আমার ব্লগে হিট কম হয় অতএব কোনও গুরুত্বপূর্ণ লেখা আর এখানে লিখব না। আজ শুধু আরেকটা কাহিনী বলব।
দুই ব্যাক্তি। মেল এন্ড ফিমেল। একই অফিসে চাকরি করে।
দুজনেই সমান পোস্টে তবু একজন পায় অফিসের গাড়ি আর অন্যজন পায় লোকাল বাস। নিশ্চই বুঝে গেছেন! অফিসের গাড়িটা জোটে কার কপালে?
তো লোকাল বাসে যেতে সমস্যা হয় না লোকটির। যেহেতু পুরুষ মানুষ , মানুষের সঙ্গে ঘেষাঘেষি, পা পাড়ানি, চেচামেচি, ধাক্কাধাক্কি, বাদুরঝোলা সবকিছুতেই অভ্যস্ত সে। কিন্তু সেদিন তার পায়ে খুব ব্যাথা পেয়েছে। অফিসে ছুটির আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি।
বিকল্প কেউ নেই। অতএব পা চেচিয়ে তাকে অফিসে আসতেই হয়।
ভেবেছিল আজ বেশি নড়া চড়া না করেই কাজটা শেষ করবে। কিন্তু বরাবরের মতো আজই তার ঝামেলা যেন আরও দেড়গুন বেড়েছে।
পায়ের দিকে খেয়াল করার সময় তার নেই।
এদিকে প্ল্যান করে রেখেছিল বইমেলায় যাবে, একটু শেষের দিকে। ভিড়পাট্টা আর ভালো লাগে না। লম্বা লাইনও আর সহ্য হয় না। কিন্তু আজ যাই কাল যাই করেও আর সময় বের করা হয়ে ওঠে না। এভাবেতো বাণিজ্যমেলাও শেষ হলো! যাওয়া হলো না।
বইমেলায় কি আর যাওয়া হবে না?
লোকটি ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিছুই ভালো লাগে না তার। এরমধ্যে একটি ফোনে আরও মেজাজ বিগড়ে যায়। যাওয়ার সময় তেল এনে দিয়ে গেছ? দেখবোনে রাতে এস কী খাও!
একটু ম্যানেজ করো না!
মানে? আমি যাবো বাজারে? আমার মানসম্মান!..
বাজারে আজকাল সবাই যায়। আমিতো একটু অসুস্থ!
হু! এরকম অসুস্থতা পুরুষদের থাকেই।
ওসব কিছু না। তুমি আসলে চাইছ আমাকে দিয়ে বাজারটাও করাতে। সেটা কিন্তু সম্ভব না। আমি তোমার মতলব বুঝি!
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বাজারে তোমার যেতে হবে না।
আমি এসে তারপর...
পিওনটা প্রবেশের জন্য অনুমতি চাইছে। পিওনদেরও আজকাল পোয়াবারো। দ্বিতীয়বার অনুমতি চাওয়ার সময় ওদের নেই। স্যার ডাকছেন। কোন স্যার (আমারতো স্যারের অভাব নাই)ভাবেন লোকটা।
ডিইডি স্যার
পা টাকে যতোটা সম্ভব না টেনে গেলেন বসের রুমে। এই বইগুলো কিনে নিয়ে আসতে হবে। আপনিতো অনেক বই পড়েছেন! ভালো বুঝবেন। পা টার কথা ভেবে কান্না পাচ্ছিল, তবু। ...
ফেরার পথে কাওরান বাজারের কাছকাছি এসে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ।
নানান কসরত করেও গাড়ি চালু হয় না। শেষে সবার সঙ্গে লোকটিও নেমে পড়ে। এখানে গাড়ি থামালে কেস খেতে হয়। সেই ভয়ে বদভ্যাসী লোকালগুলোও থামছে না, কেউ কেউ হালকা থামালে- সুযোগ করে দিলেও তাতে লোকটির ওঠা সম্ভব হচ্ছে না পায়ের ব্যাথা নিয়ে। অগত্যাই হাঁটতে হাঁটতে কাওরান বাজার তারপর ফার্মগেট থেকে গাড়িতে চড়ে বাসায় পৌঁছে আলুভর্তা দিয়ে চারটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
পরদিন আবার তাকে দৌড়াতে হবে। অনেক দূর! অনন্তকাল!
নিজের ভাগ্য নিয়ে পরিতাপের শেষ নেই লোকটির। তবু পত্রিকার পাতায় খারাপ খবর দেখলেই কেমন কুণ্ঠিত হন, কষ্ট পান। শুধু রাজনীতিবিদ ছাড়া আর কাউকেই গালি দেন না সে। চ্যানেল এবং পত্রিকাগুলো যেভাবে কিছু মাথামোটা লোককে মিডিয়ার মাইক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে তাতে রাজনীতিকদের দেদার স্বার্থ থাকলেও সাধারণ মানুষের যে কোনও কল্যাণ নেই এই কথাটাই যেন সে কাউকে বোঝাতে পারে না ভালো মতো।
কারণ সবাই কোনও না কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের। প্রচণ্ড ক্ষোভ আর ক্ষুধা নিয়ে পত্রিকার পাতা ওল্টায় লোকটি। অনেক খবরের মাঝে একটি খবরে চমকে যান! আরে এই মেয়েটিতো তার সেই কলিগ! কীভাবে মারা গেল? গাড়ি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে জীবন দিতে হলো...
সংবাদটা পুরোপুরি আগাগোড়া দুইবার পড়ে নিশ্চিত হলেন যে নিশ্চিত জীবন-যাপনের সকল ব্যবস্থা সত্ত্বেও মারা গেল যে মেয়েটি! সে তারই কলিগ! আর অসংখ্য অনিশ্চয়তা নিয়েও বেঁচে রইলেন লোকটি। এটাই কি লীলা স্রষ্টার?....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।