আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতাল আর একজন অপমানিত কৃষক।

মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। হরতালে কি কি ক্ষতি দেখি আমরা? যান, জান এবং মালের ক্ষতি। অনুভুতির, মান- সম্মানের ক্ষতি দেখি না কেউ।

মোহাম্মদ জামাল, বাংলাদেশের এগ্রো সেক্টরে নিয়োজিত থেকে পেট চালানো হাজারো মানুষের মধ্যে আরেকজন। একজন মৃদুভাষী, কোমল ব্যাক্তিত্বের যুবা। আমাদের ক্ষুদ্র- ও মাঝারী ঋণ কার্যক্রমের আওতায় ঋণ নিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। খুব সুন্দর ভাবে গড়ে তুলেছেন তার পোল্ট্রি খামার-টি। নাহ, হরতালে এখনো তার গায়ে ককটেল এসে পড়েনি, তার মুরগী গুলোর কোনটিই রাস্তায় কাবাব হয়ে যায়নি।

কিন্তু, সদা হাস্যজ্জল লোকটির হাসি গেছে। ঘটনা এই অস্থির বাংলায় গুরুতর কিছু নয়। হরতালের কারনে শহর থেকে ২২ কিমি দূরে থাকা তার ক্ষুদ্র ব্যাবসায়টির তিন তিনটি বড় অর্ডার বাতিল হয়েছে। তাতেও সমস্যা ছিলনা, দুর্ভাগ্য এর মাঝে তার মাথায় পড়েছে প্রকৃতির অভিশাপ। হটাৎ তাপমাত্রার ওঠানামায় তার খামারের প্রচুর মুরগী পড়েছে মারা, যার বিশাল একটা অংশই বিক্রয়ের জন্যে ছিল প্রস্তুত।

অনেক দিন ধরেই ঋণের অর্থ পরিশোধের জন্যে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছিল। গতকাল দেখা করতে গিয়ে দেখলাম তিনি উদোম গায়ে ভর দুপুরে নিজেই কাজ করছেন। আমাদের দেখে মুখ লুকোবার জায়গা খুজলেন যেন। শেষে, আসলেন কাচু মাচু মুখ করে। তার এই মুখ আমার পরিচিত নয়।

তার এই অপমানিত চেহারা কখনো দেখিনি আমি। পরিশ্রমী একজন মানুষ কে দেশের অস্থিরতা, অসুস্থতার কাছে হার মানতে হচ্ছে। তিলে তিলে যত্নে বড় করা তার অর্জন ফলাফলের অপেক্ষায় থেকে ধুঁকে ধুঁকে মারা পড়ছে। এই পরিশ্রমী মানুষগুলো- কে সহানুভূতির দুটো বানী শোনাতে ইচ্ছে করলে সেই ইচ্ছে পরিত্যাগ করুন। এসবে তারা স্রেফ অপমানিতই হন।

হাত কচলে, মুখ নিচু করে, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, আর অপমানে নীল হয়ে, শুন্য দু চোখ বাড়িয়ে খোলা আকাশে জায়গা খোঁজার জন্যে জন্ম হয়নি এসব যোদ্ধা কৃষকের। হরতালের এইসব অপ্রকাশ্য ক্ষতির কোন হিসাব রাখা হয় না সমাজে। প্রান মুখ্য রাষ্ট্রে মান-অপমানের জায়গা পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মরে পড়ে থাকে। হরতাল ও ফকির- ধনী বোঝে। খুনে কোপটা সে গরিব দুঃখীর মাথাতেই গোঁজে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.