আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন শান্তিচুক্তি করি!

!!!

একজন ভালো গিন্নির সংজ্ঞা কি? সচেতন সব পুরুষই বলবেন, যে বউ ভালো রান্না করতে পারে আর রাতে ঘুমাবার আগে মশারি টানায়! আমিও একমত। এই যুগে সুন্দরী রমণী পাওয়াটা সহজ হলেও মশারি টানানোর মতো রমণী পাওয়া বড়ই দুষ্কর! তাই এখনকার বেশির ভাগ বিবাহিত পুরুষই একটি কাজে অভিজ্ঞ তা হলো মশারি টানানো। কেন তারা অভিজ্ঞ তার পেছনেও একটি স্পেশাল যুক্তি আছে তা হলো- মশারি ছাড়া শুইলে মশা কানের কাছে যতটা প্যান প্যান করে, তার চেয়ে বেশি প্যান প্যান করে স্বয়ং বউ। তাই মশার প্যান প্যান থেকে না হলেও বউয়ের প্যান প্যানানি থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশেই মুলত ছেলেরা মশারি টানায়। তবে ব্যাচেলরদের কাছে মশার কামড়ের চেয়ে মশার প্যানপ্যানানিটাই বেশি বিরক্তিকর।

আসলেই তো মশা কামড় দেওয়ার আগে কানের কাছে এসে যে পুঁ শব্দটি করে সেটিই সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর। লক্ষ করলে দেখবেন মশা পায়ে কামড় মারলেও অন্তত তার আগে কানের উপর দিয়ে একবার পুঁ... শব্দ করে যায়। মশার এই কানপ্রিয়তার কারণ কি? আসলে মশা যে পুঁ শব্দটি করে আসলে ওটা কোন শব্দ না, ওটা একটি ডায়লগ। কী সেই ডায়লগ? যতরঙ্গের রিচার্স টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা এই ডায়লগটি হচ্ছে-‘ভাইজান ঘুমাইছেন নি?”। এ ডায়লগটি মারার পর যদি কেউ নড়ে উঠেন তবে মশা একটু দূরে অবস্থান নেয় আর যদি না নড়েন তবে বুঝতেই তো পারছেন...!! মশা কাদেরকে কামড়ায়? এ ব্যাপারে সবাই একমত হবেন যে সুন্দরী মেয়েদেরকে মশা বেশি কামড়ায়।

সুন্দরী মেয়েদের প্রতি ছেলেদের যেমন দূর্বলতা আছে মশাদেরও তেমনি আছে। মেডিকেল সায়েন্সের মতে যে সব মশা কামড়ায় তারা নাকি মেয়ে মশা। আমার কাছে মশার লিঙ্গ নির্ণয়ের কোন যন্ত্রপাতি না থাকায় তা প্রমাণ করে দেখার সুযোগ হয়নি তবে মেডিকেল সায়েন্সকে ভুয়া ভেবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যেসব মশা মেয়েদেরকে কামড়ায় তারা ছেলে মশা আর যে সব মশা ছেলেদেরকে কামড়ায় তারা মেয়ে মশা। বিপরীত লিঙ্গ পরস্পরকে আকর্ষণ করবে এটাই স্বাভাবিক! একটি বাস্তব উদাহরণ দেই। আমার এক বন্ধুকে কিছুতেই মশায় কামড়াতো না।

একই সাথে তারা দুই বন্ধু থাকতো। অন্য বন্ধুটিকে মশায় কামড়াতো বলে বাধ্য হয়ে মশারি টানানো থেকে শুরু করে কয়েল কেনা পর্যন্ত যাবতীয় কাজই তার সেই বন্ধুকেই করতে হতো। পরবর্তীতে এক ডাক্তারের কাছে থেকে জেনেছিলাম ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অভাব থাকলে নাকি মশায় কামড়ায় না। কোন এক রোগের সূত্র ধরে এক ডাক্তার আমার ঐ বন্ধুকে একবার বিকমপ্লেক্স খাইয়েছিলেন। আসলেই ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল, আমার ঐ বন্ধুটিকে এখন মশায় কামড়ায়! যাক শরীরে ভাইমিন না থাকার উপকার দিকও আছে।

তবে কি মশা রক্ত খায় না, খায় ভিটামিন? একবার এক দোকানে মশা মারার এক অত্যাধুনিক যন্ত্র দেখলাম। কিনে আনলাম। যন্ত্রটি চালালে নাকি এমন এক বিশেষ শব্দ বের হয় যা শুধু মশায় শুনতে পারে কিন্তু মানুষ শুনতে পারে না। ড্রয়িং রুমে যন্ত্রটি চালিয়ে সবাই টিভি দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমি আকাশে ভাসছি।

আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কোন দর্শক নেই, আমি একা। ম্যাশিনটা বন্ধ করে দিলাম, দর্শকরা আবার ফিরে এল। দোকানদারকে জানাতেই উনি আমাকে বললেন আপনি মনে হয় তেলাপোকা মারার ম্যাশিন নিয়ে গেছেন! আমি আর ভয়ে তা বদল করি নাই, যদি দোকানি আবার ভুল করে হাতি মারা ম্যাশিন দিয়ে দেয়!! একদিন আমাদের বাসায় আবারও মশা মারার জন্য একটি কয়েকটি ম্যাজিক বাত্তি আনা হলো। এটি ছিল একটি লাইট যা থেকে হলুদ রঙের আলো বের হয়। এই হলুদ আলো নাকি সাধারণ কোন আলো নয়, মশাদের চোখে পড়লে মশা নাকি অন্ধ হয়ে যায়, তাই অন্ধ হওয়ার ভয়ে নাকি মশা এই আলোর ধারের কাছেই আসে না।

আমার ঘর বাদে বাসার সবার ঘরেই লাগানো হলো এই বাত্তি। বাহ! ভালোই তো আমার ঘরে বাত্তি না লাগাতেই মশার আক্রমণ কমে আসলো। মশারি ছাড়াই ঘুমানো শুরু করলাম। একটু লোভ হলো যদি এই বাত্তি লাগাই তবে হয়তো আর একটা মশাও আর কামড় দিবে না। লাগালাম সেই ম্যাজিক বাত্তি।

বিশ্বাস করেন, ঐ দিন মাঝরাতে উঠে মশারি টানাতে বাধ্য হয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম এতদিন পাশের ঘরগুলোতে ঐ বাত্তি লাগানোর ফলে আমার ঘরের মশাগুলো আসলে ঐ সব ঘরে চলে যেত তাই আমি বেচে যেতাম, কিন্তু আমি যখন এই বাত্তি জ্বালালাম তখন মশারা আবার ফিরে আসলো! মশা মারার জন্য আমাদের দেশে বেশি হারে মেডিসিন ব্যাবহার করায় গোটা পরিবেশটাই এখন দূষিত। তাই এই দূষিত পরিবেশে জন্ম নেওয়া প্রতিটি মশাই থাকে শারীরিক বিকালঙ্গ। অর্থ্যাৎ জন্ম থেকেই তারা থাকে অন্ধ, কালা এবং নাকহীন। তাই তাদেরকে হত্যা করার যত প্রকার শক্তিশালি শব্দ কিংবা ম্যাজিক বাত্তি অথবা যত এরোসলই আবিষ্কার হোক না কেন তা এখন আর মশারা বুঝতেই পারে না।

অতএব ওগুলো দিয়ে খামোখা পরিবেশ নষ্ট না করে বিবাহিত দম্পতিরা মশারি টানানোর ব্যাপারে শান্তি চুক্তি করুন আর ব্যাচেলররা হয় মশারি টানানোর অভ্যাস করুন নয় ভিটামিন খাওয়া বাদ দেন!! প্রকাশ কাল: দৈনিক ডেস্টিনি; ২৭.১০.০৭

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।