আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাইলাতুল বারায়াত



অদ্য দিবাগত রাত্রি লাইলাতুল বারায়াত। এদেশে লাইলাতুল বারায়াত সাধারণত ‘শবে বরাত’ নামে সমধিক পরিচিত। শব্দ দুইটি ফার্সী। অর্থ ভাগ্য রজনী। পবিত্র কোরআনে ‘সুরা দুখানে’ যে ‘লাইলাতুল মুবারাকাতান’ শব্দগুলি আসিয়াছে, তাহার অর্থ ‘বরকতময় রাত্রি।

’ তফসিরবিদ ইকরামা এবং আরও কেহ কেহ বলেন, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্রিই হইতেছে এই বরকতময় রাত্রি- “যে রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের বিজ্ঞোচিত ফয়সালা দেওয়া হইয়া থাকে। ” (সুরা দুখান-আয়াত ৩/৪) অন্যরা এই অভিমত অস্বীকার করিতে চান। তবে শেষ নবী (দঃ) কর্তৃক বর্ণিত ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’- ‘শাবান মাসের মধ্যভাগের রাত্রি’ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল বারায়াত বা শবে বরাত। হজরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, শাবানের ১৫ তারিখে (১৪ তারিখ রাত্রিতে) শেষ নবী (দঃ) লোকজনদের ডাকিয়া বলিতেন, “তোমরা সকলে এই রাত্রিতে ইবাদতে জাগ্রত থাকিবে। দিনের বেলায় রোজা রাখিবে।

কেননা, শাবান মাসের ১৪ তারিখে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ স্বয়ং প্রথম আসমানে অধিষ্ঠান করেন। সবাইকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করেন, “কে আছ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? তাহাকে আমি ক্ষমা করিয়া দিব। কে আছ রিজিকের অন্বেষণকারী? তাহাকে আমি রিজিক দিব। কে আছ রোগগ্রস্ত? তাহাকে আমি সুস্থতা দান করিব? এই রূপ আরো কেহ আছে কি? আমি প্রত্যেকের প্রয়োজন মিটাইব। ” একই হাদিসে হজরত মোয়াজ ইবনে জাবলে (রাঃ) আর একটু বেশী বলিয়াছেন।

তাহার বর্ণনা, শেষ নবী (দঃ) বলিয়াছেন, “এই পবিত্র রজনীকে মহান আল্লাহ্ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন কিন্তু যাদুকর, গণক, কৃপন, মদ্যপায়ী, ব্যাভিচারী, হিংসুক, শেরেককারী, অন্যের হক নষ্টকারী এবং পিতামাতার অব্যাধ্য সন্তানদের গোনাহ্ আল্লাহ এই মহান রাত্রিতেও ক্ষমা করেন না। ” অনেকে বলেন, শবে বরাত শুধুমাত্র এই উপমহাদেশেই পালিত হইয়া থাকে, মুসলিম বিশ্বের অন্যত্র হয় না। কেহ কেহ এই রাত্রির ইবাদত বন্দেগী ও প্রতিবেশীদের হালুয়া-রুটি বিতরণকে প্রতিবেশী সমাজের ধার করা রেওয়াজ হিসাবে বর্ণনা করেন। এই শ্রেণীর লোকেরা কাঠখোট্টা অনুষ্ঠান সর্বস্ব রীতিনীতিকে ধর্ম বলিয়া সাব্যস্ত করেন। অতি কঠোরতা আর অতি সহজিয়া।

। ইসলাম ইহাদের মধ্যে মধ্যপন্থার ধর্ম। তাই ইসলামের মুনাজাতে দুনিয়ার কল্যাণ আর আখেরাতের কল্যাণ অবিচ্ছেদ্য। এদেশে প্রতি বৎসর শবে বরাত অত্যন্ত মহাসমারোহে উৎযাপিত হয়। ইহার বাহ্যিক বর্ণাঢ্য দৃশ্য সর্বসাধারণের মনে একটা মহতীভাবের উদ্রেক করে বৈকি! অনেকে এই রাত্রিতে পরলোকগত পিতা-মাতা ও আত্মপরিজনের রূহের শান্তি প্রার্থনা করেন।

কিন্তু উপরে হজরত মোয়াজ বিন জাবলের (রাঃ) বর্ণিত শেষ নবীর (দঃ) হাদিসে যে ৯ ধরনের মানুষের গোনাহ আল্লাহ্ মাফ করিবেন না বলিয়া বলা হইয়াছে, এই সম্পাদকীয় নিবন্ধের পাঠক/পাঠিকা একবার নিজের দিকে তাকাইয়া নিজেকেই প্রশ্ন করুন, ‘আমি কি এই পবিত্র রাত্রির ইবাদত বন্দেগী হইতে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করিতে পারিব? ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে অধিকারী হইতে পারিব কি চির-কাঙিক্ষত সেই নাজাত বা মুক্তির?’ পবিত্র কোরআনে এমন একটি আয়াত আছে যাহার সারমর্ম- ‘হে বান্দা নিরাশ হইও না আল্লাহর রহমত হইতে। আল্লাহ তোমাদের সকল পাপ ক্ষমা করিয়া দেবেন। ’ ইহার দ্বারা বুঝা যায়, অত্যন্ত পাপী বান্দা এমনকি ওই হাদিসের ৯ কিসিমের মধ্যে যাহারা পড়েন, তাহারাও খাঁটি দিলে তওবা করিলে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করিলে তিনি অবশ্য অবশ্যই তাহাকেও মাফ করিতে পারেন, মাফ করিবেন। আল্লাহ্র এক নাম গফুররুররহিম। ।

পরম ক্ষমাশালী পরম দয়ালু। এই প্রেক্ষাপটে ভাগ্য-রজনী ও মুক্তি-রজনী হিসাবে শবে বরাত তথা লাইলাতুল বারায়াত-এর আগমন আমাদের মত পাপী-তাপী বান্দাদের জন্য এক অফুরন্ত রহমত আর অনবদ্য নিয়ামতের ভান্ডার। তবে দেখিতে হইবে এই দিন রাত্রি-রোজা-নামাজ-বন্দেগী যেন এই দিন-রাত্রির মধ্যেই শেষ হইয়া না যায়। যাহারা আল্লাহ্কে মানে না বা না-মানার ভান করে, তাহাদের জন্য আফসোস! তবে, তাহাদের জন্যও আল্লাহ্র রহমতের বুলন্দ তোরণ আর ইসলামের মুক্তির দরওয়াজা চির উন্মুক্ত। সামনে রমজান মাস।

এই শাবান মাস হইতেছে উহার প্রস্তুতিপর্ব। যে সব লোক বাতি আগরবাতি পোড়াইয়া, বাজি ফুটাইয়া এই রাত্রি পালন করিতে চায়, তাহারা যেমন ইসলামের সঠিক শিক্ষা হইতে দূরে সরিয়া যায়, তেমনি যাহারা ব্যবসা বাণিজ্যের নামে এই মাস হইতে শুরু করিয়া সামনের রমজান মাস পর্যন্ত জিনিসপত্রের মূল্য অযথা বাড়াইয়া মানুষের দিনগুজরানকে জানের উপরে টানিয়া তোলে। । তাহারাও হাদিস কথিত অন্যের হক নষ্টকারী ছাড়া কে আর? আল্লাহ্ সবাইকে সুমতি দিন। এই রাত্রির রহমত ও বরকতে মুসলিম উম্মাহকে জিন্দা করুন! এই রাত্রির কল্যাণে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সবার জন্য উন্মুক্ত হউক, আমি (সৌজন্যে: ইত্তেফাক)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।