আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিত্য ঈদ পালা-১

আমার আমিকে খুঁজি

ব্যাডায় বিশ ট্যাকা আমার হাতে গুঁইজা দিয়া আর হাত ছাড়তাছে না। আমার মাথায়, পিঠে হাত বুলাইতেছে আর কি জানি কইতেছে; আমার ভাল্লাগতাছে না.. ইশ্ ব্যাডার হাত এতো খরখরা ক্যান? শইল্যে কাঁটা দিতাছে। আমার ভাল্লাগে না। ভিক্ষা করতে ভল্লাগেনা। দশ জনের নয়জন মানুষ ভিক্ষা চাইলে দাঁত মুখ খিঁচায়া তেড়ে আসে য্যান ! মানুয়ের মুখগুলা তহন ডাস্টবিনে খাওন লইয়া মারামারি করা কুততার মুখের মতো লাগে।

কেউ কেউ এই ব্যাডার মতো হাতি পাতি করে। কেউ করে ফাইজলামী। আমি মাথা তুলতে পারি না। মুখে কিছু কইতে পারি না । খালি মাথা নিচা কইরা হাত পাতি।

ভিক্ষা করনের সময় নিজেরে তেলাপোকা মনে হয়। ময়নুল না মাইনুল না মইনুল না মনু আমি নিজেই জানি না। সবই ডাকে , আমিও জবাব দেই। বড় অইলে কোন নাম কমু ভাইবা পাই না। তবে আমার পছন্দের নাম অইলো হইলো শাকিল .. নতুন কোন জায়গায় গেলে আমি আমার নাম কই শাকিল।

আইজকা ট্রেনে কইরা ঢাকা আইছি । জীবনের পয়লা। বককর কইছে ঈদের আগে ঢাকায় অনেক ট্যাকা কামান যায়। আল্লাগো! কি বড় যায়গা। রাস্তায় কতো বড় বড় গাড়ি।

আর কত মানুষ। রাস্তায় যে ডর লাগে! বড় একটা বাসে কইরা বককর লইয়া আইছে একটা মার্কেটে। আমাগো শহরের মার্কেট থাইক্যা অনেক বড় আর সুন্দর। কি সুন্দর ! কি ঝলমইল্যা! মানুষগুলাও আমাগো শহরের মতো না। দেখলে ডর করে আর ওগো পোলাপানগুলারে দেখলে হিংসা লাগে।

বড়লোক মাইনষের সুন্দর সুন্দর পোলাপান দেখলে আমার বুকের ভিতরে জ্বলে। হিংসা লাগে। কাল ঈদ, হের লাইগ্যা দুইদিন আগে থইকাই ইষ্টিশন রোড আর মহাজন পট্টির ভাঙ্গারি দোকান বন্ধ। ভাঙ্গারি আর কাগজ টোকান ও বন্ধ। হিরুইঞ্চি গুলারে ফাঁকি দিয়া ব্রিজে রিক্সা ঠেলাও কঠিন ।

ধরতে পারলেই মাইর দ্যায় আর সব ট্যাকা লইয়া যায়। ডেইলি বিশ ট্যাকা দিলে আবার কিছু কইব না। কিন্তু ছোট মানুষরে কেউ নিতে চায় না। ডেইলি বিশ ট্যাকা তো কামাই ই অয় না। আমি দিমু কি? তারপরেও ঠেকায় পড়লে রিক্সা ঠেলা যাইতো ।

কিন্তু কাইল ঈদ। ঈদে মারে দেখুম না? সৎ বাপে ঘর থাইকা মাইরা বাইর কইরা দিছে গত কুরবানী ঈদের পরে। সপ্তায় ২০০ টেকা না দিলে ঘরে ঢুকতে দিব না। যে মাইর মারছে! মা রেও মারছে। আমার রাগ লাগছে।

আমি ঘর থাইকা বাইর অইয়া আইছি । কিন্তু ঈদেও মারে দেখুম না? বককর শুইনা হাসে। কয়-' আমাগে আবার কিয়ের ঈদ? ঈদ হইলেঅ ভদ্রলোকের। ' কিন্তু মা যে ঈদে আমারে আদর কইরা সেমাই খাওয়ায়। গত ঈদে আমারে নতুন শার্ট কিনা দিছিল।

মা অনেক কান্দব আমার লাইগা। মার কথা মনে হইলে আমারও খালি কান্দা আসে, খালি কান্দা আসে। বাজারের নাইটগার্ড আহাদ মিয়া কয় ‌‌‌‌'ব্যাডা মাইনষের কান্দন নাই' । কিন্তু মার কথা মনে হইলে বুকের ভিতরে তুফান উঠে। চিল্লাইয়া গড়াগড়ি দিয়া কান্তে ইচ্ছা হয়।

২০০ টেকা লাগবই আমার। আমি মার কাছে যামু। মারে আমি তোমারে দেখতে আমু। আমি জোর কইরা ব্যাডার হাত থাইকা ছুইট্যা আসি। ব্যাডা চিল্লইয়া উডে-'কই যাস? বিশ ট্যাকা লইয়া ভাগবি নাকি? চোর কেথাকার।

দে ঊনিশ টাকা ফেরত দে। ' 'ভংতি নাই। ' 'তাইলে বিশ ট্যাকা দে' ব্যাটা আমার হাতে থাকা বিশ টাকার নোটটা ছিনাইয়া নিয়া হাঁটতে থাকে। মার্কেট থেকে কেউ বাইর হইলেই আমার মতো আরো যে পোলাপান আছে ওরা দৌড়াইয়া যায় দেইখা আমিও দৌড়াইয়া গিয়া একটা দলের কাছে যাই কিন্তু অন্য পোলাপানের মতো 'একটা ট্যাকা দেন আপা' , 'একটা ট্যাকা দেন স্যার' আমার গলা দিয়া বাইর হয় না। আমি খালি মাথা নিচা কইরা হাত পাইতা ওদের পিছে পিছে হাঁটতে থাকি।

'যা ফুট এহান থাইক্যা। কেডা শিখাইছে এইসব?' ধমক দিতে দিতে লোকটা গাড়িতে উঠে বসে। মহিলাটা বলে উঠে-'আহা ধমক দিচ্ছ কেন? ছোট একটা ছেলে?' । -'আমি ভিক্ষা করা দেখতে পারি না। মাগনা পাইয়া এদের অভ্যাস খারাপ হইতাছে।

' -'ঠিক আছে । আমি মাগনা দিব না। ওকে একটা প্রশ্ন করব। ও জবাবা দেয়ার চেষ্টা করবে। এই চেষ্টা করার বিনিময়ে তুমি ওকে টাকা দাও।

সঠিক হলে ১০ টাকা ভুল হলে ৫ টাকা। ' -'কর প্রশ্ন কর' লোকটা বিরক্ত হয় , কিন্তু বউয়ের কথা মেনে নেয়। -'আচ্ছা বল্ তো এই শাড়ির দাম কত? ' একটা শড়ি ব্যাগ থেকে বের করে আমাকে দেখায়। কি বলবো আমি? আমার অসহায় লাগে? কত হবে এর দাম? -'পাঁচশ টেকা। ' -' পাঁচশ টাকা? হি হি, শুনেছ কি বলে? এটার দাম নাকি ৫০০ টাকা।

তুই তো ভুল জবাব দিলি , তুই পাবি পাঁচ টাকা। এর দাম হলো বিশ হাজার টাকা। ' বিশ হাজার টেকা। আমার বুক ধক করে উঠে। কত টেকায় বিশ হাজার টেকা হয়? একটা শাড়ির দাম বিশ হাজার টেকা ? বুকের ভিতরে জ্বলতে থাকে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।