আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘাতক বাচ্চু’র জবানবন্দি

আমি ভুল করেছিলাম। যদি হাতের আঙুলের মাংসগুলো ছাড়িয়ে নিতাম তবে কাক সেটি নিয়ে রাস্তায় ফেলতো না। আমি ধরা পড়তাম না। গতকাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছে ঘাতক সাইদুজ্জামান ওরফে বাচ্চু। প্রেমিকাকে গলা টিপে হত্যার পর লাশ ২৬ টুকরা করার ঘটনায় সে অনুতপ্ত বা ভীত না হয়ে বরং কেন সে ধরা পড়লো এ কথাই বলেছে জবানবন্দিতে।

গতকাল দুপুরে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাচ্চু। দীর্ঘ দু’ ঘণ্টা ধরে হাকিমের খাসকামরায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাচ্চুর মুখে হত্যা ও লাশ টুকরা টুকরা করার নৃশংসতার বর্ণনা শুনে স্তব্ধ হয়ে যান হাকিম। ওদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুমির লাশের ডিএনএ টেস্ট করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে- যাতে তদন্তে কোন দুর্বলতা না থাকে। দীর্ঘ ৪ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে বাচ্চু দাবি করেছে, রুমি নিজেই তার অফিসে আসার কথা বলেছিল।

তার ফোন পেয়ে সে তাকে মিরপুর থেকে সিএনজি আটোরিকশায় করে নিয়ে আসে। জবানবন্দিতে বাচ্চু বলেছে, নাহার প্লাজার ১৩০৮ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নিয়ে আমি দু’ বছর ধরে ব্যবসা করছি। কয়েক বছর আগে রুমি’র সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনের সূত্রে পরিচয় হয়। আমাদের দু’জনের বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় আমাদের মধ্যে খাতির তৈরি হয়। এক বছর আগে ঢাকার সংসদ ভবন এলাকায় আমাদের সাক্ষাৎ হয়।

আমি তাকে নকিয়া ১১০০ মডেলের একটি মোবাইল ফোন সেট কিনে দিই। গত শুক্রবার ঘটনার দিন রুমি ফোন করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। বিকাল ৫টার দিকে আমি মিরপুর ১০ নম্বরে গিয়ে তাকে সিএনজি অটোরিকশায় করে নাহার প্লাজায় নিয়ে আসি। তাকে আমার অফিস ১৩০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাই। আমরা যখন নাহার প্লাজায় ঢুকি তখন লিফট থেকেই কিছু লোক আমাদের ফলো করছিল।

আমি রুমিকে আমার অফিস কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে দিলাম। তাকে কিস করি। তখনই দরজার বাইরে কিছু লোক নক করে। আমরা দু’জন ভয় পেয়ে যাই। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই।

চিন্তা করি ধরা পড়লে অফিসটা ছেড়ে দিতে হবে। মান-ইজ্জত কিছুই থাকবে না। নানা চিন্তার একপর্যায়ে রুমিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিই। রুমি শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে গলা টিপে হত্যা করি।

তখনও দরজার বাইরে লোকজন কথা বলছিল। এরপর লাশ বাথরুমে নিয়ে যাই। চিন্তা করি লাশ বাইরে বের করা সম্ভব হবে না। সিদ্ধান্ত নিই লাশ কেটে হাড্ডিগুড্ডি জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবো। মাংসগুলো বাথরুমে ফ্লাশ করে দেবো।

অফিসে পেয়াজ কাটার ছুরি ছিল। সেটা দিয়ে রুমির মাথাটা কেটে আলাদা করে রাখি। ২ হাত ও ২ পায়ের জয়েন্ট আলাদা করি। এগুলো কেটে ৩ ভাগ করি। বডিটা গলা থেকে নাভি পর্যন্ত টান দিয়ে কেটে দু’ভাগ করে ফেলি।

নাড়িভুঁড়ি ছোট ছোট করে সাইজ করি। সেগুলো অল্প অল্প করে কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিই। ওই ছুরি দিয়ে হাত ও পায়ের মাংসগুলো ছাড়িয়ে নিই। যাতে গন্ধ না ছড়ায়। হাড়গুলো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিই।

রুমির পরনের ওড়না, সালোয়ার ও কামিজ কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে কমোডে ফ্লাশ করে দিই। মাথাটা জানালা দিয়ে ঢুকছিল না। মাথার দুই পাস কেটে ছোট করে বাইরে ফেলে দিই। রুমি ব্রা পরেনি। সেমিজ দিয়ে বাথরুম ও ঘরের মেঝের রক্ত পরিষ্কার করেছি।

এসব কাজ করতে সকাল সাড়ে ৮টা বেজে যায়। ভোরে নাহার প্লাজার ম্যানেজার ইলিয়াসকে বলি, আমি দরজা খুলবো। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাতে আমার দরজায় নক করা লোকগুলো আবার আসে। তারা সবাই নাহার প্লাজার দোকানদার, কর্মচারী। তারা মেয়েটির খোঁজ করে।

রুম সার্চ করে। কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। সকালে ছাদে ফেলে দেয়া রুমি’র একটা কব্জি কাক নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে। কিন্তু কব্জির আঙুলের মাংসগুলো যদি ছাড়িয়ে নিতাম, তাহলে কাক সেটি নিয়ে রাস্তায় ফেলতো না। আমি ধরা পড়তাম না।

গতকাল আদালত চত্বরে বাচ্চুর সঙ্গে দেখা করতে যান তার ভাই মজনু। তিনি বলেন, আমার ভাই কি করে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারলো বুঝতে পারছি না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক দীপক দাস বলেন, আমরা অপরাধ বিজ্ঞানে নৃশংস খুনিদের শরীরের কিছু চিহ্ন থাকার কথা পড়েছি। খুনি বাচ্চুর শরীরে সেসব চিহ্নের অনেকগুলোই রয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর হাতিরপুল থেকে রুমি নামের এক হতদরিদ্র তরুণীর ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক প্রেমিক সাইদুজ্জামান ওরফে বাচ্চুকে। সূত্র:মানবজমিন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।