আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে বিশিষ্টজনদের সাধুবাদ

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে দেয়া ফাঁসির দণ্ডাদেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষরা। গত ২১ জানুয়ারি রায় ঘোষণার পর অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে তার পরিবার প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

বাচ্চু রাজাকারকে দেওয়া ফাঁসির রায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কাছে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির চল্লিশ বছরের প্রথম সফলতা হচ্ছে এ রায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচার না পাওয়ার যে সংস্কৃতি চালু ছিল, তা থেকে বের হওয়া শুরু হল। ’ তিনি আরো বলেন, ‘কবি সুফিয়া কামাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীসহ আরো অনেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আন্দোলনে বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৪০ বছর ধরে যুদ্ধাপরাধী তথা মানবতা বিরোধীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের ফসল হচ্ছে আজকের এই রায়।

জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ যেসব স্বাধীনতাবিরোধী ও মানবতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছিলো এই রায়ের মধ্য দিয়ে তাদের বিচারের সফল কার্যক্রম শুরু হলো। ’ রায়ের প্রতিক্রিয়া জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলের আশ্রয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার দাবি করেছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বীরবিক্রম। তিনি বলেন, ‘যারা সার্বিকভাবে অপরাধী তারা যে দলেই থাকুক না কেন, তার কঠোর বিচার হওয়া উচিত। ’ তিনি বলেন, ‘তবে একজনের বিচার করলেই হবে না। সব অপরাধীর বিচার করতে হবে।

বিরোধী দলে থাকলে বিচার হবে আর সরকারি দলে থাকলে বিচার হবে না, তা হলে এটি সঠিক বিচার হবে না। ’ এদিকে দ্রুত মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান। রায়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রায় সঠিক হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব রায় কার্যকর করতে হবে। যুদ্ধাপরাধ জাতির একটি কলঙ্ক।

এই রায়ের ফলে জাতি কলঙ্ক মোচন একধাপ এগিয়ে গেল। ’ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমরাও এ বিচার চেয়েছিলাম। কেউ অপরাধ করে ছাড়া পেয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। একাত্তরে যারা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত হরণ করেছে ও গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।

এরশাদ বলেন, ‘আমি সব সময়েই আদালতের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধাশীল। আমি এই রায়ে সন্তুষ্ট। ’ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন মহাজোট নেতারা। তারা মনে করছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে। আগামী দিন গুলোতে বাকিদেরও দ্রুততার সাথে রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

এছাড়াও মহাজোট নেতারা ঘোষিত রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা ঐতিহাসিক রায়। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা আজ পূরণ হতে চলেছে। ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা যে স্বধীনতা অর্জন করেছি, সেই বীরত্বগাথা ইতিহাস আজ কলঙ্কমুক্ত হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করি পর্যায়ক্রমে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি সত্যিকার অর্থেই কলঙ্কমুক্ত হবে।

সরকার কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করবে বলেও আশা করেন তিনি। ‘জাতির প্রকৃত মুক্তির পথে আজ যাত্রা শুরু হয়েছে’ এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবীদ রাশেদ খান মেনন বলেন, আজ আমরা সত্যিই আনন্দিত। মনে হচ্ছে জাতির মুক্তির পথে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। এখন শুধু একটাই দাবি, বাকিদেরও বিচার ত্বরান্বিত করা। আমরা আশা করি আদালত তা করবে।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে সরকার যে আন্তরিক সেটা আবারো প্রমানিত হয়েছে’ এমন বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু । তিনি বলেন, ‘এ রায় একটি যুগান্তকারী বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যারা স্বঘোষিত যুদ্ধাপরাধী ও সে সময়ে পাকিস্তানের দালালি করেছে, আজ এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয়েছে যে, অপরাধী যেই হোক তার বিচার হবেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের ত্রিশ লক্ষ শহীদের আÍা, তাদের পরিবার ও নির্যাতিত নারীরা, যাদের আহাজারিতে আমরা দু:খ ভারাক্রান্ত হতাম, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আমরা শান্তনা খুজে পাবো। আদালতে বিচারকাজ চলছে।

আমরা আশা করি বাচ্চু রাজাকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে। এছাড়াও যুদ্ধাপরাধের দায়ে প্রেফতারকৃত বাকিদেরও অতিসত্তর রায় ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৪২ বছর ধরে এ বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম’ এমন অনুভূতি ব্যক্ত করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার হোক, এটা আমরা সবসময়ই চাই। আমরা আশা করবো এ বিচার পূর্ন স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করা হবে। ’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট।

আশা করি সরকার অতিদ্রুত এই রায় কার্যকর করতে ব্যবস্থা নেবেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এম.এল) সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের এ রায়ে দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা প্রতিফলন ঘটেছে। এর মাধ্যমে দেরিতে হলেও অত্যন্ত স্বচ্ছ ও আইনি প্রক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হলো। এতে প্রমাণ হয়েছে, বাংলার মাটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণিত অপরাধীদের কোনো ক্ষমা নেই।

’ শিল্পমন্ত্রী জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী শিগগিরই অন্য যুদ্ধাপরাধীদের মামলার রায় ঘোষণা এবং তা কার্যকর করার দাবি জানান। রায় প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, জামায়াতে ইসলামী যে যুদ্ধাপরাধীদের দল। তা এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হল। জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর আজকের এই দিন বাঙালি জাতির জন্য নতুন মাইলফলক। আমরা আশা করবো বাংলাদেশ সরকার এ রায় কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের রায়ও দ্রুত ঘোষণা করবে।

প্রতিক্রিয়াহীন পরিবার তবে এই রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে বাচ্চু রাজাকারের পরিবার কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি বাচ্চু রাজাকারের স্ত্রী সালমা বেগম। তিনি বলেন, ‘রায়ের বিষয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আমি অসুস্থ। ’ রায়ের পর বেলা ১২টার দিকে বাচ্চু রাজাকারের উত্তর খানের চাঁনপাড়া এলাকায় আযাদ ভিলায় গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও গেটের ভেতর থেকেই তিনি এ মন্তব্য করেন।

রায়ের ব্যাপারে বাচ্চু রাজাকারের স্ত্রী সালমা বেগমের প্রতিক্রিয়া জানতে রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানের চানপাড়ার ‘আজাদ ভিলা’য় বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আল্লার দোহাই। আমাকে মাফ করবেন। আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে পারবো না। ’ তবে টেলিভিশনের মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের খবর জেনেছেন বলে জানান তিনি।

রায় ঘোষণার সময় আযাদ ভিলায় বাচ্চু রাজাকারের মেয়ে জান্নাত তার মায়ের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুই ছেলে ফয়সল আযাদ ও জেহাদ আযাদ বাসায় নেই বলে জানান সালমা বেগম।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।