আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহিত্যে দেশভাগ : ইনডিয়া ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৬০ (২)

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

দেশভাগের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ডকুমেন্টারি ধাচের সাহিত্যও চোখে পড়ে না। সবচেয়ে বড় কথা যা রচিত হয়েছে তার কোনোটাই বৃহত্তর পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে পারেনি। আইকন হয়ে ওঠেনি। অথচ হিন্দি ও উর্দু সাহিত্যে অনায়াসেই সেটা হয়েছে।

ওই সময়ে ভাষাগুলোর প্রধান সাহিত্যিকরা প্রায় সবাই এ বিষয়ে লিখেছেন। কিন্তু আমাদের প্রধান সাহিত্যিকদের অনেকেই জীবিত থাকা সত্ত্বেও দেশভাগ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। ৪০ ও ৫০-এর দশকের বাংলা সাহিত্যের রমরমা অবস্থায় এটা ভাবা একটু কঠিন। যারা দেশভাগ প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের এ প্রতিক্রিয়া থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর মনোভাব অনুমান করে নেয়া চলে। হতে পারে ১৯০৫ থেকে ১৯১১ পর্যন্ত সময়ের ঘটনাপ্রবাহ ও বঙ্গভঙ্গের চড়াই-উতরাই থেকে বাংলাভাষী মানুষ দেশভাগের একটা প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলেছিল।

হয়তো বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠী জানতো তারা একসঙ্গে থাকবে না। কিন্তু যাকে রাতারাতি ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে হবে তা-ও কি জানা ছিল? হয়তো না। পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে পূর্ববাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বড় অংশ শরিক হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিও তাদের ছিল। এলিট মুসলিমরা একে একে কলকাতার পাততাড়ি গুটিয়ে ঢাকা ও করাচিতে আসন গাড়ছিলেন।

কিন্তু বর্ধমান বা মুর্শিদাবাদে যে কৃষক পরিবারটি শত বছর ধরে বাস করছে তার পক্ষে তো বোঝা সম্ভব নয়, এ দেশ থেকে তাকে দূরের নীলফামারী কি নারায়ণগঞ্জে চলে যেতে হবে। যারা ঢাকার বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায়, কলকাতার বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় এসেছিলেন তারা হয়তো জানতেন। কিন্তু যে শ্রমিক কলকাতার কারখানায় কাজ করতো আর যে সেখান থেকে ফিরতে গিয়ে দাঙ্গার শিকার হলো তার পক্ষেও তা আগাম বোঝা সম্ভব নয়। কেন দেশভাগ হলো তা নিয়ে অনেক বিতর্ক, পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত। কিন্তু কেউই হয়তো দ্বিমত পোষণ করেন না যে, এটা এ অঞ্চলে বৃটিশদের প্রত্যক্ষ উপনিবেশের অবসান ঘটিয়েছিল।

ফলে ইনডিয়া ও পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল। হতে পারে সে স্বাধীনতা হিংসা আর রক্তে ধোয়া, তারপরও স্বাধীনতা। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ সে স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করার জন্য প্রস্তুত নয়, এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ ’৪৭-এর পরের অভিজ্ঞতা থেকে এ দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ পাকিস্তান আন্দোলনের স্পিরিট থেকে অনেক দূর সরে গিয়েছিল। তারা নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিল।

’৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু একটা ব্যাপার অনেকেই স্বীকার করতে চান না, ’৪৭-এর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। কারণ ’৪৭ যদি না হতো, তবে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মও হয়তো হতো না। বাংলাদেশ আমাদের জীবন ও সাহিত্যকে অনেক হীনম্মন্যতা থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু ইতিহাসের ধোয়াশা থেকে বের করে আনতে পারেনি আজো।

সফল সাহিত্যের জন্য যেমন দরকার প্রণোদনা তেমনি দরকার স্বচ্ছ অবস্থান। ইতিহাসের ভেতর ব্যক্তির স্পষ্ট অবস্থান ছাড়া সাহিত্যে তার প্রকাশ ঘটা অসম্ভব। লেখকের ইতিহাস বোধের পরিচ্ছন্নতা ছাড়া লেখার ভেতরকার ইতিহাস শুধু ঘটনা বর্ণনা ছাড়া আর কোনো তাৎপর্য বহন করতে পারে না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।