নিজেরে হারায়ে খুজি..... bohurupi.mohajon@gmail.com
আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে যে দেশের উন্নয়নে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিদের বিনিয়োগের একটা বড় অবদান আছে। অন্ততঃ তাদের কথা-বার্তাতে তাই মনে হয়। বিদেশী প্রভুদের ও এমনটাই উপদেশ। তাই যখনই কোন সরকার প্রধান বিদেশে যান তখন সেখানকার বিনিয়োগকারীদের নানান ভাবে হাতে পায়ে ধরে বলে আসেন যে এখানে যেন একটু বিনিয়োগ করে; সে যে ধরণের বিনিয়োগই হোক না কেন। আর কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী যদি খালি দেশে আসে তাহলেই সেরেছে, কোথায় রেখে কোথায় বসাই এমন অবস্থা।
বিদেশী কোম্পানি গুলোও সুযোগ বুঝে নানান আব্দার জুড়ে দেয়....এটা দিতে হবে, ওটা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
মানি যে বিদেশী বিনিয়োগ একটা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে যদি তা ঠিক ভাবে ঠিক জায়গায় ব্যবহৃত হয়। তাই বলে যে কোন বিদেশী বিনিয়োগকেই চোখবুজে খাতির করতে হবে!! এটা কোন ধরণের যুক্তি যে আমাদের দেশীয় কোম্পানি গুলো যেখানে ভাল করছে সেখানে শুধু শুধু অন্যায়ভাবে বেশী সুবিধা দিয়ে বিদেশীদের আনতে হবে!
আসুন একটি চিত্রকল্পের মাধ্যমে দেখি অপরিকল্পীত বিদেশী বিনিয়োগ আমাদের কি উপকার করছে!!!!!
আমরা বিভিন্নধরণের কিছু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিকে নিয়ে একটি হাইপোথেটিক্যাল সিনারিও দাড় করাই। এখানে আমারা গ্যাস সেক্টর নিয়ে আলোচনা করব।
১. ধরি আমাদের বাপেক্স এর একটি আবিস্কৃত গ্যাস ক্ষেত্র আমরা বিদেশী কোন এনার্জি কোম্পানিকে নাম মাত্র মূল্যে দিয়ে দিলাম এবং গ্যাস ক্ষেত্রটিতে ১০০ টাকার গ্যাস মওজুদ আছে।
এখানে সরকারের অংশ থাকে মাত্র ৬ শতাংশ (আসলেই)। তাই ইজারাবাবদ প্রাপ্ত অর্থের জন্য আরও ৪ শতাংশ বাদ দেই। তাহলে প্রথমেই আমরা বিদেশী মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিকে ৯০ টাকা দিয়ে দিলাম প্রকৃত কোন লাভ ছাড়াই।
২. এনার্জি কোম্পানিটি গ্যাস তুলে তা সরকারের কাছেই বিক্রি করবে কেননা গ্যাস রপ্তানি করা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের মোটামুটি আর্ন্তজাতিক মূল্যেই গ্যাস কিনতে হয়।
ধরি উৎপাদনের পর ৯০ টাকার গ্যাসের দাম ১৫০ টাকা। তাহলে আমাদের মোট খরচ হচ্ছে ৯০ + ১৫০ = ২৪০ টাকা।
৩. বিদেশী এনার্জি কোম্পানির কাছ থেকে কেনা গ্যাস দিয়ে এবার বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ধরি গ্যাসের দাম বাদে অন্যান্য মোট উৎপাদন খরচ ৫০ টাকা। তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ লাগছে ২০০ টাকা।
এ বিদ্যুৎ আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা প্রকৃত খরচের চেয়ে কম দামে সরকারের কাছ থেকে কিনি। মানে সরকার এখানে ভর্তুকি দিচ্ছে। আমাদের মত বিদেশী মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও কিন্তু এ সুবিধা পাচ্ছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে আমাদের দেশীয় কোম্পানি গুলোর চাইতেও অনেক কম দামে বিদ্যুৎ পায় । ধরি ২০০ টাকার বিদ্যুৎ তারা কিনছে ১০০ টাকায়। প্রকৃত ভর্তুকির পরিমান যদিও আরও বেশী হয়ে থাকে; প্লাস নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের আব্দারও করে এবং পায়ও অনেকে।
এখানে বিদ্যুৎ বাবদ বিদেশী কোম্পানিগুলোর পেছনে খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা।
এখন মোট খরচ দাড়ালো ৯০+১৫০+১০০=৩৪০...!
৪. আরও আছে! বিদ্যুৎ বা গ্যাস দিয়ে যে পণ্য উৎপাদন হবে, যেমন সার বা অন্য কিছু , তাও আমাদের এখানেই বেচবে এবং আর্ন্তজাতিক দামেই বেচবে। ধরি উৎপাদিত পণ্যের বা সারের দাম ২০০ টাকা। এখন দেখি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পোষর জন্য আমাদের মোট কত টাকা খরচ হল? বেশি না..... ৯০+১৫০+১০০+২০০=৫৪০ টাকা।
এর বদলে আমরা কি পেলাম? আর্ন্তজাতিক দামে কেনা ২০০ টাকার সার বা অন্য কোন পণ্য।
এটা কিন্তু আমরা সহজেই এই দামে আমদানি করতে পারতাম, ধরি পরিবহণ খরচ ২০ টাকা, তাহলে আমদানি করতে খরচ পড়তো ২২০ টাকা। আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে ৫৪০ - ২২০ = ৩২০ টাকা।
আর মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি আনার সুফল কি? কোন বাড়তি লাভ ছাড়াই ৫৪০ টাকার দেনা!! এ টাকা আমরা গার্মেন্টেসে সুই ফুটিয়ে, আমাদের ধানী জমিতে চিংড়ি চাষ করে শোধ দেব।
বি:দ্র: আগে বাপেক্স আমাদের মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগ উৎপাদন করতো। আর এখন তা ৫৬ ভাগে নেমে এসেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমে যাবে।
তখন আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করার জন্যও বিদেশী কোম্পানি গুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।
আমার হিসাবের এসাম্পশনগুলো যতটা সম্ভব বাস্তবতার কাছাকাছি রাখতে চেষ্টা করেছি। প্রকৃত ডেটা পাওয়া গেলে আরও ভালভাবে হিসাবটি করা যেত। তবে এটা বাস্তবের অনেকটাই কাছাকাছি।
প্রকৃত ডেটা লুকায়ে রাখে....।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।