরান কাসুন্দি! কথায় আছে পুরান চাল ভাতে বাড়ে। কিন্তু পুরান কাসুন্দিতে কি হয় সেইটা কথায় নাই।
সেই পুরান কাসুন্দি দিয়েই আসেন আমারা ‘পাক্কা নিয়তের’ ব্যঞ্জন রাধি-
সে অনেক কাল আগের কথা। রামু নাপিতের তখন সুদিন। দেশ জোড়া তার সুখ্যাতি। তার সেলুনে রাজ্যের ভিড়। তখন অবশ্য সেলুনকে বলতো নাপ্তেখানা।
দুর দুরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে তার নাপ্তেখানায়। রামু নাপিত চুল কাটে না। কাটে ফোঁড়া! তার বিশাল ব্যবসা। শুধু ক্ষুর ধার করাতেই লোক লাগে দুইজন!! আগে বড় ছেলে সুবল একাই ধার করাকরির কাজ করত। এখন মুসলমান পাড়ার কলিমিয়াকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাপ্তেখানায় যবনের ঠাই দেওয়া নিয়ে প্রথমে রামুর বউ একটু গাইগুই করলেও ব্যপারটাতে ভাল হয়েছে বরং বেশি। এখন যবনরা ফোঁড়া কাটায় কলিমিয়ার ধার করা ক্ষুরে। আর কে না জানে? বাঙলা দেশে মুসলমান ঘরই বেশি। ব্যবসাও তাই ফুঁলে ফেঁপে ঢোল!
রামুর চিকিৎসা সোজা সাপ্টা। ধরো আর মারো টাইপ! রোগীরা লাইন দিয়ে আসে আর রামু তাদের ফোঁড়াটা কচ করে কেটে ক্ষতস্থানে হলুদ মাখিয়ে দেয়।
ব্যাস, খেল খতম! টিউমার, বিষ ফোঁড়া, গোটা, চুলকানি, ব্রন সব রোগের তড়িৎ সমাধান!
এদিকে দেশের সব ডাক্তারের মাথায় হাত। নামের সামনে ইংরেজী বর্ণমালার সব বর্ণ যোগ করেও একজন রোগীও আসেনা কাছে। দেশের লোক মুখ্যসুখ্য তারা ইংরিজী বুঝেওনা আর এত সব ডাক্তারের দেওয়া এন্তার সব টেস্ট ফেস্ট করে কয়েক কেজি দাওয়াই খাবার টাকাও নেই তাদের কাছে। এর চেয়ে রামুনাপিতই ভাল।
ডাক্তারদের মহা বিপদ! তাই একদিন তারা বুদ্ধি করে রামুনাপিতকে একটা সংবর্ধনা দিয়ে ফেলে।
...
মূল লেখার চেয়ে তার সাব গল্প বড় হয়ে যাচ্ছে। এক হাত কাঁকুড়ের বার হাত বিচিতে চললেও এই লেখার বার হাত বিচিতে চলবেনা। তার উপর গল্পটা সবার শোনা! তাই বাকি অংশ সংক্ষেপে বলি-
অনুষ্ঠান শেষে ডাক্তার সমিতির চেয়ারম্যান রামু নাপিতকে বলল যে, সে এরকম একজন ট্যালেন্টেড শল্য চিকিৎসক। তার যদি ডাক্তারি বিদ্যেটাও কিছুটা জানা থাকতো, তাহলে কতই না ভাল হত! রামুও ভাবে, তাই তো!!! কথা তো মন্দ নয়। তাই সে ডাক্তারদের তক্তাবধায়নে ছয়মাসের ডাক্তারী বিদ্যের এক কোর্স করে ফেলল! ডাক্তাররা তাকে সোৎসাহে কোনটা আর্টারি, কোনটা নার্ভ, কোনটা কোথায় সব শিখিয়ে দিল।
ব্যাস নাপিতের খেল খতম। বাড়ি ফিরে নাপিত যারই ফোঁড়া কাটতে যায় অমনি মনে পড়ে, এইখানেতো অমুক নার্ভ! ওইখানেতো তমুক আর্টারি। হায় হায় না জেনে এত দিন সব কেটে কুটে দিয়েছি!! এইসব ভেবে নাপিতের হাত যায় কেপে! রোগীরাও তার উপর বিরক্ত। দেখতে দেখতেই নাপ্তেখানা লাটে উঠে।
এইবার আসি মূল গল্পে।
আমার মাথা ভরা আব্জাব। লোকজনকে ধরে ধরে সেই সব বলে বেড়াই। সবাই চরম বিরক্ত। তাদের এসব শোনার টাইম নাই। এরকম সময় হুঠ করে এই লেখালেখির ভুত চাপে মাথায়।
যা মনে চায় কচ করে লিখে ফেলি! চলছিল ভালই, এর মধ্য একদিন এক বই পড়ে ফেললাম। নাম, ‘ভালভাষায় লেখালেখি’ লেখক মাহবুবুল হক। পড়ে অনেক ভাল ভাল জিনিস শিখে ফেললাম। বাহুল্যবর্জন, প্রতিবর্ণীকরণ, যুক্তবর্নের স্বচ্ছতা, ব্লা, ব্লা... এইসব। কিন্তু এসব কোথায় জানি আটকে গেল!!! এখন কিছু লিখতে গেলেই একশো রকম বিপদে পড়ি! বানানের কথা নাহয় বাদই দিলাম।
বাক্যের কোথায় যে গুরুর পা মাড়িয়ে চন্ডাল এসে গুরুচন্ডালী দোষে দুষ্ট করে ফেলে সেই টেনশনে লেখালেখি লাটে! সাথে আছে হাজারো ফ্যাকড়া। উদাহরণ দেই-
“বেচারা গরিব আলীর’ মনে খুব দুঃখ। তার বুড়ো বাপ পরিণত বয়সেই মারা গেল। গাঁয়ের লোক বলাবলি করল- গরিবের বাপ মরেছে। ওদিকে বড়সাহেব মারা গেলেন।
লোকে বলল, বড়সাহেব ইন্তেকাল করেছেন।
গরিব আলী গরিব, তাই তার বাপ মরল। আর বড়সাহেব বড়লোক, তাই তিনি ইন্তেকাল করলেন। গরিবেরা মরে, বড়লোকেরা ইন্তেকাল করেন। গরিবেরা কবরবাসী হয়েই শেষ।
কিন্তু বড়লোকেরা জান্নাতবাসী হন...”
শব্দেরও আবার ধনী গরিব!! এইসব ধনী গরিবের দন্দ্বের মধ্যে পড়ে আমার মাথায় কিরিকিচি লেগে যাচ্ছে। তাই এখন বিদায়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।