'কোন মিস্ত্রি নাও বানাইলো, কেমনে দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ুর পঙ্খী নাও'। কিংবা 'বড় দাদার বউগো বরই পাড়িয়া দেউ মোরে হৈ হৈ হৈইও'- মারো টান, হেইও। সেই সঙ্গে তীর গতিতে ছুটছে নৌকা। নানা কারুকাজ করা লম্বা নৌকার দুই মাথা সুচালো। মাথায় গামছা বাঁধা মাঝি বৈঠা হাতে তার সাঙ্গপাঙ্গদের জেদ তুলছে শরীরে।
মারো টান হেইও। জিততে হলে হেইও। সবার গায়ে এক রঙের পোশাক। এক নৌকায় ৬০ জন জোয়ান। সবাই একই সঙ্গে দাঁড় টেনে বোল তুলছে।
এক নৌকার সমর্থকরা নদীর বুকে ভাসমান ট্রলারে ঢোল বাদ্যিতে মাতোয়ারা। আরেক নৌকার সমর্থকদের ট্রলার থেকে ভেসে আসছে চিরায়ত গ্রামবাংলার বিখ্যাত শিল্পীদের লোকগীতি। অন্য নৌকার সমর্থকরা ট্রলারে নাচানাচি করছেন। সারি সারি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলার মানুষে ভর্তি।
বালু নদীতে নৌকাবাইচ এ যেন লাখ মানুষের মিলনমেলা। নদীর পাড়ে বসেছে হাট। নৌকাবাইচ উপলক্ষে দোকানিরা মোয়া, মুড়ি, গুড় আর মিষ্টির সন্দেশসহ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাসরা সাজিয়ে বসেছে। পড়ন্ত বিকালে নদীর পাড়ের কাশফুলগুলো বাতাসে দুলছে। আর নৌকার দৌড়ে পানিতে উঠেছে ঢেউ।
জোয়ার-ভাটা নদীতে পাশাপাশি নৌকা। বৈঠা টেনে ছুটছে তীর বেগে। কার আগে কে যাবে। টান টান উত্তেজনা। কে হবে চ্যাম্পিয়ন, কে পাবে মোটরসাইকেল, কে পাবে রেফ্রিজারেটর।
গতকাল বাড্ডা থানার বেরাইদ ইউনিয়নের বালু নদীতে সারাদিন ছিল এমনই দৃশ্য। বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং বেরাইদ ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে জলতরঙ্গ, বাংলার বাঘ, মোল্লা বাড়ি, বাংলার তুফান, নাসিরাবাদ এঙ্প্রেস, একতা, ডলফিন, সোনার বাংলা, মায়ের দোয়া, দেশের বন্ধু, উড়িয়া বাজ, খান বাড়িসহ বিচিত্র নামের ২৪টি নৌকা। নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা শেষে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম।
পুরস্কার বিতরণ শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌকাবাইচ গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এই ধরনের আয়োজন মানুষের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ও মেলবন্ধন তৈরি করে। আধুনিকতা আর যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের প্রতিযোগিতা প্রতি বছরই আয়োজন করার জন্য এই এলাকবাসীকে আহ্বান জানাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।