আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রিয় কিছু কবিতা (খসড়া এবং "পাঠক অগুরুত্বপূর্ণ" পোস্ট)

যা বিশ্বাস করি না, তা লিখতে-বলতে চাই না, পারবোও না। কিন্তু যা বিশ্বাস করি, তা মুখ চেপে ধরলেও বলবো, কলম কেড়ে নিলেও লিখবো, মারলেও বলবো, কাটলেও বলবো, রক্তাক্ত করলেও বলবো। আমার রক্ত বরং ঝরিয়েই দাও, ওদের প্রতিটি বিন্দুর চিৎকার আরও প্রবল শূনতে পাবে। শুধুই নিজের প্রিয় কবিতাগুলো একখানে করার একটা "স্বার্থবাহী" প্রয়াস, হোমপেজে যেটুকু যায়গা, যেটুক ক্ষণ নেবে তার মার্জনাপ্রার্থী। ।

। সমাধি-লিপি। । মাইকেল মধুসূদন দত্ত দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে ( জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম ) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন! যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী! । ।

মিত্রাক্ষর। । মাইকেল মধুসূদন দত্ত বড়ই নিষ্ঠুর আমি ভাবি তারে মনে, লো ভাষা, পীড়িতে তোমা গড়িল যে আগে মিত্রাক্ষররূপ বেড়ি! কত ব্যথা লাগে পর’ যবে এ নিগড় কোমল চরণে– স্মরিলে হৃদয় মোর জ্বলি উঠে রাগে ছিল না কি ভাবধন, কহ, লো ললনে, মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগে ভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে? কি কাজ রঞ্জনে রাঙি কমলের দলে? নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে! কি কাজ পবিত্রি’ মন্ত্রে জাহ্নবীর জলে? কি কাজ সুগন্ধ ঢালি পারিজাত-বাসে? প্রকৃত কবিতা রূপী কবিতার বলে,– চীন-নারী-সম পদ কেন লৌহ ফাঁসে? । । রাত্রি।

। অমিয় চক্রবর্তী অতন্দ্রিলা, ঘুমোওনি জানি তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি, শোনো, সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায় —সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি— কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন, আলাদা নিশ্বাসে— এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা— অতন্দ্রিলা, হঠাত্ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না, দেখি তুমি নেই || । । বঙ্গভাষা। ।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;— তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি। অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ, মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;— কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল-কানন! স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে— “ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি, এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি? যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!” পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে মাতৃ-ভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে॥ । । সূর্যতামসী।

। জীবনানন্দ দাশ কোথাও পাখির শব্দ শুনি; কোনো দিকে সমুদ্রের সুর; কোথাও ভোরের বেলা র'য়ে গেছে - তবে। অগণন মানুষের মৃত্যু হ'লে - অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয় বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে; এ কোন সিন্ধুর সুর: মরণের - জীবনের? এ কি ভোর? অনন্ত রাত্রির মতো মনে হয় তবু। একটি রাত্রির ব্যথা সয়ে - সময় কি অবশেষে এ-রকম ভোরবেলা হয়ে আগামী রাতের কালপুরুষের শস্য বুকে ক'রে জেগে ওঠে? কোথাও ডানার শব্দ শুনি; কোন দিকে সমুদ্রের সুর - দক্ষিণের দিকে, উত্তরের দিকে, পশ্চিমের পানে? সৃজনের ভয়াবহ মানে; তবু জীবনের বসন্তের মতন কল্যাণে সূর্যালোকিত সব সিন্ধু-পাখিদের শব্দ শুনি; ভোরের বদলে তবু সেইখানে রাত্রি করোজ্জ্বল ভিয়েনা, টোকিও, রোম, মিউনিখ - তুমি? সার্থবাহ, সার্থবাহ, ওইদিকে নীল সমুদ্রের পরিবর্তে আটলাণ্টিক চার্টার নিখিল মরুভূমি! বিলীন হয় না মায়ামৃগ - নিত্য দিকদর্শিন; যা জেনেছে - যা শেখেনি - সেই মহাশ্মশানের গর্ভাঙ্কে ধূপের মত জ্ব'লে জাগে না কি হে জীবন - হে সাগর - শকুন্ত-ক্রান্তির কলরোলে। (সাতটি তারার তিমির, ১৯৪৮) ।

। নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ। । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর, কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান! না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ। জাগিয়া উঠেছে প্রাণ, ওরে উথলি উঠেছে বারি, ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।

থর থর করি কাঁপিছে ভূধর, শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে, ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল গরজি উঠিছে দারুণ রোষে। হেথায় হোথায় পাগলের প্রায় ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায় - বাহিরেতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার। কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন, চারি দিকে তার বাঁধন কেন! ভাঙ রে হৃদয়, ভাঙ্রে বাঁধন, সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন, লহরীর পরে লহরী তুলিয়া আঘাতের পরে আঘাত কর। মাতিয়া যখন উঠেছে পরান কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ! উথলি যখন উঠেছে বাসনা জগতে তখন কিসের ডর! আমি ঢালিব করুণাধারা, আমি ভাঙিব পাষাণকারা, আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া আকুল পাগল-পারা। কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া, রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া, রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি।

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব, ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব, হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি। এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মোর, এত সুখ আছে, এত সাধ আছে – প্রাণ হয়ে আছে ভোর। । কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ - দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান। ওরে, চারি দিকে মোর এ কী কারাগার ঘোর - ভাঙ ভাঙ ভাঙ কারা, আঘাতে আঘাত কর্।

ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি, এসেছে রবির কর। । । । অনন্ত প্রেম।

। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার। চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার, কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার। যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা, অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা, অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে কালের তিমিররজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে, চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে। আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।

আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে— পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে। আজি সেই চিরদিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে। নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিল প্রাণের প্রীতি, একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি— সকল কালের সকল কবির গীতি। । ।

শেষের কবিতা। । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও? তারি রথ নিত্য উধাও। জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন। ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল তুলে নিল দ্রুতরথে দু'সাহসী ভ্রমনের পথে তোমা হতে বহু দূরে।

মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়; রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায় আমার পুরানো নাম। ফিরিবার পথ নাহি; দূর হতে যদি দেখ চাহি পারিবে না চিনিতে আমায়। হে বন্ধু বিদায়। কোনদিন কর্মহীন পূর্ণো অবকাশে বসন্তবাতাসে অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস, ঝরা বকুলের কান্না ব্যাথিবে আকাশ, সেইক্ষণে খুজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে তোমার প্রাণের প্রানে, বিস্মৃতি প্রাদোষে হয়তো দিবে সে জ্যোতি, হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নে মুরতি। তবু সে তো স্বপ্ন নয়, সব চেয়ে সত্য মোর সেই মৃত্যুঞ্জয় - সে আমার প্রেম।

তারে আমি রাখিয়া এলাম অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশ্যে। পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে কালের যাত্রায়। হে বন্ধু বিদায়। তোমায় হয় নি কোন ক্ষতি। মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃতমুরতি যদি সৃষ্টি করে থাক তাহারি আরতি হোক তবে সন্ধ্যা বেলা- পূজার সে খেলা ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লান স্পর্শ লেগে; তৃষার্ত আবেগবেগে ভ্রষ্ট্র নাহি হবে তার কোন ফুল নৈবদ্যের থালে।

তোমার মানস ভোজে সযত্নে সাজালে যে ভাবরসের পাত্র বাণীর ত'ষায় তার সাথে দিব না মিশায়ে যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে। আজও তুমি নিজে হয়তো বা করিবে বচন মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নবিষ্ট তোমার বচন ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়। হে বন্ধু বিদায়। মোর লাগি করিয় না শোক- আমার রয়েছে কর্ম রয়েছে বিশ্বলোক। মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই, শুন্যেরে করিব পূর্ণো, এই ব্রত বহিব সদাই।

উ'কন্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে সে ধন্য করিবে আমাকে। শুক্লপখক হতে আনি রজনী গন্ধার বৃন্তখানি যে পারে সাজাতে অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ রাতে সে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালমন্দ মিলায়ে সকলি, এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি। তোমারে যা দিয়েছিনু তার পেয়েছ নিশেষ অধিকার। হেথা মোর তিলে তিলে দান, করূন মুহূর্তগুলি গন্ডুষ ভরিয়া করে পান হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম, ওগো নিরূপম, হে ঐশ্বর্যবান তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান, গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়। হে বন্ধু বিদায়।

। । অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে। । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অমন আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না।

এবার হৃদয় মাঝে লুকিয়ে বোসো, কেউ জানবে না, কেউ বলবে না। বিশ্বে তোমার লুকোচুরি, দেশ বিদেশে কতই ঘুরি - এবার বলো আমার মনের কোণে দেবে ধরা, ছলবে না। আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না। জানি আমার কঠিন হৃদয় চরণ রাখার যোগ্য সে নয় - সখা, তোমার হাওয়া লাগলে হিয়ায় তবু কি প্রাণ গলবে না। না হয় আমার নাই সাধনা, ঝরলে তোমার কৃপার কণা তখন নিমেষে কি ফুটবে না ফুল চকিতে ফল ফলবে না।

আড়াল দিয়ে লুকিয়ে গেলে চলবে না। । । ক্ষণিকা। ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খোলো খোলো, হে আকাশ, স্তব্ধ তব নীল যবনিকা - খুঁজে নিতে দাও সেই আনন্দের হারানো কণিকা। কবে সে যে এসেছিল আমার হৃদয়ে যুগান্তরে গোধূলিবেলার পান্থ জনশূন্য এ মোর প্রান্তরে লয়ে তার ভীরু দীপশিখা! দিগন্তের কোন্ পারে চলে গেল আমার ক্ষণিকা। । (আপডেট চলতে থাকবে। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.