নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .
'ঘুষ' বিদ্যা - এমনই এক বিদ্যা, যে বিদ্যা শেখার জন্য কোন বিদ্যালয়ে যেতে হয়না, প্রয়োজন হয়না কোন বিদ্যালয় শিক্ষক,গৃহ শিক্ষক। কোথাও কোন এ্যাডমিশনও দিতে হয় কিনা তাও শুনিনি, এডমিশনের জন্য কোন কোচিং সেন্টারে গাদি গাদি টাকাও ঢালতে হয়না। এ এমনই এক বিদ্যা যা সর্বজনীন, সময় এই বিদ্যার শিক্ষক, পরিবেশ এর নিয়ামক
তাহলে এবার চিন্তা করুন, আমরা বিদ্যা শেখার জন্য কতই কিছু না করছি, সেই অ, আ, বয়স থেকে শুরু করে বড় হবার সাথে সাথে বস্তা ওজন ব্যাগ কাধে নিয়ে স্কুলে গমন, গৃহ শিক্ষকের , মা-এর বকুনি, পিটুনি, ক্লাসে কান ধরে দাড়িয়ে থাকা, পাস করার আপ্রাণ চেষ্টায় মাঝে মাঝে ফেল্টুস হওয়া, বাবা'র অমূল্য ধন বিদ্যালয়ে ঢালা, পাবলিক পরীক্ষা, রেজাল্ট দু:শ্চিন্তা, ভর্তি পরীক্ষায় ডোনেশন, এর বৃত্তান্ত বলে শেষ করা যাবেনা।
যে প্রসঙ্গে এই পোষ্টের অবতারণা, আমার 'ঘুষ' বিদ্যা আহরণ বৃত্তান্ত। বলা যায় এটিই আমার জীবনের প্রথম "ঘুষদাতা" হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ।
অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রাকটিক্যাল লাইফে প্রথম 'ঘুষ' দেয়া।
বয়স তখন আর কত হবে ! ক্লাস ৫ কি ৬-এ পড়ি। শারিরীক গঠনগত দিক থেকে আমার চুলগুলো একেবারে খাড়া খাড়া। সারাদিন-রাত টুপি পরে থেকেও নরম করা যেতনা, একপ্রকার ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়েই চুল সোজা করার সে আশা বাদ দিয়েছিলাম। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন লম্বা চুলের বিপক্ষে।
আর ওই বয়সে একটু সাধও ছিল চুলগুলো বড় রাখার। এই জায়গাতেই বাবা-মা'এর সাথে মতের অমিল ঘটত। তাই যখন চুল কাটাতে হত বাবা নিজে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে কাটাতেন। নরসুন্দর বাবাজী’ দের ফাকি মারার কোন চান্সই দিতেন না। রেজাল্ট আমার চুলের বারটা এবং বাটি ছাট স্টাইল।
মেজাজ পুরা খারাপ হত যখন স্কুলে গেলে ছেলে-পুলেরা ক্ষেপাত। এভাবে আর কতদিন, অবশেষে বুদ্ধি বের হল নরসুন্দর বেটাকে সাইজ করতে হবে যেভাবেই হোক, কিন্তু কিভাবে ? সেটাই রহস্য।
যেদিনের ঘটনা, চুল কাটাতে গিয়েছি, চলে কাটা শুরু হয়েছে তখনই আস্তে করে জানিয়ে দেই কথা আছে। নরসুন্দর চুলে আস্তে আস্তে কেচি চালাচ্ছে। বাবা পান খাবার জন্য উঠে গেলেন পাশের দোকানে।
এই ছিল মোক্ষম সময় সাথে সাথে টিফিনের জমানো ৫ টাকা পকেট থেকে বের করে নরসুন্দর বেটাকে দিয়ে চুল বেশী না কাটার জন্য বলে দিলাম।
চুল কাটা প্রায় শেষ, বাবা চুলের অবস্থা দেখে তো রেগে গেলেন, এত বড় কেন? ছোট কর? ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই চলেছেন, এসময় ওই বেটা আব্বাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মিথ্যেে বলে দিল "খাড়া চুল বেশী কাটলে পরে নাকি আর সোজা হবেনা" বাবা সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন কিনা জানিনা নাকি নি:শর্তে মেনে নিলেন তাও আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি। পরেরবার থেকে আর কখনো বাবা চুল কাটাতে নিয়ে যেতেন না।
ব্যাস, জীবনের প্রথম 'ঘুষ' দিয়ে হাতেনাতে সফলতাও পেলাম। পরথেকে চুল ছোট করতে হতনা, নিজের ইচ্ছে মত রাখতে পারতাম তবে মার্জিত।
কিন্তু তখন বুঝতামনা নরসুন্দরকে ওই ৫টাকা দেয়াই ছিল উতকোচ, যা অপরাধ, দেয়া বা নেয়ায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।