আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৈপরীত্য ভাবায় নিত্য

লিলিপুটরা বড়ো হবে। এই আশায় দলা পাকানো কাগজ খুলে আবার ব্যবচ্ছেদকরণে বিশ্বাসী আমি। যদিও কাগুজে বৃত্তান্ত যা বলে অতটা খারাপ আমি নই।

চোখ-সওয়া কিছু বিষয় উল্টে গেলে বেশ মজাই হয়। তার মানে কিন্তু ‘অবাস্তব’ চিন্তা করতে বলছিনা।

রোজকার বাসা থেকে অফিস যাওয়ার বিষয়টি ইউটার্ন করে যাওয়ার মজা হাঁড়েহাড়ে টের পাওয়া যাবে। তারচে ভাবুন সপ্তায় দুটো উইক ডে, পাঁচটা উইকেন্ড বা মাসকাবারে কাজকাম ছাড়াই কড়কড়ে নগদ প্রাপ্তির ভাবনা। মস্তিষ্কে অত বেশি চাপ প্রয়োগের দরকার নেই জনাব। ডানহাতি কেভিন পিটারসেনের গ্রিপ না বদলে মুহূর্তেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানে পরিণত হয়ে পয়েন্টের ওপর দিয়ে বলটাকে সীমানা পার করার দৃশ্য কল্পনা করুন। আরো ভাবতে পারেন সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উমর গুলের কিউই মিডল অর্ডার গুড়িয়ে দেয়া ‘রিভার্স সুইং’-ময় স্পেলটির কথা।

জানি, অনেকেই বলবেন, রিভার্স সুইং? সে তো ডালভাত। সত্তর দশকের শেষদিকে সরফরাজ নেওয়াজ, সিকান্দার বখ্‌ত, পরে ইমরান-ওয়াসিম-ওয়াকারদের হাত ঘুরে আকিব-শোয়েব তারপর গুল। নতুন কিছু নয়। তাদের জন্যই বলি, এ ডালভাতই পাকিস্তান ছাড়া বাকিদের জন্য এমন এক দুর্বোধ্য রেসিপি, গলাধ:করণের আগেই যার কারণে বদহজমের ঘটনা ঘটে বারংবার। যতই পুরনো আর দুর্বোধ্য হোক।

পশ্চিমা বোদ্ধারা একটা প্যারামিটার ঠিকই বের করেছিলেন রিভার্স সুইংয়ের (বহুদিনের গবেষণা শেষে)। প্রথমত, বোলারকে হতে হবে ন্যাচারাল সুইংগার। অত:পর বাতাস হতে হবে মৃদুমন্দ। আর বল হতে হবে নিদেনপক্ষে (ওয়ানডেতে) ৪০ ওভার পুরনো। প্রথমে ড্যারেন গফ, তারপর জেমস অ্যাণ্ডারসনের মতো সেদিনকার ছোকরারাও যখন একটু-আধটু রিভার্স সুইংয়ের ছিটেফোঁটা দেখানো শুরু করলো, ক্রিকেটের জনক সম্প্রদায় খুশিই হয়ে উঠলো।

যাক, রহস্যটার একটা কিনারা পাওয়া গেল শেষতক। খুশির রেশ এই ২০০৯ পর্যন্তই। দলের মূল স্ট্রাইক বোলার বিশ ওভারের ক্রিকেটে বারো ওভারের পর বল করতে আসলে চমক হিসেবে সেটাই যথেষ্ট। তিনিই যখন বই-খাতার হিসেব উল্টে রিভার্স সুইংয়ের ঝুলি মেলে বসেন, প্রয়োজনীয় শর্ত ৪০ ওভারের অর্ধেকেরও কম সময়ের আগে, সিম্পলি স্পিচলেস হয়ে যেতে হয়। ক্রিকেট বিশ্ব তা-ই হয়েছে।

নিউজিল্যাণ্ড ক্যাপ্টেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি এ বিষয়ে কিছু বলতে না পেরে যথারীতি ‘অন্যরকম’ কিছুর গন্ধ শুঁকেছেন। শেষে বাধ্য হয়ে মুখ খুলেছেন খোদ বোলার উমর গুল আর পাকিস্তানি বোলিং কোচ আকিব জাভেদ। নিজের ঢোল নিজে তো আর ঠিকঠাক পেটানো যায় না। গুল তাই ধুম-ধারাক্কা ব্যাটিংয়ে বলের এমনিতেই দ্রুত করুন দশা হয়ে যাওয়ার কথা বলেই খালাস। আর রাখঢাক না করে আকিব যা বললেন তার সারমর্ম- অ্যাকশন, গতি আর ঠিকঠাক বল ছাড়ার টেকনিকের কল্যাণে গুল আদতে ন্যাচারাল সুইংগার নন শুধু, সহজাত রিভার্স সুইংগার।

এই বিদ্যা যদি আসলেই ডাকিনী তন্ত্র বা অন্য কোনো অবৈধ কলাপুষ্ট হতো, তাহলে পাকিস্তানের সব পেস বোলারকেই বারো ওভারের পর ডেকে আনতে হতো। আঙ্গুল তোলার আগে খোঁজ নিয়ে দেখুন, গুলের তূণে থাকা এ অস্ত্র কিন্তু এই আসরের আবিষ্কার নয়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার নিত্যসঙ্গী। এয়ার সুইং, লেট সুইং যে নামেই ডাকুন। এখানেই বৈপরীত্যের মজা, আর সবাই যা করছে, তার থেকে ভিন্ন কিছু করা।

নিয়মিতভাবে করার সুবাদে গুল তাই বলতে পারেন, এ তল্লাটে আমি আলাদা; পারলে করে দেখাও দেখি আমার মতো। সাধে কি পাকিস্তানী সাংবাদিকরা রিভার্স সুইংকে ‘সুপারসুইং’ নাম দেয়ার পক্ষে মত দেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।