আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকি ডঃ আব্দুল কাদির ও ভারতের রাহুল গান্ধীর উচিত বাংলাদেশকে ৭১এর প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ স্যার আইজ্যাক নিউটনই শব্দের গতিবেগ নির্ণয় সংক্রান্ত সুত্রটি আবিস্কার করেন। তার নির্ণয়ে শব্দের গতিবেগ ২৮০মি/সেকেন্ড। কিন্তু এর ১২০ বছর পর ফরাসী গণিতবিদ ল্যাপলাস বিষয়টির ত্রুটি ধরে একে সংশোধন করেন এবং প্রমাণ করেন যে ২৮০ নয় শব্দের গতিবেগ সেকেন্ড ৩৩০ মিটার। নিউটনের সুত্র ও মূল ভিত্তি কিন্তু ঠিক আছে তার ধারণায় এ বিষয়টি আসেনি যে শব্দ যখন বায়ুতে চলে তাতে শব্দ তরঙ্গের ঘর্ষণে এর বেগ আরো বেড়ে যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে সুত্রের সিংহভাগ ভিত্তি ঠিক থাকলেও সামান্য ত্রুটির জন্য ৫০ মিটারের পার্থক্য হচ্ছে।

এই ২৮০র ভুলকে ঠিক ধরলে কখনই কোন পরীক্ষার ফলাফল সঠিক ও শুদ্ধ পাওয়া যাবে না। ১৯৪৭ হতে ১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের সাথে অহংকারী ও মনিব সুলভ আচরণ করত। আমাদেরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করত। ঠিক যেমন একটি বিবাহিত দম্পত্তির কি স্বামী কি স্ত্রী একে অপরকে সন্দেহ করলে সে সংসার টিকে না তেমনি দুই পাকিস্তানও টিকে নি। ভাষা সহ রাজনীতি, অর্থনীতি সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সীমাহীন বৈষম্য, অবহেলা, টিটকারীর মধ্য দিয়েই তারা আমাদেরকে অপদস্থ করত।

এভাবে শোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, ভাসানী এবং মুজিব কারোরই তাদের সাথে বণিবনা হয় নি। বাঙালী ব্যাবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানার মালিক, উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা হবে এটা তাদের সহ্যই হত না। তাও মুজিব ২৫শে মার্চ ১৯৭১ শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেয়েছিলেন ইয়াহিয়া ও ভুট্টো গং বাঙালীর নির্বাচনী রায় মেনে নিবে। কিন্তু তাতো হলোই না উল্টো অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে এক রাতে ঢাকাতেই ২০ হাজার নিরস্ত্র বাঙালীদের হত্যা করল। এর মাধ্যমে দুই পাকিস্তানের চির অবসান হল।

হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন সহ অমানুষিক আচরণ এদেশের মানুষকে মরণপণ যুদ্ধে বাধ্য করে অসভ্য-বর্বর পাক হানাদার সেনাবাহিনীকে পর্যদূস্থ ও পরাজিত করে। এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ জনগণের। ভারত স্রেফ অকজিলারী ফোর্স হিসেবে আমাদের সহযোগীতা করেছে। মূল ভূমিকা আমাদেরই ছিল। আমরাই ভারতের কাছে যেয়ে অস্ত্র, ট্রেনিং নেই যদিও ভারতেরও পাকিস্তান ভাঙাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।

তবে আমরা না গেলে কোনদিনও তারা পাকিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে পারত না। আমাদের দেশ এর নাড়ি নক্ষত্র কি আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাই জানত যা ১২০০ মাইল দূর হতে আগত পাঞ্জাবীদের কাছে নতুন। সে কারণেই ৯ মাস পেরে ভারতের পক্ষে যুদ্ধ শেষ করা মাত্র ১৫ দিনের ভিতর সম্ভব হয়। তবে এর মূলে পাক হানাদার বাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে যদি মুক্তিবাহিনী পুরো বাংলাদেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় তো তাদেরকে স্রেফ কচু কাটা করবে এবং এই ভয়েই তারা ভারতে হামলা করে ভারতকে ময়দানে নামাতে সুযোগ করে দেয়। পাকিদের সৌভাগ্য বলতে হবে এতদিন এ দেশের নিরীহ বহু হিন্দুদের হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করেও শেষমেশ হিন্দু ভারতীয় সৈন্যদের কাছে আত্নসমর্পণ করে তাদের জান বাচায়।

বস্তত এই কারণে হলেও ভারতের কাছে পাকিস্তানের চির কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ভারতের সাথে তাদের পুরোনো কাশ্মীর সমস্যা এবং নিজস্ব বেলুচিস্থানের সমস্যা আছে। আছে সামরিক মহড়ার প্রতিযোগীতা। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা নিয়ে যেখানে মশগুল থাকবে তা না করে তাদের পরমাণু প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠাতা ডঃ আব্দুল কাদির খান বলে বসলেন যে ৭১এ পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকলে নাকি বাংলাদেশ হত না; Click This Link এটা চরম অহংকারী এবং বেওকুফী ছাড়া কিছু নয়। একটি স্থানের জনগণকে খেপিয়ে একটি রাষ্ট্রের সরকারও টিকতে পারে না সেখানে পাকিরা হল মূলত পাঞ্জাবী।

মোদ্য কথা তারা ছিল অবাঙালী। আমাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে কানসাট, ফুলবাড়ী এবং আড়িয়াল বিলবাসীর ঐক্যবদ্ধতা কি জিনিস তা দেখেছি। কিন্তু ডঃ কাদির সহ পাকিস্তনের বেশ কিছু ব্যাক্তিবর্গ, রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের জনগণকে বিবেচনায় নিতে নারাজ। অবশ্য ভারতের রাহুল গান্ধী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইষ্টার্ণ কমান্ড কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে প্রতি ১৬ই ডিসেম্বর এমন উৎসব করে যে তারা যেন একাই ৭১এ পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল। ভারতের বাংলাদেশের জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করে যখন নিজেদের একক কৃতিত্ব নিতে চায় তখনই পাকিস্তানীরা তাদের পরাজয়ের ক্ষোভে এটাকে ভারতের ষড়যন্ত্র বলে লুফে নেয়।

১৯৭২ সাল হতেই পাকস্তিানের পাঠ্য পুস্তক ও ইতিহাসে ৭১এর ঘটনাকে ভারতের কারসাজি বলেই আজ পর্যন্ত চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঐ দিকে ভারতীয় মিডিয়াও প্রায়শই পাকিস্তানকে ৭১এর পরাজয় নিয়ে টিটকারী দেয় যে তোমাদেরকে পরাজিত করেছি। যদি ভারতীয় মিডিয়া এটা বলত যে তোমাদের ৯৩ হাজার সৈন্যকে আমরা নতুন জীবন দিয়েছি তাহলে আরো বেশী সংখ্যক পাকিস্তানীরা তাদের দেশের ঐ সময়ের শাসকগোষ্ঠীর কূ-কীর্তি জানত। ভারত ১৯৪৭ সাল এবং ১৯৭১কে যেমন নিজেদের করে দেখায় তেমনি পাকিরাও ১৯৭১এ পরাজয়ের জন্য ভারতকেই দায়ী করে। উপেক্ষিত থাকে বাংলাদেশের বাঙালীদের জীবন-মরণ যুদ্ধের গৌরব।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত পাকিস্তান ও ভারত সরকারের কাছে জোর কূটনৈতিক তৎপড়তা চালানো যে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ নিয়ে যেন ১৯৭১ সালে আমাদের গৌরব মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে এদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের অবদানকে অস্বীকার করা না হয়। তাদের পাঠ্য পুস্তক গুলোকেও প্রয়োজনীয় সংশোধন করার দাবী জানানো উচিত। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব মতামত, রীতিনীতি থাকবে তাই বলে ইতিহাসের বাস্তবতা তেকে আড়াল করে নিজস্ব স্বার্থে ইতিহাস বিকৃতি কাম্য নয়। ফলে দেশে দেশে ও জাতি জাতিতে কোনদিনও স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রায় অসম্ভই বলা চলে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.