যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
আমার এক বন্ধু - যদিও গোপালগঞ্জের লোক, কিন্তু আওয়ামীলীগ বিরোধী। তো - একদিন বাইরে যাবার জন্যে তৈরী হয়ে ওর বাসায় গিয়ে দেখলাম খুবই মনোযোগ দিয়ে বিটিভির একটা অনুষ্ঠান দেখছে। বিরক্ত হয়ে ওকে তাড়া লাগালে ও বললো - তোরা তো মানুষ চিনিস না, এই দেখ, যে ভদ্রলোক কথা বলছে, উনি একজন বিরাট অর্থনীতিবিদ এবং সতলোক।
খোঁচাটা দেবার কারন - আমি ছিল রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় আর বন্ধু রাজনীতি বিমুখ। যাই হোক - বন্ধুর বিশাল ইন্ট্রোডাকশান শুনে বসলাম।
দেখলাম টিভিতে চলছে - ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনা। আর বক্তার নাম - শাহ মোহাম্মদ হান্নান - বাংলাদেশ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা।
কিছুক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনার পর হঠাত মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল - "এই, এটাতো একটা রাজাকার। "
বন্ধু তীব্র প্রতিবাদ জানালো।
আমিও তেমন কোন প্রমান দিতে ব্যর্থ।
কিন্তু হেরে যাবো, বিশেষ করে নিজের বিশ্বাসের কাছে, সেটা হবে না।
তাই বললাম - ঠিকাছে, বাজী ধরো। এইটা একটা স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার মানুষ - সংক্ষেপে যাদের বলা হয় রাজাকার। যদি হারি ১০০ টাকা দেব। সেই সমঙে আমার জন্যে ১০০ টাকা ছিল বিরাট অংকের অর্থ।
বন্ধু বললো - ঠিকাছে।
*********
ইতোমধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেল। বন্ধু আমার সরকারী চাকুরে - মরহুম স্কুল মাস্টার শশুড়ের অর্থে ঢাকায় ৬০ লক্ষ টাকার ফ্লাট কিনে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। আর আমি ভাগ্যন্বেষনে ইবনে বতুতা হয়ে এখন কানাডায় শিকড় পোতার চেষ্টা করছি।
কিন্তু যখনই শাহ হান্নানের নামটা কোথাও দেখি - তখনই বাজীর কথা মনে পড়ে যায়।
দেখলাম - উনি সরকারের উর্ধতন পদ থেকে অবসরে গেলেন - বিগত লতিফুর রহমান সরকারের সময় চাকুরী বাড়িয়ে জামাতের নির্বাচনে সহায়তা করলেন। কিন্তু - এগুলো তো আর কোন প্রমান হতে পারে না যে উনি একজন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষে লোক। তাই ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর যখন বন্ধুর সাথে দেখা হলো - বললাম রাজাকার না হলে এই পদে যেতে পারতো না - সুতরাং আমি জিতেছি। কিন্তু বন্ধু মানতে নারাজ। ইন্টারনেটে ডাহুক নামের জামাতিদের একটা ইয়াহু গ্রুপ আছে - তার সাথেও জড়িত শাহ হান্নান।
মাঝে মধ্যে সেগুলো পড়ি - কিন্তু অত্যান্ত চতুরতার সাথে উনি বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার কথা বললেও - সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন কথা বলেন না। সুতরাং আমার পক্ষে একটা সলিড প্রমান বের করা কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আমার বিশ্বাস থেকে একটুও নড়ে যাবার মতো কোন প্রমানও পাইনি। একটা শব্দও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোথাও লেখেনি এই লোক।
অবশেষে এলো সেই দিন।
টিভির টকশোতে নিজের মুখোশ নিজেই খুলে আমাদেরকে দেখালো তার স্বাধীনতা বিরোধী বিভতস মুখ।
বললো - ১৯৭১ এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি - হয়েছে গৃহ যুদ্ধ।
এবার আমি বাজীতে জিতলাম। বন্ধুকে ফোন করে বললে ও একবাক্যে পরাজয় মেনে নিলো। কিন্তু টাকা চাইতেই ওর হাসি।
একশ টাকা দিয়ে কি করবি।
ওকে বলেছি - একশ টাকা যে অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধে যাদুঘরে ডোনেট করে। সেটা আমার জন্যে বিরাট পাওনা।
বাজীতে তো জিতলাম - কিন্তু মনের মধ্যে আনন্দের চেয়ে কষ্টটাই বেশী তৈরী হলো। ভাবছি - এই রকম আরো কত শাহ হান্নান ভেড়ার চামড়া গায়ে পড়ে তাদের নেকড়ে প্রকৃতিটা লুকিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সহায়তা করে যাচ্ছে।
এদের কি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না - এদের হাত থেকে কি স্বাধীন দেশে প্রশাসনের মুক্তি মিলবে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।