আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বারাক ওবামা এবং শেখ হাসিনা (২)

সুমাইয়া সরোয়ার

আগের দিন লেখাটা শেষ করতে পারিনি। আসলে শেষ করা বললে ভুল হবে। শুরুই করতে পারিনি। রবীন্দ্রনাথ ছোট গল্প সম্পর্কে বলেছিলেন "শেষ হইয়াও হইলনা শেষ"। আর আমি বলতেছি শুরু হয়েও হলনা শুরু।

যা হোক যেখানে ছিলাম। বারাক ওবামা এবং শেখ হাসিনা। দুজন দু'দেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান। দু'জনই ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু 'মসনদে' বসতে যাচ্ছেন ২০০৯ সালে। এ রকম আরও অনেক মিল আছে তাদের মধ্যে।

যেমন- তারা উভয়েই তরুনদের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। দুজনের নির্বাচন ছিল দুদেশেরই অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে এবং তারা উভয়েই এই অর্থনৈতিক সমস্যার ঐতিহাসিক সমাধানের কথা বলেছেন। নতুনদের ভোট বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। এরকম আরো অনেক।

কিন্তু, তাদের মাঝে যে বিশাল পার্থক্যগুলো আছে তার মধ্যে কয়েকটি এরকম: একজন উন্নতদেশের আর অন্যজন উন্নয়নশীল দেশের। একজন গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক একটি দেশের আর অন্য জন গণতন্ত্রের দিকে ধীর পায়ে এগুচ্ছে এরকম একটি দেশে। একজন 'সুশিক্ষিত' একটি জাতির অপরজন অল্পশিক্ষিত একটি জাতির প্রধান। ওবামার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিল বুশ যাকে 'জুতা'র মত এক উপহার নিয়ে বিদায় নিতে হল। আর শেখ হাসিনার আগে ক্ষমতায় ছিলে খালেদা জিয়া যাকে জনগন ৩০ টিরও কম আসন উপহার দিল।

কিন্তু এদের মাঝে আরও বড় যে পার্থক্য তা হল- বারাক ওবামা এর আগে ক্ষমতায় ছিলেন না। দুর্নিতির অভিযোগেও অভিযুক্ত হনননি কখনও। ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায় নিতে হয়নি তাকে। জেলে যেতে হয়নি। তার বাবা আমেরিকার জনক নন।

তিনি 'উন্নত' কোন পরিবার থেকে আসেননি। তার দেশের অর্ধেক লোক দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে না। তার দেশে হরতাল নেই। ছাত্র রাজনীতির নামে ধ্বংসের লীলাখেলা চলে না। তার দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ১০% (১০%তারেক) হিসেবে পরিচিত হয় না।

তার দেশে পরাজিত দল 'সুক্ষ্ম' 'স্থূল' বা 'ডিজিটাল' কারচুপির অভিযোগে জনতার রায়কে অমান্য করেন না... সুতরাং বারাক ওবামার চেয়ে শেখ হাসিনার বিজয় অন্য দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হল আমেরিকাতে বারাক ওবামা না হলে একই পার্টি থেকেও অন্য কেউ প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হতে পারত। বা বিরোধী পার্টির ম্যাক কেইন, ও বিজয়ী হতে পারত। কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টি এরকম নয়। আওয়ামী লীগ থেকে শেখ হাসিনা ব্যতীত অন্য কে দাড়ালে হওয়ার সম্ভাবনা যেরকম ক্ষীণ।

সেরকম খালেদা জিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা সেরকম বেশী। কিন্তু খালেদা জিয়া তো আর ম্যাককেইন নন যে নির্বাচনের পর ফলাফল মেনে নিবেন। তিনি তো আর ম্যাককেইন নন যে নিজের বিগত ভুলত্রুটি গুলো খতিয়ে না দেখে বরং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই বেশি ব্যস্ত। যা হোক ওবামাও যেমন আমেরিকার মানুষদেরকে সপ্ন দেখিয়েছেন। শেখ হাসিনাও।

কিন্তু ওবামাকে যতটা নির্ভর করা যায় হাসিনাকে ততটা নয়। তার বিগত বছর গুলো এবং তার আশেপাশের কিছু চাটুকার এর উদাহরন। তবুও তিনি পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এ পরিবর্তন যেন নিজের থেকেই শুরু হয়। ওবামা নির্বাচনের পরই বলেছিলেন পরিবর্তন হয়ে গেছে।

কিন্তু হাসিনা সেটা বলেননি। এটা অবশ্যই ভাল দিক। কিন্তু ওবামার চেয়ে হাসিনার জন্য কাজ গুলো অনেক কঠিন হবে যদি তিনি করার চেষ্টা করেন। সন্দেহটা এ জন্য যে আমাদের দেশের রাজনীতি তো দেখে আসছি। রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশের সরল মানুষদেরকে তো শুধু কথা/ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় যায়।

আর ক্ষমতায় গেলে মাতাল হয়ে যায়। এটা যেমন বিএনপি তেমন আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। তবুও আমাদের আশা থেকেই যাবে। নতুন দিনের আশা। পরিবর্তনের আশা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের আশা। সস্তায় পণ্য কেনার আশা। বিশ্বে মাথা উঁচু করার আশা। মৌলিক চাহিদা গুলো মিটানোর আশা... আশা আশা আশা আরও কত আশা। কিন্তু পারবেন কি পারবেন কি হাসিনা? পারবেন কি আতীতকে ভুলে শুধু ভাবিষ্যতের জন্য কাজ করতে।

তার দেওয়া ওয়াদাগুলো পুরন করতে। মানুষকে শান্তির এক বাংলাদেশ উপহার দিতে? অপেক্ষায় রইলাম শেখ হাসিনা, অপেক্ষায় রইলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।