চোখ মেলে দেখি জানালায় ভোরের পাখি
বড় মামা, তুমি কেমন আছো। আমি ভালো আছি। আসসালামু আলাইকুম। তুমি আমাকে বিদেশ থেকে যে বড় লম্বা পেন্সিলটা কিনে আনছিলা না সেটা হারিয়ে গেছে। আবার বিদেশ গেলে আরেকটা আনবা।
ঔরকম লম্বা একটা আনবা।
গোটা গোটা হাতে লেখা চিঠি পড়ে ছোট ছোট আঙ্গুলের ছোয়া পাই। পিচ্চিদের যত ভাবনা। পেন্সিলের কথা মনে পড়েছে। তাই চিঠি লিখে দিয়েছে।
আবার কোন একদিন নেইল পালিশের কথা মনে পড়েছে তো একটা চিঠি লিখে দিয়েছে। বেশির ভাগ চিঠিই পোস্ট হয়না। আমি উদ্ধার করি বালিশের তলা, খাটের নিচে, সেলফের কোনা থেকে। দেরাজের মধ্যে সযত্নে রাখা এক চিলতে প্যাডের কাগজ ছয় মাস পরে উদ্ধার করে পড়ি আর হাসি।
ছোট মন,ছোট ভাবনা, ছোট আকংখা পেন্সিলের আঁকিবুকিতে উঠে আসে।
প্রথম তিনটি ফোটার উপর যেদিন হাত ঘুরিয়ে লিখল 'ক' সেদিন মনে হচ্ছিল পৃথিবী এখন এই শিশুটির বিজয়ী হাসি দেখে মুচকি হাসবে। তারপর একসময় লিখল মা, তারপর বাবা, আরো কত কি। অনর্গল বলে যায় কত গল্প, কোথায় পায় আল্লাহ জানেন। বাঘের গল্প , কুমিরের গল্প, ভুতের গল্প, আলিফ বা তা পড়াতে আসা হুজুরের কাছে শোনা নবী ইবরাহীমের (আ) গল্প, স্কুলের লাল জামা পড়ে আসা মেয়েটার কাছে শোনা গল্প আমার শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড় তবু শুনতে হয়। নিষেধ করতে পারিনা।
মায়ের মুখে, মায়ের বুকে পরম আদরে, মায়ের হাসিতে, মায়ের বকুনিতে অজান্তে শিখে যাওয়া অনুভুতির প্রকাশ তার মায়ের ভাষায়ই বাঙময় হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তাই আগে চাই মাতৃভাষার গাথুনী, তারপরে অন্যসব। ড্যাডি শুনলে কি আর বাবার বুক ভরে ! কোথায় মামা আর কোথায় আংকেল। দুর হ সামনে থেকে হতচ্ছাড়া স্মার্টনেস। আমার ভাগ্নের লেখা ম আকার মা ম আকার মা ”মামা” অতপর ভুবন ভোলানো মধুর হাসি আমি বাংলাতেই অনুবাদ করি।
বাংলার গন্ধকে গায়ে মেখে অ আ বর্নমালার পাল তুলে ও সমানে এগিয়ে যাক।
আমি মোবাইলে ওর কথা শুনি মামা তুমি এখনও খুলনা কি করো। তুমি ঢাকা চলে আসতে পারোনা। তুমি আসলে খুব মজা হতো। তুমি সে তো আমাদের বাসায় থাকোনা।
তুমি পঁচা।
আমি পঁচা! আমি যদি কিছু আনি সেটাও নিশ্চয়ই পঁচা হবে।
ইশ, তুমি এইবার কি আনবা। মিজান নানা কুস্টিয়া থেকে তিলের খাজা আনছে তুমি কি আনবা।
ও বুঝছি তুমি লাঠি চকলেট আনবা।
মুসান্না কিন্তু লাঠি চকলেট খেতে পারে। ওর জন্যও একটা আনতে হবে।
আমার জন্য একটা চকলেট আনবা, পাশ থেকে মুসান্নার গলা শোনা যায়।
ওরা যদি ইংরেজিতে বলত। কিংবা হিন্দিতে বলত।
অথবা আরবীতে। ইস মজাটাই নস্ট হয়ে যেতো।
বাংলাই ভালো, বাংলাই সুখ। মায়ের ভাষা ,আমার ভাষা, সবার ভাষা বাংলাকে ওরা ঠোটে ঝুলিয়ে রাখে। ইচ্ছা হওয়া মাত্র ছড়িয়ে দেয় ইথারে।
আমরা শুনে প্রীত হই।
ওরা কি সবসময়ই এমন বলবে ! বড় হলে ওরা কি বাংলা মনে রাখবে? টেলিভিশনে হিন্দির যে দাপট, বাংলা ভুলে যাবেনা তো। দুয়েকটা ইচড়ে পাকার মুখে পেয়ারের যে ডায়লগ শুনি তাতে মাঝে মধ্যে ভয় হয়। ড. মো. শহীদুল্লাহর মত বহু ভাষাভাষী হলে সমস্যা নেই। কিন্তু বাংলাকে ভুলে? তা হবার আগেই যেন একুশে ফেব্রুয়ারী কি আটই ফাল্গুন ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে মুছে যায়।
মুছে যায় যেন সালাম, বরকত. রফিক, জব্বার এবং নাম না জানা আরো অনেকের অস্তিত্ব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।