আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসায়ন উপাখ্যান

আমি তাই বলি যা আমি বিশ্বাস করি রসায়ন নিয়ে আমার জীবনের করুন গাথা শুরু এসএসসি মডেল টেস্ট এর সময় থেকে। মডেল টেস্ট এ রসায়ন এর পরীক্ষার দিন ঘটনাক্রমে আমার পাশে বসে আমার হার্টথ্রব নায়িকা। আমিতো আর কাল বিলম্বে না করে আমার যাবতীয় রসায়নের জ্ঞান খাতাতে ঢালতে লাগলাম আর সেখান থেকে আমার নায়িকা তার খাতাতে নিতে লাগলো। আমিতো নায়িকাকে হেল্প করতে পারায় যারপরনাই খুশি হইলাম। কিন্তু হায় !!!!!!!!!!! খাতা দেওয়ার পর দেখি আমার নায়িকার মার্কস আমার চেয়ে বেশী!!!!! আমাদের মডেল টেস্ট এর কোচিং এ যেইসব ক্লাস হত তাতে আমি ভুলেও যাইতাম না কিন্তু সবসময় ক্লাসে আমার ব্যাগ থাকতো।

আমি ক্লাসের টাইম এ খেলতেই বেশী পছন্দ করতাম। একদিন আমাদের এক স্যার ক্লাসে আমার ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে সেই ব্যাগ তার হেফাজতে নিয়ে যায়। ব্যাগের অবস্থা এম্নিতেই ভাল ছিল না কিন্তু হায়!!!!!!!!!!!!!!! ব্যাগ এ যে রসায়ন বই, পুরো বই এ অবজেক্টিভ দাগানো। তাই বাধ্য হয়েই স্যারের কাছে গেলাম কিন্তু স্যারতো নাছোড়বান্দা কিছুতেই দিবে না। এবং দিবে না দিবে না দিলোই না।

তাই বাধ্য হয়েই পরীক্ষার ১ মাস আগে নতুন বই কিনতে হল। তারপর শুরু হল এসএসসি পরীক্ষা। দেখতে দেখতে এসে গেল রসায়ন পরীক্ষা এবং পরীক্ষা অভাবনীয় ভাল হল। নিজেকে রসায়নের জনক ভাবা শুরু করলাম এবং সবার কাছে ঘোষণা করলাম সারা বাংলাদেশে যদি একজনও রসায়নে এ+ পায় সে হব আমি। কিন্তু হায়!!!!!!!!!!!! রেজাল্ট দেওয়ার পর দেখি রসায়নে এ+ মিস।

যাই হোক দুঃখ ভরাক্রান্ত হৃদয়ে কলেজের ক্লাস শুরু করলাম। কিন্তু রসায়ন ক্লাসে স্যার শুধু আমাকে দিয়ে প্রস্তুত প্রণালীর চিত্র আঁকাত। চিত্র আঁকতে আঁকতেই দেখি হাফ ইয়ারলি দোরগোড়ায় কিন্তু প্রস্তুতির অবস্থা রীতিমত ভয়ঙ্কর। রসায়ন পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে আমার তো অবস্থা আরও শোচনীয় কারন স্যার আমাকে দিয়ে পুরো ৬ মাস প্রস্তুত প্রণালীর চিত্র আকালেও প্রশ্নে তার কোন চিহ্নই নাই। অনেক কষ্টে শিষ্টে ১২-১৪ মার্কস এর উত্তর দিলাম ৩০ মিনিটে।

তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই খুব জম্পেশ লিখতেসে। এই দেখে আমার মেজাজ তো সপ্তমে। সবাই লিখতেসে আর আমি বইসা থাকব তা কি হয় তাই আমিও লিখা শুরু করলাম একটা নাটক। নাম দিলাম " পরীক্ষার হল " আর চরিত্র হল দুইজনের " ছাত্র" ও "শিক্ষকের"। যাই হোক কিছু দিন পর আমি নাটক লিখার কথা ভুলে গেলাম আর হটাত এক দিন রসায়ন স্যার ক্লাসে এসে বলল কাল আমার হাতে একটা খাতা পরসে যেখানে প্রশ্নের উত্তরের বদলে নাটক লিখা।

এবং ক্লাসে সে নাটকটি নিজের মেমরি থেকে পড়ে শোনালো। কিন্তু ভ্যাগক্রমে সে খাতার রোল নাম্বার মনে করতে পারল না এবং সবাইকে বলল পরের দিন ক্লাসে খাতা টি আনবে। আমি স্বাভাবিকভাবেই পরের দিন ক্লাস করলাম না কিন্তু শুনতে পারলাম স্যার খাতা সবাইকে পরতে দিসে আর সবাইকে যখন জিজ্ঞেস করসে কে এই ছেলে তখন সবাই উত্তর দিসে স্যার আপনি যাকে দিয়ে প্রস্তুতপ্রনালি আঁকান এইটা সেই ছেলে। এই কথা শুনে স্যার যেই উত্তর দিয়েছিল তা শুনে আমি রীতিমতো হতবাক কারন স্যার বলেছিল " ও ওই ছেলে। ওকে তো আমি চিনি।

ও অনেক দুষ্ট । তাইতো ওকে দিয়ে আমি চিত্র আকাই যাতে ও ক্লাসে দুষ্টুমি না করতে পারে আর আমি শান্তিমত ক্লাস নিতে পারি"। এরপর স্বাভাবিকভাবেই আমি আর স্যার এর ক্লাস করি নাই। ফলাফলে ভয়াবহ প্রস্তুতি নিয়ে ইয়ার চেঞ্জের রসায়ন পরীক্ষা দিতে হলে গেলাম। শুধু যাওয়ার আগে বইটা টয়লেটে রেখে গেলাম।

কিন্তু হায়!!!!!!!!!! পরীক্ষার মাঝপথে শুনলাম তওফিক সালাম স্যার টয়লেটে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কিছু আমার মত কিছু মেধাবী ছাত্রকে পাকড়াও করসে। এই শুনে আমার আর টয়লেটমুখো হওয়ার সাহস হল না কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ত্বরিত গতিতে টয়লেট এ গিয়েও দেখি আমার রসায়ন বই নাই। নাই নাই নাই। আমি আজো জানি না আমার রসায়ন বই এর ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছিল। যাই হোক এইরূপ আরও অনেক রসায়নজনিত বাধা বিপত্তি পার হয়ে এইচএসসি পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম।

১ম সেমিস্টার এ রসায়ন ১ম পত্রের ঝামেলা সহজে পার হলেও ঝামেলা লাগলো ২য় সেমিস্টার এর রসায়ন ২য় পত্রে। রসায়ন ২য় পত্রে রিটেক খেলাম এবং ম্যাডামের উপর যারপরনাই খেপ্সিলাম তাই ঘোষণা দিলাম যতদিন ম্যাডাম থাকবে ততদিন আমি এই রিটেক নিব না। কিন্তু হায়!!!!!!!!!!!!! ম্যাডাম তো আর ভার্সিটি ছাড়ে না তাই বাধ্য হয়েই ১০ম সেমিস্টার এ রিটেক নিলাম কিন্তু হায় !!!!!!!!!! আবারো ফেল। আবার ১১তম সেমিস্টার এ এই রিটেক কিন্তু আবারো ফেল। কোন উপায় না পেয়ে শেষ সেমিস্টার (ইন্টার্নশিপ এর সেমিস্টার) এ আবারো নিলাম।

এইবার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিল না উপস্থিতির হার না থাকায়। হায়!!!!!!!!!!!!! চোখের সামনে দিয়া সব বন্ধু বান্ধব সার্টিফিকেট তুইলা নিলো, যাদের একসময় আমার থেকে অনেক ক্রেডিট বাকি ছিল তারাও সার্টিফিকেট তুলল আর আমি পুরো ৭১ টা সাবজেক্ট এর ভিতর ১ টা খারাপ করেও তা শেষ করতে পারলাম না! পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলাম আমি কিন্তু নতুন উদ্যমে আবার রসায়ন নিলাম এবং রসায়ন পড়া শুরু করলাম। কিন্তু হায়!!!!!!!!!!!! আবারো ফেল। এইবার আবারো ঘোষণা করলাম ম্যাডাম যতদিন থাকবে ততদিন আমি আর রিটেক নিব না। এখন চাকরি করব এবং কিছুদিনের মাথায় চাকরি হয়েও গেল।

সেখানে সার্টিফিকেট চাইলে বললাম এখনও তুলি নাই। ৬ মাস পর আবার আরেক জায়গায় জব হলে সেখানে ধুঁকলাম এবং সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে আগের কথাই বললাম। এর দুইমাস পর আরেক জায়গায় জব হলে সেখানে গেলাম কিন্তু সার্টিফিকেট এর ব্যাপারে আগের কথা বললাম কিন্তু তারা এবার মানল না। তারপর হাতে কিছু সময় পাওয়া যাওয়ায় ভাবলাম এখনি রসায়ন আবার রিটেক নেওয়ার উত্তম সময় এবং নিলামও। পরশুদিন রেজাল্ট দিল আপনাদের অশেষ দোয়ায় এইবার পাস করলাম।

ধৈর্য সহকারে পুরোটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমি কিংবা আমার পরবর্তী প্রজন্ম যেন আর রসায়ন এর ম্যাধমে আর ক্ষতিগ্রস্থ না হই। আমিন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।