আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন কথা - ভাষা সৈনিক শহীদ শফিউর রহমান

সংবিধান-ই নাগরিকের শক্তি

১৯১৮ সালের ২৪শে জানুয়ারী শফিউর রহমান পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্গত কোন্নগরে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা গভর্ণমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে তিনি আই.কম. পাশ করেন। অতঃপর চব্বিশ পরগণার সিভিল সাপ্লাই অফিসে কেরানির চাকুরি গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ অথবা ১৯৪৫ সালের ২৮ মে কলকাতার তমিজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়ে আকিলা খাতুনের সঙ্গে শফিউর রহমান পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। আকিলা খাতুনের বয়স তখন ১২ বছর।

পিতা মাহবুবুর রহমান দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকা আসেন। তিনি ঢাকাতে পাকিস্তান পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসে সুপারিনটেনডেন্ট পদে চাকুরি নেন। শফিউর রহমান ও তাঁর পিতার সঙ্গে ঢাকা আসেন। ঢাকায় এসে তিনি বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন এবং ঢাকা হাইকোর্টে হিসাবরক্ষণ শাখায় চাকরি গ্রহণ করেন। শফিউর রহমানের পাঁচ ভাই ছিল।

আসজাদুর রহমান নামে তাঁর এক ভাই সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি করতেন। ২১ ফেব্রুয়ারী শফিউর রহমান সকাল দশটায় অফিসে রওনা হন। সেদিন পাজামা, শার্ট, গেঞ্জি এবং কোট পরেছিলেন। পায়ে ছিল জুতা। সাইকেলে তিনি অফিসে যাতায়াত করতেন।

সকাল সাড়ে দশটার দিকে নবাবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভরত জনতার উপর পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। ঐ দিন সন্ধা সাতটায় হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অতি কষ্টে তাঁর লাশ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। পাকিস্তান সেনাবানীর সদস্যরা মেডিক্যাল কলেজে ঢুকে অনেক লাশ নিয়ে যায় এবং গুম করে ফেলে। সাহিত্যিক হাবিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান (মিটফোর্ডের ছাত্র) এবং আরো কয়েকজন ছাত্র মিলে শফিউর রহমানের লাশ ঢাকা মেডিক্যালের স্টেরিলাইজ ডিপার্টম্যান্টে লুকিয়ে রেখেছিল। ২২ ফেব্রুয়ারী ছিল শুক্রবার। শুক্রবার, শনিবার এবং রবিবার এই তিন দিন লাশ তারা লুকিয়ে রেখেছিল।

ঢাকা হাইকোর্ট গ্রন্থাগারের গ্রন্থাকারিক কামালউদ্দিন ঢাকার তত্কালীন এস.ডি.ও.-র নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ থেকে লাশ বের করে আনেন। এস.ডি.ও প্রথমে অনুমতি দিতে চাননি। কারণ লাশ দেওয়া হলে ছাত্ররা লাশ নিয়ে মিছিল করবে। ২৪ ফেব্রুয়ারী রাত বারোটায় আজিমপুর গোরস্থানে শফিউর রহমানের লাশ দাফন করা হয়। তাঁর গেঞ্জি ও পাজামা রক্তে এত ভিজে গিয়েছিল যে সেগুলি আজিমপুর কবরস্থানে মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছিল।

তার স্ত্রীর জমানো একশত টাকা দিয়ে কবরের জায়গা কেনা হয়েছিল। শফিউর রহমানের রক্তমাখা শার্ট, কোট, জুতা সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এগুলো বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। শফিউর রহমানের এক মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়ে শাহনাজের বয়স তখন মাত্র তিন বছর।

মেয়েকে তিনি অত্যন- স্নেহ করতেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় তিনি মেয়ের কথা স্মরণ করেন। আহত অবস্থায় তাঁর ডাক্তার ভাইকে তিনি বলেন, 'আমার মেয়েকে দেখো। আমি বুঝতে পারছি আমি তার কাছে আর ফিরে যেতে পারব না'। ছেলে শফিকুর রহমান তখন মায়ের পেটে।

১৯৫২ সালের মে মাসে সে জন্ম গ্রহণ করে। বর্তমানে মেয়ে বিবাহিতা। তার স্বামী আবু তাহের। ছেলে শফিকুর রহমান ব্যবসা করেন। ৫২-র গৌরদীপ্ত ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ শফিউর রহমানকে বাংলাদেশ সরকার মরণোত্তর একুশে পদক (২০০০) প্রদান করেন।

শহীদ শফিউর রহমানকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তথ্য সূত্র : বিশ্ব তোরনে বাংলা ভাষ্কর রাসা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.