"অবশ্যই আমার নামাজ আমার এবাদাত আমার জীবন আমার মৃত্যু সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহর জন্যে। "
- হারুন ইয়াহিয়া
আল্লাহ আমাদের পরিজ্ঞাত করছেন তিনি প্রত্যেক ঘটনাই সংঘটিত করেন সেই ঘটনায় অন্তর্নিহিত কল্যাণসহ। এটি হচ্ছে আরেকটি গোপন রহস্য যা আল্লাহতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন মানুষের জন্য সহজ করে দেয়। আল্লাহ বলেন, এমনকি যেসব ঘটনা প্রতিকূল বলে প্রতীয়মান হয় তাদের মধ্যেও প্রচুর কল্যাণ নিহিত থাকেঃ
"... এমনও তো হতে পারে, যা কিছু তোমরা পছন্দ করো না তার মধ্যেই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রেখে দিয়েছেন। " (সূরা আন নেসাঃ আয়াত ১৯)
"... (তোমাদের জেনে রাখা উচিত), এমন কোনো জিনিস তো থাকতে পারে যা তোমাদের ভালো লাগে না, অথচ তাই তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, আবার (একইভাবে) এমন কোনো জিনিস, যা তোমাদের খুবই ভালো লাগবে, কিন্তু (পরিণামে) তা হবে তোমাদের জন্যে (খুবই) ক্ষতিকর; আল্লাহ তায়ালাই সবচাইতে ভালো জানেন, তোমরা কিছুই জানো না।
" (সূরা আল বাকারাঃ আয়াত ২১৬)
এই রহস্য সম্পর্কে অবহিত বলে ঈমানদাররা প্রত্যেক ঘটনার মধ্যেই শুভ ও শোভার সন্ধান করেন। কোন আপাত বিরূপ ঘটনা, সঙ্কট বা বিপর্যয়ে তাঁরা পীড়িত বা বিহ্বল হন না। দুর্যোগটি তুচ্ছ হোক কিংবা মারাত্মক, যা-ই হোক না কেন, তাঁরা অবিচলিত থাকেন। সাচ্চা মুসলমানেরা এমনকি তাঁদের কষ্টার্জিত সমুদয় বিত্তবৈভব হারিয়ে সেই চরম রিক্ততার মধ্যেও কল্যাণ ও আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পান। তাঁরা আল্লাহর কাছে জীবন উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তাঁরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ হয়তো তাঁদেরকে কোন দুষ্কার্য সম্পাদন অথবা সম্পদের অতিরিক্ত মোহবন্ধন থেকে রক্ষা করেছেন। তাঁরা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান কেননা এ জগতের কোন ক্ষতিই পরকালের ক্ষতির সমতুল্য নয়। পরকালের ক্ষতি মানে অনন্ত ও অসহ্য শাস্তি। যারা পরকাল তথা অনন্ত জীবনের কথা স্মরণে রাখেন তাঁরা প্রতিটি ঘটনাকেই বিবেচনা করেন সুন্দর ও কল্যাণের আকর হিসেবে, যা পরকালের পাথেয়। এসব বিপর্যয়ে অটল থেকে তাঁরা আল্লাহর সম্মুখে নিজেদের অসহায়তা উপলব্ধি করেন এবং তাঁরা যে কতটা আল্লাহর মুখাপেক্ষী তা-ও উপলব্ধি করেন।
তাঁরা আল্লাহর কাছে আরো নমিত হৃদয়ে প্রার্থনা করবেন এবং সে প্রার্থনা তাঁদেরকে আল্লাহর আরো নৈকট্যে নিয়ে আসবে। এতে নিশ্চিতই পরকালের বিরাট মোক্ষলাভ ঘটবে। এসব ছাড়াও, আল্লাহতে পূর্ণ ঈমান রেখে ও একাগ্রতা প্রদর্শন করে তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবেন এবং আল্লাহর অফুরান রহমতে অভিষিক্ত হবেন।
শুধু সঙ্কটে বা বিপর্যয়ের মধ্যেই নয়, দৈনন্দিন কর্মকান্ডের মধ্যেও কল্যাণ ও সৌন্দর্যের সন্ধান করা উচিত। যেমন ধরুন, কোন ব্যক্তি অনেক শ্রম দিয়ে সুখাদ্য প্রস্তুত করার পর দুর্ভাগ্যক্রমে তা পুড়িয়ে ফেলে এমন কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন যার ফলে ভবিষ্যতে আরো বড় ও মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আল্লাহর ইচ্ছায় তিরোহিত হল।
একজন যুবক এমন একটি ভর্তি পরীক্ষায় ব্যর্থ হলো যার ওপর নির্ভর করছিল তার ভবিষ্যতের অনেক আশা। হতাশ না হয়ে তার বরং ভাবা উচিত এই ব্যর্থতার মধ্যেও কল্যাণ নিহিত রয়েছে, হয়তো ভবিষ্যতের কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি বা বৈরী ব্যক্তির কোপানল থেকে তাকে রক্ষা করার জন্যে আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর হয়েছে তার ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে, তাই ভেবে তার সন্তুষ্টই হওয়া উচিত। আল্লাহ প্রতিটি ঘটনার মধ্য দিয়েই দৃশ্য ও কল্পনাতীত অনেক নিয়ামত বর্ষণ করেন এই কথা ভেবেই ঈমানদাররা আল্লাহর পথনির্দেশের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্থনের চমত্কারিত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।
কোন ঈমানদার ব্যক্তিও হয়তো সব সময় সব ঘটনার পেছনে কল্যাণ ও স্বর্গীয় অভীষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি নিশ্চিত জানেন সকল ঘটনার মধ্যেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন সকল ঘটনার পেছনে যে কল্যাণ রয়েছে তা তাকে দেখিয়ে দিতে।
আল্লাহর সৃষ্ট জগতে সকল সৃষ্টির পেছনেই যে একটি উদ্দেশ্য আছে এ বিষয়ে যারা অবহিত তাঁরা কখনো বলেন না, "আগে জানলে কি আর একাজ করি আমি !" কিংবা "আগে জানলে ও কথা মুখেও আনতাম না। " ইত্যাদি। ভুল-ত্রুটি ও আপাত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, সবকিছুর মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে অন্তর্গত উপাদানরূপে, আর এগুলো সবই হচ্ছে ভাগ্যের পরীক্ষা। প্রত্যেকের জন্য স্বতন্ত্রভাবে প্রণীত ভাগ্যলিপির মাধ্যমে মানুষকে জরুরী শিক্ষা ও তাকিদ দেন আল্লাহ।
যারা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে মূল্যায়নে সক্ষম তাঁরা প্রতীয়মান ভুল বা বিপর্যয়কে দেখেন শিক্ষা, হুঁশিয়ারী ও আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রজ্ঞার প্রকাশরূপে। দৃষ্টান্তস্বরূপ একজন মুসলিম তাঁর বিপণিভবন অগ্নিদগ্ধ হলে আত্মানুসন্ধানে নিয়োজিত হবেন। তাঁর বিশ্বাসে আরও আন্তরিক ও দৃঢ় হবেন এবং এই বিপর্যয়কে জাগতিক সুখ ও বিত্ত-বৈভবের মোহবন্ধনের বিরুদ্ধে আল্লাহর প্রদত্ত একটি হুঁশিয়ারীরূপে গ্রহণ করবেন।
ইহজীবনে যত বিপর্যয়ই আসুক না কেন একদিন তার অবসান হবেই। কোন ব্যক্তি কোন অতীত ভোগান্তির কথা ভাবতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখবেন যে ভোগান্তিটি এখন তার মনে একটি স্মৃতিমাত্র, তার বেশি কিছু নয়।
মানুষ কোন ছায়াছবির দৃশ্যাবলীও এভাবেই স্মরণ করে। কাজেই যে কোন বিপর্যয় সম্পর্কেই বলা যায়, এমন একদিন আসবে যখন এই বেদনাতুর অভিজ্ঞতা স্মৃতিমাত্রে পর্যবসিত হবে একটি ছায়াছবির দৃশ্যের মতোই। কেবল একটি বিষয়ই থেকে যাবেঃ বিপদকালে আক্রান্ত ব্যক্তি কি মনোভাব গ্রহণ করেছিল এবং আল্লাহ তাতে তুষ্ট হয়েছিলেন কিনা। মানুষকে তার অভিজ্ঞতার জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে না, কিন্তু তার অভিজ্ঞতাকালীন মনোভাব, চিন্তা ও আন্তরিকতা সম্পর্কে কৈফিয়ত দিতে হবে।
সুতরাং আল্লাহ সৃষ্ট সকল পরিস্থিতির মধ্যে কল্যাণ ও ঐশী আশীর্বাদ দর্শনের প্রয়াস একটি ইতিবাচক মনোভাব বা ঈমানদারদের জন্য ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর অপার আশীর্বাদ বয়ে আনবে।
এই রহস্যটি যাদের অবগত তাঁরা কোন আসন্ন দুঃখ বা ভয়ের শঙ্কায় শঙ্কিত হন না, কোন ব্যক্তি বা ঘটনা তাঁদের জন্য ইহকাল ও পরকালে কোন ভয়, ক্ষতি বা দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহ কুরআনে এই রহসটি উম্মোচন করেছেন এভাবেঃ
"আমি (তাদের) বললাম, তোমরা সবাই (এবার) এখান থেকে নেমে যাও, তবে (যেখানে যাবে অবশ্যই সেখানে) আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে (জীবন বিধান সম্পর্কিত) হেদায়াত আসবে, অতঃপর যে আমার (সেই) বিধান মেনে চলবে তার কোনো ভয় নেই, তাদের কোনো প্রকার উত্কণ্ঠিতও হতে হবে না। " (সূরা আল বাকারা, আয়াত ৩৮)
"জেনে রেখো, (কেয়ামতের দিন) আল্লাহ তায়ালার বন্ধুদের জন্যে (কোনো) ভয় নেই, (সেদিন) তারা চিন্তিতও হবে না। এরা হচ্ছে সে সব লোক, যারা (আল্লাহর ওপর) ঈমান এনেছে এবং (তাঁকে) ভয় করেছে। এ (ধরনের) লোকদের জন্যে দুনিয়ার জীবনে (যেমন) সুসংবাদ রয়েছে, (তেমনি) পরকালের জীবনেও (রয়েছে সুসংবাদ); আল্লাহ তায়ালার বাণীর কোনো রদবদল হয় না; আর (সত্যিকার অর্থে) এটা হচ্ছে মহাসাফল্য।
" (সূরা ইউসুস, আয়াত ৬২-৬৪)
*** অনুবাদ করেছেনঃ আবুল বাশার ***
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।