আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭১-এর গোপন দলিল -৫

সতর্ক করন " জামাত শিবির , যে কোন রকমের মৌলবাদী, ধর্ম ব্যাবসাই ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল জানয়ারের প্রবেশ নিষেধ" পূর্ব পাকিস্তান সরকার স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) অধিদপ্তর সেকশন ১ পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন ১-রাজনৈতিক ১.এক গোপন খবরে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএ ১৮-৪-৭১ তারিখে ঢাকায় পিডিপি প্রধান নুরুল আমিনের সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরও জানা গেছে, নুরুল আমিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে তারা তাকে আশ্বস্ত করেছেন। এর আগে, ১৭-৪-৭১ তারিখে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নুরুল আমিন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার দ্বারা তথাকথিত ‘বাংলা দেশ’ সরকার গঠন সম্পর্কে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ঘোষণার বিরুদ্ধে ঘৃণামিশ্রিত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মতে, এই নেতারাই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুর্দশা ও ভোগান্তির জন্য দায়ি।

২.ঢাকার টঙ্গী শিল্প এলাকার মুসলিম লীগাররা ২০-৪-৭১ তারিখে টঙ্গীতে এক শান্তি মিছিল বের করে। তারা স্লোগান দিয়ে এলাকা প্রদক্ষিণ করে, ভারতীয় অনুপ্রবেশের নিন্দা জানায় এবং পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষায় দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে। ৩.পাকিস্তান মুসলিম লীগের উদ্যোগে কুমিল্লায় ২৯-৪-৭১ তারিখে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা সামরিক পদক্ষেপের সমর্থনে ও পাকিস্তানের অখ-তার পক্ষে স্লোগান দেয়। ৪.সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি উপেক্ষা করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপের নিন্দা অব্যাহত রেখেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

৫.মৌলভী ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে ২০-৪-৭১ তারিখে ঢাকায় ইস্ট পাকিস্তান পিস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার স্টিয়ারিং কাউন্সিলের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় সদর দপ্তর করে এ সংগঠনের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘অল পাকিস্তান পিস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল’। ৬.এ পক্ষকালে বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোকজনকে গুজবে কান না দিতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানান হয়েছে এসব সভা থেকে। ৭.ইস্ট পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট)-এর ‘মুক্তি যুদ্ধ’ শিরোনামের একটি পত্রিকার প্রথমবর্ষ, প্রথম সংখ্যা, মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় গোপনে প্রচার করা হয়েছে।

এতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলের (আওয়ামী লীগ) সমালোচনা করে বলা হয়েছে যে তাদের আন্দোলন জনগণের মুক্তির আন্দোলন নয়। এতে বলা হয়েছে, ‘পূর্ব বাংলা’র জনগণের মুক্তির জন্য কৃষকদের সশস্ত্র বিপ্লব আরম্ভ হয়েছে এবং এতে জোতদার, সুদখোর, শত্রুর চর ও শ্রেণীশত্রুদের খতমের মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে এই বিপ্লব ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান হয়েছে পার্টিকর্মীদের প্রতি। এছাড়া স্থানীয় ও বিদেশী পুঁজিবাদীদের জাঁতাকল থেকে ‘পূর্ব বাংলা’র মুক্তির জন্য বিপ্লবী গণবাহিনী সংগঠিত করতেও পার্টিকর্মীদের আহ্বান জানান হয়েছে। ৮.অসমর্থিত এক সূত্রে জানা গেছে, ইস্ট পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (হাজী দানেশ-আনোয়ার জাহিদ গ্রুপ)-এর উদারপন্থী অংশের কতিপয় নেতৃস্থানীয় কর্মী পাকিস্তান পিপল’স পার্টির লাইনে ‘পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি’ নামে নতুন একটি দল গঠনের চেষ্টা করছে। সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে অর্থনৈতিক পদ্ধতি প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে প্রধানত শ্রমিক ও ছাত্রদের সমর্থন আদায় হবে এ দলের লক্ষ্য।

তারা চীনের সম্ভাব্য সমর্থন পাওয়ার হিসেব কষছে এবং আশা করছে মার্কিনপন্থীদের প্রস্থানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেখানে তাদের নতুন দলকে বিপুলভাবে স্বাগত জানান হবে এবং তাদের দল একটা বিশাল প্ল্যাটফর্ম পাবে। ৯.ঢাকায় ২৬-৪-৭১ তারিখে সীমিত পরিমাণে সাইক্লস্টাইলকৃত একটি গোপন লিফলেট বিলি করা হয়েছে। এটির শিরোনাম,‘পূর্ব বাংলার বিপ্লবী জনগণের প্রতি মুক্তি ফ্রন্টের আহ্বান’। ২০-৪-৭১ তারিখে এটি ইস্যু করে ইস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল লিবরেশন ফ্রন্ট (দেবেন শিকদার-মতিন গ্রুপ, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি)-এর ঢাকা জেলা ইউনিট। গেরিলা যুদ্ধ সংগঠন, গণমুক্তি বাহিনী গঠন, প্রত্যেক গ্রামে মুক্তি ফ্রন্টের ইউনিট গঠন, অস্ত্র-অর্থ-খাদ্য দিয়ে ফ্রন্টকে সাহায্য করা, গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েত ও গণ-আদালত স্থাপন ও বর্গাচাষের অর্ধেক ফসল পঞ্চায়েত তহবিলে প্রদান করার জন্য এ লিফলেটে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে।

যারা এ আহ্বানে সমর্থন বা সাড়া দেবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে লিফলেটের উপসংহারে। ১০.পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন (পি.বি.এস.এ.)-এর বরিশাল জেলা কমিটির নামে ৮ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখযুক্ত ‘পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনে বরিশাল জিলা হাই কমান্ডের আহ্বান’ শিরোনামের একটি লিফলেট গোপনে সীমিত পরিমাণে ঢাকা নগরীতে বিলি করা হয়েছে। লিফলেটে উল্লেখ করা হয়েছে বিপ্লব সফল করতে প্রয়োজন তিনটি অস্ত্র (১)একটি সংগঠিত পার্টি, (২)গণ ফৌজ, এবং (৩) একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট। সর্বত্র পার্টি ইউনিট পুনর্গঠন, যেখানে নেই সেখানে নতুন ইউনিট স্থাপন, গণ ফৌজ গঠনের উদ্দেশ্যে দ্রুত প্রত্যেক ইউনিটে একজন অধিনায়ক ও একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টাসহ পাঁচ থেকে নয় সদস্যের গেরিলা স্কোয়াড ও মিলিশিয়া গঠনের জন্য পার্টিকর্মীদের প্রতি এতে আহ্বান জানান হয়েছে। লিফলেটে বলা হয়েছে, গণ ফৌজের যোদ্ধাদের দায়িত্ব হবে শত্রুদের খতম করা ও আত্মরক্ষা. জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য দেশপ্রেমিক দল, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের সমন্বয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করা।

এছাড়াও কথিত ‘পাকিস্তানি উপনিবেশিক সেনাবাহিনী’ ও এর চরদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগাতে জোরদার প্রচারণা চালানো এবং স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনগণকে উৎসাহিত করার অহ্বান জানান হয়েছে পার্টিকর্মীদের। সশস্ত্র বাহিনীকে ঘেরাও ও খতম করতে আওয়ামী লীগসহ সব দেশপ্রেমিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও পারস্পরিক সহযোগিতার আবেদনও জানান হয়েছে লিফলেটে। শেষে স্লোগান যোগ করা হয়েছেÑ ‘পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা জিন্দাবাদ,’ ‘পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্্রজাতন্ত্র জিন্দাবাদ,’ ‘পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী ও তার দালালদের খতম করুন’ ইত্যাদি। ২-পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদপত্র ১১.কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনের প্রতি কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা পালনে ভারতের ব্যর্থতায় কঠোর নিন্দা প্রকাশ করেছে সংবাদপত্র। ১২.সম্প্রতি লাহোরে ভারতীয় বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিচার বিভগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।

দি মর্নিং নিউজ (২২-৪-৭১) লিখেছে,‘বহুদিন ধরে ভারত যে দানবীয় খেলা খেলছে তা অবশেষে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাবলীর তদন্ত থেকে যেসব তথ্য জানা গেছে তাতে আর কোনও সন্দেহ নেই ভারত সরকারের পরিকল্পনায় এটা ঘটানো হয়েছে, যার উদ্দেশ্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি করা। ’ ১৩.আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশপ্রেমিক নাগরিকদের জান-মাল-সম্পদ রক্ষার যে আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান, তার ভুয়সি প্রশংসা করেছে সংবাদপত্র। ৩-যুব ও ছাত্র বিষয়ক ১৪.পাকিস্তান জামায়াত-ই-তোলাবা-ই-আরাবিয়া (পাক জে.টি.এ.)-এর সাধারণ সম্পাদক ১৪-৪-৭১ তারিখে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার সুরক্ষায় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ১৫.ডেমক্রাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্ট (ডিএসএফ)-এর সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটি ২০-৪-৭১ তারিখে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের প্রতি ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের নিন্দা জানিয়েছে।

১৬.অসমর্থিত এক খবরে জানা গেছে, ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস’ লীগ (ইপিএসএল)-এর সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস’ ইউনিয়ন (ডিইউসিএসইউ)-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট আ.স.ম. আবদুর রব (ইপিএসএল) ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস ওরফে মাখন (ইপিএসএল)সহ কতিপয় ইপিএসএল নেতা এবং এএলের টিকেটে নির্বাচিত কয়েকজন এমএনএ ও এমপিএ সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা ও সোনামুড়ায় (ভারত) অবস্থান করছেন। জানা গেছে, সোনামুড়া ও আগরতলার মধ্যে বিনা খরচে যাতায়াতসহ সব ধরনের সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন তারা। ১৭.এক গোপন সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সাবেক ডেপুটি স্পিকার আবদুল মতিন (পিএমএল/এফ.কিউ. গ্রুপ) বলেছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্শাল ল কর্তৃপক্ষের সমর্থনে ছাত্রদের এগিয়ে আসা উচিৎ, নতুবা তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেছেন, এ অঞ্চলে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে মার্শাল ল কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার মূল লক্ষ্য নিয়ে একটি নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা দরকার। ৪-সম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ১৮.প্রদেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

৫-শ্রমিক পরিস্থিতি ১৯.ঢাকা জেলার ডেমরা, তেজগাঁও, টঙ্গী, পোস্তগোলা, ফতুল্লা, কেরাণীগঞ্জ, গদনাইল ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার অধিকাংশ মিল-কারখানায় বিভিন্ন তারিখ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। তবে কর্মী-উপস্থিতি কম। ২০.১৬/১৭-৪-৭১ তারিখ রাতে আদমজী জুট মিলস ৩ নম্বরের সাধু সর্দার এবং আরও দুজন (স্থানীয়) অজ্ঞাতপরিচয় ঘাতকদের হাতে নিহত হয়। এ ব্যপারে একটি মামলা ইউ/এস. ১৪৮/১৪৯/৩০২, পিপিসি দায়ের করা হয়েছে স্থানীয় থানায় এবং আদমজীনগরের নিউ কলোনির শামিম আহমদ ও অন্য চারজনকে (স্থানীয় নয়) গ্রেফতার করা হয়েছে। ২১.জানা গেছে, আদমজী জুট মিলসের জনা ১৫ কর্মী (স্থানীয়) ২৭-৪-৭১ তারিখে ঢাকার বন্দর থানার কুড়িপাড়ায় এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জাতিগত সমস্যার কারণে কাজে যোগ দিতে না-পারা কারখানার শ্রমিকদের দুর্ভাগ্যজনক পলায়ন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে।

তারা শ্রমিকদের পলায়নের জন্য রাজনৈতিক ও শ্রমিক নেতাদের দায়ি ও সমালোচনা করেছে। এছাড়া স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা ও শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফিরে আসার পরিবেশ তৈরি করার জন্য শান্তি কমিটি গঠনে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। ৬-আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ২২.আগের বছরের একই পক্ষকালে সংঘটিত ১৮টির বিপরীতে এ পক্ষকালে ১৯টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বিভাগওয়ারি ডাকাতির পরিসংখ্যান বিভাগ চলমান পাক্ষিক সমীক্ষণ গত বছরের একই সময়ের হিসাব ঢাকা ১৪ ৫ চট্টগ্রাম ৩ ০ খুলনা ২ ৭ রাজশাহী ০ ৬ মোট ১৯ ১৮ ৭-অর্থনীতি, চাষাবাদ ও জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ২৩.জনগণের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অসন্তোষজনক রয়েছে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও অত্যন্ত খারাপ।

বিশেষ করে যোগাযোগের সমস্যায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ২৪.এ পক্ষকালে ধান-চালের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। মোটা চালের সর্বশেষ মূল্য ছিল চাঁদপুরে প্রতি মণ ৬০.০০ টাকা এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪৪.০০ থেকে ৫৫.০০ টাকা। ২৫.ঢাকার বাজারে সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি সের ৫.৫০ টাকা থেকে ৭.৫০ টাকা যা গত পক্ষকালে ছিল ৫.২৫ টাকা থেকে ৬.০০ টাকা এবং সয়াবিন তেল গত পক্ষকালের ৪.৫০ টাকা থেকে ৫.১২ টাকার স্থলে ৫.০০ টাকা থেকে ৬.৫০ টাকা। রেল যোগাযোগের সংকটে ঢাকার বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি ছিল।

একই কারণে কিছু এলাকায় লবণের সরবরাহও ছিল অপ্রতুল। চায়ের দামও বেড়েছে দ্রুত। ৮-বিবিধ ২৬.অসমর্থিত এক খবরে জানা গেছে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিপুলসংখ্যক লোকজন আগরতলা ও সোনামুড়ায় (ভারত) আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের অনেকেই শিখ সেনাদের তত্ত্বাবধানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ২৭.২৯-৪-৭১ তারিখ মধ্যরাতে কতিপয় দুষ্কৃতকারি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার চান্দিনা সেতুর ক্ষতি করে এবং এর ফলে ঢাকাগামী ই.পি.আর.টি.সি. বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। ২৮.‘স্বাধীন বাংলা প্রজাতন্ত্র সরকারের বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামযুক্ত বাংলায় লেখা একটি লিফলেট সীমিত পরিমাণে সম্প্রতি ঢাকায় গোপনে বিলি করা হয়েছে।

লিফলেটে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে, তার যেন রেডিও পাকিস্তানের প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়; এবং দাবি করা হয়েছে, ঢাকা ও মুষ্টিমেয় কয়েকটি শহর ছাড়া গোটা ‘পূর্ব বাংলা’ মুক্ত ও ‘স্বাধীন বাংলা দেশের’ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের ঢাকা ছেড়ে তথাকথিত মুক্তাঞ্চলে আশ্রয় নিতে অথবা মুক্তি ফৌজে যোগ দিতে অথবা ‘স্বাধীন বাংলা সরকারের’ অধীনে কাজ করতে বলা হয়েছে। যে কোনও সময় এই চাকরিজীবীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে লিফলেটে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ২৯.আল্লামা ইকবালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২২-৪-৭১ তারিখে ঢাকায় পাকিস্তান দরদী সংঘ প্রধান এ. টি. সাদীর বাসভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এ. টি. সাদী।

সভায় আল্লামা ইকবালের জীবন ও কর্মকা- নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং তাকে নিয়ে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠার দাবি জানান হয়। বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান শাসকদের গৃহীত ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয় সভার এক প্রস্তাবে। ৩০.পাকিস্তানের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা কামনা করে ১৬-৪-৭১ তারিখে ঢাকা নগরীর বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মৌলভী ফরিদ আহমদ জুম্মার নামাজে বায়তুল মোকাররম মসজিদে বক্তৃতা করেন। ৩১.২৮-৪-৭১ তারিখে ঢাকা নগরীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকা থেকে অগ্নিসংযোগ ও ছুরিকাঘাতের খবর পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনার সময় কর্তব্যরত বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৭জন সমাজবিরোধী নিহত এবং ৪৫জন আটক হয়। এম. এম. হক সচিব পূর্ব পাকিস্তান সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.