আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহসী ছেলে

মনটা ভীষণ খারাপ রিফাতের। বিকেলে আজ সে খেলছে না। বন্ধু আকীবকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। এগলি ওগলি ঘুরছে মনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারছে না।

গত রাতে রিফাতের পাশের বাসার মাহমুদ ভাইয়াকে অফিস থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আন্টি বলেছেন, ভাইয়া নাকি পত্রিকায় কীসব সাহসের সঙ্গে ছেপেছেন। তাই পুলিশ তার ওপর অমন ক্ষেপেছে। মাহমুদ ভাইয়ার সঙ্গে রিফাতের অন্তরঙ্গতা ছিলো। এজন্যই মাহমুদ ভাইয়ার অনুপস্থিতিতে ওর এতোটা খারাপ লাগছে।

অবশ্য ভাইয়ার সাহসিকতার কথা শুনে একটি ঘটনা ওর বারবার মনে পড়ছে। কারও কাছে বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বলবে কাকে? আকীবকে বিকেলে শোনাবে; এই সিদ্ধান্তটা ওর আগে থেকেই ছিলো। বিকেলে আকবরের সঙ্গে দেখা হতেই রিফাত বললো, শোন্ আকীব! একদিন আমাদের ওপরতলায় পুলিশ এসেছিলো। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।

কেঁদেছিলামও। আমার সেই ভীরুতা দেখে মাহমুদ ভাই বলেছিলেন, ‘পুলিশ দেখে যদি এখনি ভয় পাও, তবে এদেশের জন্য লড়বে কেমন করে? কে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের দাবি আদায় করবে? গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি কে ফোটাবে? মাহমুদ ভাইয়া বলেছিলেন, দেশটা বড়ই কঠিন। ভালোর জন্যই কষ্ট করতে হয়। সত্যের পথে মূল্য দিতে হয়। দুখীকে সুখ দিতেই রক্ত ঝরাতে হয়।

প্রয়োজন পড়ে সাহসের। সাহসী হও, সাহসী। ’ দুই. ‘অ্যাই বেয়াদব পোলারা’—এদিকে এসো। ’ ওদের পেছন থেকে আওয়াজটা আসে। উফ! কী অভদ্র আচরণ—ওরা ভাবে।

চেয়ে দেখে ডাস্টবিনের পাশে ক’জন লোক বসা। গায়ে ময়লা কাপড়। চুল উস্কখুস্ক। চেহারা বিদঘুটে নিজেদের আড়াল করে তারা কী যেন করছে। ‘আমরা এখানে আছি, এটা কাউকে বলিব না তো?’—একজনের ক্ষিপ্ত গলা।

ওরা কিছু বোঝে না। কিছুই আঁচ করতে পারে না। কিরে কথা কস্ না ক্যান? মাইর দিমু কইলাম’। লোকটি ফের বলে ওঠে। আকীব বুদ্ধি করে তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় না, বলবো না।

আরেকজনের কর্কশ গলা। ‘সাবধান! পুলিশ জানলে কিন্তু মজা বোঝামু। ’। আর আইবিনা এদিকে। যা, ভাগ্’।

ওরা চলে আসে। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। রিফাত বলে, আচ্ছা, লোকগুলো ওখানে লুকিয়ে লুকিয়ে কী করছে। নিশ্চয় ভালো কিছু নয়। নইলে পুলিশকে বলতে না করল ক্যান্? আকীব বলে, আমারও তাই মনে হয়।

রিফাত! তুই কি বলতে পারবি। এখানে কোন প্রবাদটা খাটানো যাবে? কোন্খানে? জিজ্ঞাসা রিফাতের। এই যে, আমরা তো ওদের দেখিইনি, তবু ওরা না বলার জন্য আমাদের কেন ভয় দেখালো? কেনইবা শাসালো আমাদের? রিফাত এবার বলে, কেন? প্রবাদটাতো তুইও জানিস্— ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’। চল বাসায় ফিরে যাই। তাড়া দেয় আকীব।

সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে। রিফাত রেগে বলে, কেন রে! ওদের ব্যাপারটা পুলিশকে না জানিয়েই চলে যাবি? ‘ওরে বাবা, তোর তো দেখছি অনেক সাহস। ওরা কী কী বলে দিয়েছে। সব কি ভুলে গেছিস। ’ কথাগুলো আকীব বলে, শোনে রিফাত এবার সত্যি চটে যায়।

খুব রাগ নিয়ে বলে আচ্ছা, মাহমুদ ভাইয়ার ঘটনাটাকে তুই কি শুধুই গল্প ভেবেছিস? তার কথা থেকে কী শিক্ষার কিছুই নেই? মাহমুদ ভাইয়া পত্রিকাতে সব সত্য বুক উঁচিয়ে বলেছেন। কাউকে ভয় পাননি। পুলিশকেও না। আর আমরা ছিঁচকে অপরাধীদের কেন ভয় পেতে যাব? তুই ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারিস। তবে আমি আজ সাহসী হবো।

ঠিক মাহমুদ ভাইয়ার মতো। যেন জেলে থেকেও ভাইয়ার আত্মাটা শান্তি পায়। ওই অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়া চাই। আমি থানায় যাচ্ছি। ’—বলে হন হন করে হাঁটতে আরাম্ভ করে রিফাত।

পেছনে আকীবও ...। তিন. রিফাতের দেয়া তথ্য অনুযায়ী থানার ওসি গভীর রাতে ওদের ঝুপড়িতে হানা দেয়। বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। ওই বদমাশরাও গ্রেফতার হয়। পরদিন পত্রিকাতে এটি লিড নিউজ হয়।

তথ্য প্রদানকারী হিসেবে ওদের ছবি ছাপা হয়। সরকার ওদের পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ প্রাঙ্গণ পুরস্কার প্রদানের স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয়। চার. ক’দিন বাদেই সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটির আগমন ঘটে। ২৬ আগস্ট, ২০১০।

পূর্ব ঘোষণা মতে নির্দিষ্ট সময়ে মাঠটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠের কানায় কানায় মানুষ ভরে যায়। সবার আশা একটাই, একনজর ছেলে দুটিকে দেখা। নিজেদের গর্বিত, ধন্য করা। এর মধ্যেই মন্ত্রী স্টেজে আসেন।

ছেলে দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন। সময়ের সংক্ষিপ্ত ব্যবধানে উপস্থিত হয় সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। পুরস্কার নেয়ার পালা। সঞ্চালক ছেলে দু’জনের নাম ঘোষণা করেন। যেই না তারা পুরস্কার নিতে যাবে, তখনি সাংবাদিকরা তাদের অনুভূতি জানতে চান, মিডিয়াতে প্রচার করবেন।

প্রথমেই রিফাত মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার কাছে দোয়া চায়, যেন ও মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে। তার মুক্তির জন্যও দোয়া চায় সে। পরে আকীব রিফাতের অনুভূতিটাই আবার রিপিট করে। নতুন করে সে কিছু বলে না। দ্রষ্টব্য : আমার লেখা এই শিশুতোষ গল্পটি মাহমুদুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় আমার দেশ পত্রিকার ছোটোদের পাতা এক্কাদোক্কা-তে ছাপা হয়।

View this link এটি ২০১০ সালের কথা। লেখাটি মাহমুদুর রহমান-এর এই দুঃসময়ে আবারো প্রকাশ করা হলো। তবে এবার কাগজে নয়, ভার্চুয়াল জগতে।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।