আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘূর্ণিঝড় আর ত্রাণের রাজনীতি...শেষ পর্যন্ত দূর্গতরা কই যাইবো?

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

বর্ষীয়ান জননেতা মাওলানা ভাসানী আর তরুণ শেখ মুজিব একবার একলগে আড্ডা দিতেছিলেন...সেই সময়ে মাওলানা ভাসানী তুখোড় রাজনৈতিক গুরু হিসাবেই স্বীকৃত ছিলেন সবার কাছে...তো ভাসানী সাহেব শেখ মুজিবরে একটা গল্প শুনাইলেন...দুই বন্ধু যাইতেছিলো রাস্তা দিয়া গল্প করতে করতে, তাগো সামনে ছিলো একটা ম্যানহোল, গল্প করনের ফাকে একবন্ধু সেই ম্যান হোলে পরতে গেলো, এই পর্যায়ে গল্প থামাইয়া মাওলানা ভাসানী জিগাইলেন শেখ মুজিবরে,"তুমি যদি তোমার বন্ধুরে এইরকম পইরা যাইতে দেখতা, তাইলে কি করতা মিয়া?" শেখ মুজিব জবাব দিলেন লগে লগে, "ক্যান পইরা যাওনের আগেই ধরতাম!" মাওলানা ভাসানী স্মিত হাইসা কইলেন,"উ-হু, বন্ধুরে আগে পরতে দিবা, তারপর তারে উঠাইবা...নাইলে সে মনেই রাখবো না যে তারে একটা বড় বিপদ থেইকা বাচাইছো!" এই রাজনৈতিক শিক্ষা শেখ মুজিবরের পাথেয় হইছিলো...সেইটা আমরা টের পাই মুক্তিযুদ্ধের পরে মাওলানা ভাসানীর সাথে শেখ মুজিবরের আচরনে। এই শিক্ষা কেবল শেখ মুজিবর রহমান'ই নয় এই দেশের সকল পারস্পরিক সম্পর্কভিত্তিক আচরনেই যথাযথ কৌশলের সাথে অনুসৃত হয়...কেউ আর এখন মানুষেরে বিপদ ঘটনের আগে সতর্ক করে না...বরং বিপদগ্রস্থ মানুষরে উদ্ধার কইরা দায়গ্রস্থ রাখনের কথা ভাবে। এই দায়গ্রস্থ করনের খেলাটা আসে একধরণের অনিশ্চয়তার বোধ থেইকা...ভবিষ্যতের সকল অনিশ্চয়তারে যাতে ভুইলা থাকা যায় কৃতজ্ঞতার আবরনে...আমরা সকলে চাই বিনিময় ধরণের সম্পর্ক...দেবে আর নেবে, মিলাবে মিলিবে টাইপ। রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই যেই ধারা বিশেষ রূপে ঘটতো একসময়...তার পরিধী আজ বিস্তৃত আরো অনেক সামাজিক সম্পর্কে। ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের এক বক্তব্যে'র ধারাবাহিকতায় আমার এতোকিছু মনে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড় দূর্গত মানুষগো পাশে রাজনৈতিক নেতাগো অনুপস্থিতি দেইখা তিনি হতাশ হইয়া এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন...আমরা হাততালি দেওনের পরিসর খুঁজি। মঈনুল নিজেও যে এই পাকেচক্রে আছেন সেইটা তিনি আগেরমতোই মনে রাখনের প্রয়োজন বোধ করেন না...বরং দূর্গত এলাকায় হেলিকপ্টার পাঠানের সিদ্ধান্ত হইছে সেই কথা শুনলাম মঈন উ'র বক্তৃতায়...স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আকারের আর গতির ঘূর্ণিঝড় সিডর নিয়া এতো প্রস্তুতি, এতো আয়োজনের মধ্যে আক্রান্ত হওনের ১০ দিন গত হওনের পর ২৫ তারিখ আইসা শুনতে হয় ছদ্মবেশী সেনাশাসক কহেন তারা দূর্গত এলাকায় হেলিকপ্টারে কইরা খাদ্য পৌছানের সিদ্ধান্ত নিছেন...ততোদিনে আম্রিকা সৈন্য আর হেলিকপ্টারবাহী দুইটা জাহাজ পাঠাইয়া দিছে...তারা আমাগো সমুদ্র-সীমান্ত এলাকারে সাহায্য করতে চায়! কোনরম দায়গ্রস্থ করন ব্যতিরেকেই(!?)। এতো যে কথা, এতো যে উপলব্ধি...সব আসলে নিয়মমাফিকই ঘটে...রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রে কয় পুঁজির একটা নিজস্ব চরিত্র আছে...সে নতুন পুঁজির সম্ভাবনা তৈরী করে...যেইখানে এই সম্ভাবনা নাই বইলা বুঝন যায়, সেইখানে পুঁজি আর অংশগ্রহণ করেনা অথবা তার হেলাফেলা থাকে। আর তাই এই জলপাইগো ছদ্ম শাসনের খেলায় যখন একটা সুযোগ পাইলো পূর্বতন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলি, তখন তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করনে উদ্যোগী তারা...সেনাশাসকগো স্ট্র্যাটেজি তাই প্রায় ধরা খাওনের পথে! আওয়ামিরা যাইতেছে নাকি খুব শিগগিরী! এখনই তাগো ভান্ডারে ৩০ লাখ টাকার উপরে সংগ্রহ আছে...যখন কথা উঠলো রাজনৈতিক দলগুলির অনুপস্থিতি টের পাওন যায় এইবার, তখনই তারা গা ঝাড়া দিয়া উঠলো...এইক্ষণে যাওন যায় সাধারন মানুষের দূর্গত ভূমে! পুঁজির চরিত্রটাই এইরম...সে সবকিছুতে নিজের এক্সপানশনের স্বপ্ন দেখে...সেই সম্ভাবনা না থাকলেই তার উদ্যোগহীনতা থাকে। অথবা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরীতে নামে সে।

এই কর্মপদ্ধতি বা পরিকল্পণা অনেকেরই অনেক স্বপ্ন তৈরী করে, উন্নয়ন ঘটায়...কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ছায়াবাজগো মল্লযুদ্ধের কারনে সেইসব দূর্গত মানুষেরা পরে চিপায়…এইসব দায়গ্রস্থ মানুষেরা যে কখনোই স্বপ্ন দেখনের অধিকার রাখে না!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.