নাজিল আযামীর ব্লগ সাইট
আরবি বারো মাসের মধ্যে বিশেষ ফযিলতপূর্ণ মাস হলো শাবান। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো বরকতময় রজনী। এ মাস রমজানের প্রস্তুতি মাস। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি নফল রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন- আমি রাসূলুল্লাহকে রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ একমাস রোজা পালন করতে দেখিনি।
কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন। আমাদেরও উচিত রমজানের মূল সিয়াম শুরু করার পূর্বে শাবান মাসে কিছু নফল রোজা রাখা। যাতে করে রমজানের রোজা সহজ হয় এবং লক্ষ্যও ঠিক মতো অর্জিত হয়। তবে শাবান মাসের অর্ধেক পার হয়ে গেলে রোজা আর না রাখাই ভাল। যারা এই মাসে নফল রোজা রাখতে চান তাদের উচিত হবে প্রথমভাগেই শেষ করে ফেলা।
শেষার্ধে যেন শরীর বিশ্রাম পায়। রোজার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয় বরং শরীরকে কিছু কষ্ট দিয়ে অভ্যাসের কিছু বিরুদ্ধাচরণ করে, ক্রোধ এবং লোভ ইত্যাদি রিপুুগুলোকে বশ করে নফসকে শায়েস্তা করা এবং কষ্ট সহিষ্ণুতার অভ্যাস করে বড় বড় কষ্টের কাজে নিজেকে ঢুকিয়ে ক্রমশ জীবন এবং সমাজকে সৎ ও মহৎ করে গড়ে তোলা। কিন্তু আজ আমরা রোজার যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি তা সম্পূর্ণ ইসলামী দর্শনের খেলাফ। রোজা আসার পূর্বে চনাবুট, মুড়ি ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যোগাড় করা রোজার প্রস্তুতি নয় বরং এতে বাজারে খাদ্য বেশি করে সংকট দেখা দেয়। যা মানুষকে আরও সমস্যায় নিপতিত করে।
এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত। রমজান মাসে সাধারণ নিয়মে দ্রব্যাদি খরিদ করলে কারো কোনো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। বাহুল্য প্রস্তুতি বাদ দিয়ে আমাদের মনের দিক দিয়েই তৈরী হতে হবে। যেন মূল সাধনায় আমরা উত্তীর্ণ হতে পারি। শাবান মাসকে গুরুত্ব দেয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ হলো -এ মাসে বান্দার সারা বৎসরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বৎসরের জন্য বান্দার হায়াত মউত, রিযিক দৌলত ইত্যাদির নতুন বাজেট দেয়া হয়।
মানুষ বাদশাহের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিজেকে কতো সুন্দর করে প্রস্তুত করে। তদ্রƒপ গোটা এক বৎসরের আমলানামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। তাই এ মাসে আমাদের আমল আখলাক যেন সুন্দর হয় রাসূলুল্লাহ (সা.) সে দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত উসামা বিন যায়েদ (রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নবীজীকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনাকে শাবান মাসে অন্যান্য মাস অপেক্ষা বেশি নফল রোজা রাখতে দেখি।
শাবান মাসের বড় ফযিলত হলো এ মাসে শবে বরাতের মতো একটি নেয়ামত রয়েছে। ১৪ শাবান দিবাগত রাতই এই মহিমান্বিত রজনী। সারারাত ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে পরের দিন রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে হাদীস শরীফে। এটাও মাহে রমজানের প্রস্তুতি। হযরত আলী (রা থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা বলেন- যখন শাবান মাসের মধ্যবর্তী তথা ১৫ তারিখের রাত আসে তখন তোমরা (ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থেকে) রাত্রি জাগরণ কর এবং দিনের বেলা রোজা রাখ।
কেননা ওই রাত আরম্ভ হওয়া মাত্রই আল্লাহর রহমত বিশ্ববাসীর অতি নিকটবর্তী এসে যায় বিশ্ববাসী খুব সহজেই তা আহরণ করতে পারে। সূর্যাস্তের পরক্ষণেই আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা আসতে থাকে- কে আছে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কে আছ আমার কাছে রিযিক চাইবে? আমি তাকে রিযিক দিব। কে আছ রোগে শোকে, বালা মসিবতে পতিত? আমি তাকে মুক্তি দিব ও শান্তি দিব। এভাবে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ এক-একটা অভাবের কথা উল্লেখ করে ঘোষণা দিতে থাকবেন।
(ইবনে মাজাহ) পরিশেষে একটি কথা যা না বললেই নয়। রোজার এখনও প্রায় একমাস বাকি, কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা ইতিমধ্যে রোজার প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করেছেন। তারা প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। রোজার কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে আবার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম বাড়িয়ে দিবেন। দু:খজনক হলেও সত্য যে, এটা আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের এক ধরনের অপকৌশল।
যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা এ কথা বুঝেন না যে, রমজান মাসে তাদের বিক্রি বেশি হবে এবং মুনাফাও তারা বেশি পাবেন। খামোখা মানুষকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? সত্যিকারে জ্ঞান ও মানবতার দরদ থাকলে তারা এহেন জঘন্য কাজ কখনো করতেন না।
(মূল লেখা: মুফতী মীযানুর রহমান রায়হান)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
ব্লগার ভাইদের কাছে অনুরোধ - আপনাদের ব্লগিং সিডিউল রোজার জন্য পরিবর্তন করুন। কোনো ভাবেই যেন নামায ক্বাজা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তারাবীহর নামাজও মসজিদে গিয়ে আদায়ের চেষ্টা করবো সবাই, এ নিয়্যত করি।
আমি কিছু ভুল বললে আল্লাহ ক্ষমা করুন। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।