আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টুকরো ভাবনা : মফস্বল বনাম ঢাকার শৈশব- কৈশোর

যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!

আমার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের এক জেলা থেকে আর এক জেলা ভ্রমণ করে। পিতার সরকারী চাকুরীর সুবাদে এক একটি জেলায় দুই থেকে তিন বছর থাকার পর বন্ধুত্বের বাধন ছেড়ে ভিন্ন একটি পরিবেশে যাওয়ার কষ্ট এখনো মাঝে মাঝে বুকের ভিতরে নাড়া দেয়। কি ছিলোনা সেই মফস্বলের শৈশব এবং কৈশোর এর দিনগুলিতে!! প্রতিদিন বিকেলে ফুটবল খেলার মাঠে ম্যারাডোনা হবার স্বপ্নে ফুটবলে লাথি মারা ... শীতের সময়ে পাড়ায় পাড়ায় ক্রিকেট খেলে বেড়ানো... নদী কিংবা পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে গোসল করা... বাসার পাশে ছোট্ট একটা নার্সারী বানিয়েছিলাম কয়েক বন্ধু মিলে। তাই নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন কত পরিশ্রম। এক এক ;দিন ফোটা এক একটি গোলাপ/ডালিয়া কতজনকে ডাক দিয়ে দেখাতাম!! একুশে ফেব্রুয়ারীতে সেই সকাল বেলা খালি পায়ে প্রভাত ফেরী... আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী..... স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে স্কুল থেকে শারীরিক কসরতের প্রতিযোগীতার জন্য নিয়ম করে অনুশীলন।

বিজয় দিবসে আর স্বাধীনতা দিবসে কঠোর রোদের মধ্যে মার্চপাস্ট করে কি অনাবিল তৃপ্তি। আহা কি চমৎকার ছিল সেই দিনগুলি। মাঝে মাঝে ছিপ নিয়ে চলে যেতাম বিলে.. মাছ ধরতে। মাঝিকে ধরে নৌকা চালাবার কি প্রাণান্ত চেষ্টা.. মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট সংগঠন.. কবিতা আবৃত্তি আর পথ নাটকের দল।

শহীদ মিনারে সপ্তাহব্যাপী পথনাটক উৎসব, সেখানে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালনের সময় মনে হতো আমিই রাজা। আর কাজ শেষে বড় ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়া ১০ টাকা মনে হতো সোনার চেয়েও দামী। নিয়মিত স্কুল পালানো... আর স্কুল পালিয়ে খ্যাপ এ ক্রিকেট খেলে বেড়ানো...এভাবেই হেসে খেলে পার করে দিলাম শৈশবটা আর কৈশোরটা । এস এস সি পাশের পর ঠিকানা হলো ঢাকা। প্রথমে ঢাকা কলেজ আর তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।

আমার ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর, মেয়ের তিন। ঢাকার থাকার সময়কালীন আমার নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী... বন্ধুজন এদের ছেলে মেয়েদের জীবনটা কাছ থেকে দেখলাম। বয়সসীমা ৫-৬ থেকে সেই ১৫-১৬ বছর, কিন্তু রোজকার জীবনটা কেমন যেন প্রাণহীন। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। তবে স্কুল, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং..হোমওয়ার্ক ...ঘুম আবার স্কুল... এই যেন প্রাত্যাহিক সময়।

এর মাঝে সময় কর একটু কম্পিউটারে গেমস খেলা বা টিভি দেখা। জীবনের স্কয়ার ফুটে আবদ্ধ জীবন। অধিকাংশ এলাকায় মাঠ নেই, মাঠ থাকলে খেলার পরিবেশ নেই, অধিকাংশ এলাকায় পাড়াভিত্তিক কোন সৃষ্টিশীল সাহিত্য সংস্কৃতি ভিত্তিক সংগঠন নেই...যোগ করলে অনেক বড় লিষ্ট হয়ে যাবে। দুই - এক বছর পর প্রবাস থেকে ঢাকায় ফিরে যাবো। আমার সন্তানদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়।

আমি যে শৈশব আর কৈশোর উপভোগ করেছি.. সেরকম একটা শৈশব-কৈশোর কি ওদের দিতে পারবো? আচ্ছা মফস্বল কি এখনো সেরকম আছে?? আমার কথাগুলি ১৯৮০-৯০ এর সময়কালীন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.