সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি সাগর সৈকত কুয়াকাটা। যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের নয়ন জুড়ানো বিরল মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সামুদ্রিক বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্রের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এটি আজও অবহেলিত। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় এখানকার পর্যটন শিল্পের আশানুরূপ বিকাশ লাভ করেনি।
কুয়াকাটা সৈকতের উত্তরে খাপড়াভাঙ্গা, দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর, পূর্বে গঙ্গামতি, পশ্চিমে খাজুরার বনাঞ্চল।
খাজুরার বনাঞ্চল থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২ কিলোমিটার প্রস্থ এ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। সৈকতের একই স্থানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। কুয়াকাটার অনেক কিছু সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি আমখোলাপাড়া। পঞ্চাশের দশকে কুয়াকাটাসহ দক্ষিনাঞ্চলে রাখাইন জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ হাজার। পাড়ার সংখ্যা ছিল ৪২০টি।
এদের ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি ভিন্ন। এদের জীবিকা কৃষি ও তাঁত বোনা। এ অঞ্চলের রাখাইনরা এখন য়িষ্ণু উপজাতি। কমতে কমতে বর্তমানে এদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে নেমে গেছে বলে রাখাইন সরজমিন ঘুরে জানা যায়।
কুয়াকাটা বেড়িবাঁধ ও কেরানীপাড়ার মাঝ বরাবর উঁচু টিলার উপরে অবস্থিত আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মন্দির।
এ মন্দিরে আছে সাড়ে সাঁইত্রিশ মণ ওজনের রৌপ্য, ব্রোঞ্জসহ অষ্টধাতু নির্মিত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি। মন্দিরটিরও কাঠ ও টিনের তৈরি নির্মাণ সৌন্দর্যø ইন্দো-চীনের আদলে। বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠার আড়াই হাজার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রায় সাত যুগ আগে এখানে এই মূর্তিটি স্থাপন করেন উপেংইয়া ভি।
মিশ্রিপাড়ায় গিয়ে দেখা যাবে সম্ভবত এ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। এর উচ্চতা ৭০ ফুট।
যতদূর জানা গেছে, ১৯০৬ সালে উমারেন্দা মহাথেরো নামে এক বৌদ্ধ ভি এ মন্দিরে মূর্তিটি স্থাপন করেন। সাগর সৈকত প্রধান সড়কের দু’পাশে রয়েছে নারকেল বাগান ও নবসৃজিত তালবাগান। অর্ধ শতাব্দীকাল আগে ফয়েজ মিয়া তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে জঙ্গলাকীর্ণ ভূমি নিয়ে সৃজন করেছিলেন বলে লোকজন বলে ফয়েজ মিয়ার নারকেল বাগান। এছাড়াও ফলফলাদিসহ বিভিন্ন গাছ রয়েছ সেখানে। অভ্যন্তরে রয়েছে সুন্দর পিকনিক স্পট।
কুয়াকাটা সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতি ও পশ্চিমে খাজুরার দৃষ্টিনন্দন সংরতি বনাঞ্চল পর্যটকদের নজর কাড়ে।
ট্রলারে সাগর পাড়ি দিয়ে শাখা নদীতে ঢুকে। একটি ছোট নদী ও সাগর মোহনার ওপারে ফাতরার চর সংরতি ও কৃত্রিম বনায়ন অঞ্চল। এ বনাঞ্চল কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, কাকড়া, গড়ান, তেহাল ও গোলপাতাসহ বহু প্রজাতির বৃরাজি সমৃদ্ধ। এছাড়া বন্যপ্রাণী, শূকর, বানর, শিয়াল, দাসবাঘ ইত্যাদি রয়েছে।
এখানে অতিথি পাখি আসে অসংখ্য কোরালি হাঁস, বালিহাঁস, বনবক, পানকৌড়ি, জলকবুতর, গাংচিল, চখা, কাইমা, প্রাইম, বালুহর, হড়িয়াল প্রভৃতি।
এদের আগমন ঘটে সুদূর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, ফিলিপাইন, চীন মালদ্বীপ এবং ভারতের আসাম থেকে। স্নিগ্ধ সবুজ বনাঞ্চল ও সাগরের নীল জলরাশির পাশাপাশি রঙ-বেরঙের এসব পাখির সমাগম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সৃষ্টি করে এক অতুলনীয় মুগ্ধ-মনোহর পরিবেশ। বর্তমানে কুয়াকাটাকে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘কুয়াকাটা ইকোপার্ক। ’ যার প্রাথমিক কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।
ইকোপার্কটি নির্মাণ শেষ হলে এখানে পর্যটকদের আগমন আরও বৃদ্ধি পাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।