আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল্লাহর আশ্রয়ই যথেষ্ট.......

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

হযরত আবু বকর (রা) এক সময় ইসলাম কবুল করেছেন। তারপর শত বাধা পেরিয়ে আরো অনেকেই ইসলামের পতাকাতলে এসে সমবেত হয়েছেন। মুসলমানের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। সারা মক্কায় যেন চলছে ইসলামের জাগরণ।

নও মুসলিমদের নিয়ে কথাবার্তা, কানাঘুষা হচ্ছে সর্বত্র। পৌত্তলিক ও অবিশ্বাসীদের নিকট ইসলামের শক্তি অসহ্য বলে মনে হল। তারা ভাবল তাদের ক্ষমতার কথা। ধীরে ধীরে পৌত্তলিকরা যে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তা তারা ঠিকই বুঝতে পারল। তারা দেখল তাদের ক্ষমতা ও বাহাদুরী নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

অচিরেই তাদের অহংকারের প্রাসাদ যে ভেংগে খান খান হয়ে পড়বে তা বিধর্মীরা স্পষ্ট দেখতে পেল। তাই এরা নও মুসলিমদের বিরোধিতা শুরু করে দিল। মুসলমানদের গালমন্দ করল মুশরিকরা। ঈমানদার লোকদের চরিত্র হনন করা হল, দেয়া হল মিথ্যা অপবাদও। শুধু কি তাই? মুসলমানদের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হল।

যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদেরকে ধর্ম ত্যাগ করার জন্য চাপও দেয়া হল। এতেও কাজ হল না। তাই নও মুসলিমদের সমাজ থেকে বের করে দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু হল। তাতেও কোন সুফল আসল না। বরং ফল হল উল্টো।

কাফেরদের বিরোধিতা লোকদের সচেতন করে তুলল। লোকেরা মুসলমানদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হল। ফলে ইসলামের আসল সৌন্দর্য তাদের নিকট ফুটে উঠল। কাফেরদের অনেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তারাও কবুল করল ইসলাম।

কাফের বেঈমানরা দমল না। তারা মুসলমানদের উপর শুরু করল নির্যাতন। ক্রমেই এ নিপীড়ন তীব্রতর হতে থাকল। কাফেরদের নির্যাতন ছিল বড়ই পাশবিক। তারা ছিল সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তি।

তারা ধনেজনে ও ক্ষমতায় ছিল প্রভাবশালী। অন্যদিকে মুসলমানদের অধিকাংশই ছিল নিঃস্ব ও নিরীহ। ফলে কাফেরদের অত্যাচার প্রতিরোধ করার সাহস তাদের ছিল না। কাফেরদের অত্যাচারের মাত্রা এতই বেড়ে গেল যে, তা সহ্য করা কষ্টকর হয়ে উঠল। কি করবে নও মুসলিমগণ! ঈমান তো আর ত্যাগ করা যায় না? তাই তারা ঘরবাড়ীর মায়া ত্যাগ করতে চাইল।

অনেকে ঈমান বাঁচাতে দেশ ছাড়ল। বহু মুসলমান ইতোমধ্যেই মদীনায় গিয়ে আশ্রয় নিল। হযরত আবু বকর (রা) ছিলেন প্রিয় নবীর ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনি শুরুতেই ইসলাম কবুল করেন। আল্লাহর দীনকে তিনি গভীরভাবে লালন করেছিলেন।

তিনিও ভাবলেন, মক্কায় আর থাকা যায় না। কাফেরদের নির্মম অত্যাচার তাকেও ব্যথিত করে তুলল। তিনি নিজেও হিজরতের প্রস্তুতি নিলেন। একদিন ঠিকই মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন আবু বকর (রা)। পথিমধ্যে দাগনার সাথে তার দেখা হল।

দাগনা কাররাহ কাবিলার গোত্র প্রধান। দাগনা তাকে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছ আবু বকর? তিনি জবাব দিলেন, মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছি ভাই। চলে যাচ্ছি নিরাপদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে। দাগনা হযরত আবু বকরকে খুব ভালবাসতেন। আবু বকরের কথা শুনে দাগনা মনে দুঃখ পেলেন।

আবু বকর সত্যবাদী, ন্যায়বান ও পরোপকারী। সে মাতৃভূমি ত্যাগ করে চলে যাবে! দাগনা মেনে নিতে পারলেন না। তাই তিনি আবু বকরকে মদীনায় যেতে বাঁধা দিলেন। দাগনা বললেন, তাই, আপনি আমার সাথে চলুন। আমি আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছি।

ইবনে দাগনা বাড়ীতে এসেই কুরাইশদের ডেকে আনলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আবু বকর আমার নিরাপত্তায় আছে। তার ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ইবনে দাগনা। কুরাইশরা তাকে মান্য করত, আবার ভয়ও পেত। তাই দাগনার কথা তারা অবজ্ঞা করতে পারল না।

তবে শর্ত জুড়ে দিল তারা। তারা বলল, আবু বকর আপনার নিরাপত্তায় থাকবে থাক। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তিনি ইবাদত-বন্দেগী করুন তাতেও বাঁধা নেই। তবে এসব কাজ তাকে ঘরে বসেই করতে হবে।

এর কোন ব্যতিক্রম আমরা মানব না। হযরত আবু বকর দাগনার বাসার বারান্দাকে মসজিদ বানালেন। সেখানেই নামায পড়তে শুরু করলেন। জোরে জোরে তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ফলে তাঁর মধুর কণ্ঠ চলে যেত অনেক দূরে।

অনেকে তাঁর সুন্দর তিলাওয়াত শুনে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত। বিষয়টি কুরাইশ নেতাদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেল। এতে কাফেররা বেশ ক্ষিপ্ত হল। তারা ইবনে দাগনার কাছে ছুটে এল। দাগনাকে তাদের আপত্তির কথা জানাল।

তারা বলল, ‘আবু বকর জোরে জোরে কুরআন তিলাওয়াত করেন। তা শুনে আমাদের নারী ও বালকেরা প্রভাবিত হচ্ছে। তাই তাকে এ কাজ ছাড়তে হবে। দাগনা কাফেরদের আপত্তির বিষয়টি আবু বকরকে জানিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, হয় আপনি ঘরে একান্তে বসে ইবাদত করুন, না হয় আমাকে আপনার নিরাপত্তা হতে মুক্তি দিন।

দাগনার কথায় হযরত আবু বকর মোটেও বিচলিত হলেন না। বরং তিনি বললেন, দাগনা আপনাকে ধন্যবাদ, আমার নিরাপত্তার বিষয়ে আপনার চিন্তার কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহর নিরাপত্তাই আমার জন্য যথেষ্ট। তার উপর নির্ভরতার চেয়ে বড় কিছু নেই। আমি আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর উপরই ভরসা করতে চাই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.