আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বারাক ওবামা

পুরো নাম বারাক হুসেইন ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। ২০১২ সালের নভেম্বরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬১ সালের ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের রাজধানী হনোলুলুতে জন্ম হয় তার। কেনীয় বংশোদ্ভূত বারাক হোসেইন ওবামা সিনিয়র ও মার্কিন অ্যান ডানহামের ঘরে জন্ম নেন।

শৈশবের প্রথমদিকেই মা-বাবার বিচ্ছেদ দেখতে হয়েছে ওবামাকে। শিশু ওবামাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান মা অ্যান, আর ওবামা সিনিয়র ফিরে যান

নিজ দেশ কেনিয়ায়। ওবামার বয়স যখন ছয়, মা অ্যান তখন ইন্দোনেশীয় এক মুসলিমকে বিয়ে করেন এবং ছেলেকে নিয়ে জাকার্তায় চলে যান। জাকার্তার বন্ধুদের কাছে 'ব্যারি' নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে কয়েক বছর পরই আবারও হনোলুলুতে ফিরে যান ওবামা।

নানা-নানীর সঙ্গে বাস করতে শুরু করেন। বাবা ও মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মুসলিম হওয়ায় এবং মুসলিম প্রধান দেশে বেড়ে ওঠার কারণে কট্টরপন্থিরা ওবামার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। তার জন্মস্থান নিয়েও প্রায়ই বিতর্কের অবতারণা করে। তবে নিজেকে পুরোদস্তুর ক্যাথলিক হিসেবেই দাবি করেন ওবামা। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর স্নাতক শেষ করার পর ১৯৮৫ সালে শিকাগোয় গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে শুরু করেন বারাক ওবামা।

প্রায় তিন বছর কমিউনিটি অর্গনাইজার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়তে শুরু করেন। হার্ভার্ড থেকে ফিরে নাগরিক অধিকার নিয়ে আইন চর্চা শুরু করেন। ১৯৯১ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ল'তে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিকাগোর একটি ল' ফার্মে কাজ করার সময় মিশেল রবিনসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ওবামার।

পরিচয় থেকে প্রেম এবং পরে ১৯৯২ সালে মালাবদল করেন তারা। ১৯৯৬ সালে ইলিনয় রাজ্য সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন ওবামা। ২০০৪ সালে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় সম্মেলনে তিনি মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় তাকে একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ওবামা জাতীয় পরিসরে মোটামুটি অচেনাই ছিলেন।

তার অসামান্য বক্তৃতাটির ফলে তিনি মুহূর্তেই জাতির কাছে পরিচিতি লাভ করেন। ছড়িয়ে পড়ে তার নাম-ডাক। সেই বছরের নভেম্বর মাসে তিনি ইলিনয় অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ব্যবধানে রিপাবলিকান দলের প্রতিপক্ষ অ্যালেন কিয়েজকে পরাজিত করেন। এতে বেগবান হয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। সিনেটে

কাজ শুরু করার মাত্র দুই বছর পরই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা জানান তিনি।

বিরোধীরা তাকে অযোগ্য ও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অনভিজ্ঞ হিসেবে সমালোচনা করেন। তবে দলীয় প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে হারাতে সক্ষম হন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তরুণ, নারী ও লাতিন আমেরিকান ভোটারদের বাধভাঙা সমর্থন পান এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও বেকারত্ব নিয়ে বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তবে ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি, আফগান যুদ্ধের ইতি টানার ঘোষণা, আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন

লাদেন হত্যায় নেতৃত্ব দান, সর্বশেষ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির আঘাত মোকাবিলা ও দুর্গতদের সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ওবামার জনপ্রিয়তাকে সামনের দিকেই নিয়ে গেছে।

বিশ্ব রাজনৈতিক অস্থিরতার দাবানল লাগতে দেননি নিজ দেশে। বরং আগলে রেখেছেন। বেকারত্বের হার বেড়ে গেলেও মোকাবিলা করেছেন শক্ত হাতে। কলম হাতেও কম যান

না ওবামা। তার আত্দজীবনী বইয়ে অনেক অজানা কথা তুলে ধরেছেন অকপটে।

যা তার জনপ্রিয়তাকে আরও একধাপ এগিয়ে রাখে। 'ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার : এ স্টোরি অব রেস অ্যান্ড ইনহেরিট্যান্স' নামক বইটি দীর্ঘ সময় নিউইয়র্ক টাইমসের বহুল বিক্রীত বইয়ের তালিকায় ছিল। এমনকি বিশ্বের

বিভিন্ন দেশে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে বইটি। বর্তমানে দাপটের সঙ্গে গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাদাবাড়িতে কালোদের দাপট দেখছে গোটা বিশ্ব।

এক কথায় সাদারা কৃষ্ণাঙ্গদের পতাকাতলে জায়গা নিচ্ছেন। আলোচনা ও সমালোচনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। বোদ্ধারা বলে থাকেন, মার্টিন লুথারের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন বারাক ওবামা। দ্বিতীয়বার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তার কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল মার্টিন লুথারের সেই স্বপ্ন দেখা বাণীগুলো। হয়তো সেই আদর্শকে বুকে লালন করে কাজ করে যাচ্ছেন বারাক হুসেইন ওবামা।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।