অর্থের যোগানদাতার সন্ধানে গোয়েন্দারা
নাশরাত চৌধুরী : ২০শে আগস্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা এবং ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া আন্দোলনে অর্থের যোগানদাতাদের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তারা এই পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের কাছ থেকে আন্দোলন পরিচালনাকারীরা টাকা পেয়েছেনÑ এমন প্রমাণও পেয়েছেন। এই আন্দোলনে সবচেয়ে বড় অর্থের যোগানদাতাদের একজন সাবেক এক সংসদ সদস্য। তিনি নিজে পুরান ঢাকার কয়েকজন কমিশনারের মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা দিয়েছেন।
ওই কমিশনার গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছে সাবেক এমপি’র টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া প্রায় ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছেন সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা। তার ছেলে ওই টাকার যোগান দিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তার ছেলে একটি চ্যানেলকেও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও আরও প্রমাণ পেয়েছেন ‘এস’ আদ্যক্ষরের একটি গ্রুপের দুই পরিচালকও টাকা দিয়েছেন।
এর আগে ওই গ্রুপের এক পরিচালক স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সরকারের কোষাগারে ৩৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। তার একটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় এক শ’ ১৫ কোটি টাকার একটি হিসাবের সন্ধান পান গোয়েন্দারা। গোয়েন্দারা সেটির হিসাব-নিকাশ মেলাতে গেলে পরিচালক নিজেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার প্রস্তাব দেন। সূত্র জানায়, এরপর থেকেই সরকারের ওপর তাদের ক্ষোভ জন্মে। তাই তারাও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে টাকা দেন।
এছাড়া সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর ভাই আজিজুল বারী হেলালের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তিনি সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করা পাতা সংরক্ষণ করছেন বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। সেখান থেকেই তিনি ওই টাকা দেন বলে জানা গেছে। তবে তারা এই ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিন সদস্যের একটি দল এ বিষয়ে তদন্ত করছে। ওদিকে ‘আর’ আদ্যক্ষরের একটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এই আন্দোলনের জন্য অর্থের যোগান দিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। ইতিমধ্যে তার ওই ধরনের কর্মকাণ্ডের কিছু প্রমাণও গোয়েন্দারা পেয়েছেন।
সূত্র জানায়, এই আন্দোলনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দু’দলই জড়িত ছিল। বিএনপি চেয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে যাতে আটক করতে না পারে সরকার।
আর আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বিশেষ কারাগার থেকে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করে আনতে।
সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক শ’ জন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের জন্য তারা দুই-তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন। তাদের মতো আরও এরকম অনেকেই টাকা পেয়েছেন। তারা আরও জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে স্বল্প সময়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
তারা কার কার হাতে টাকা আছে এমন সম্ভাব্য কয়েকজনের নামও বলেছেন। সূত্র জানায়, আন্দোলনে মাঠে প্রায় ৫০ হাজার লোক ছিল। তাদের প্রায় সকলেই প্রতি দিনের জন্য ১৫০-২০০ টাকা করে পেয়েছেন। তাদের একদিনের টাকা অগ্রিমও দেয়া হয়েছিল। এই কারণে তারা চারদিনের টাকা পেয়েছেন।
চারদিনের জন্য প্রায় কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
মানবজমিন - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।