আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যরাতের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাহীনতা : ১৯৪৭

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

আগস্টের ছয় তারিখে ব্লগে একটা পোস্ট দিছিলাম : বাংলাদেশ কি ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছিল? শিরোনামে। সাড়া যা পাওয়া গেছে তা মন্দ না। কিন্তু প্রতিক্রিয়া যতোটা তীব্র হবে ভেবেছিলাম তাতোটা হয়নি দেখে খুব অবাক হয়েছি। তীব্র প্রতিক্রিয়া না হলেও যা হয়েছে তাতে সহজেই প্রতিক্রিয়াগুলোকে দুই ভাগ করে ফেলা চলে।

কেউ কেউ মনে করেন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গেই ১৪ আগস্ট স্বাধীন হয়েছিল। আর সেটা পালন করতে কোনো অসুবিধা নাই। ব্যাপারটা এত সহজ নয়, কারণ ইতিহাসের বহ প্রশ্নের সুরাহা না হলে সেটা সম্ভব নয়। জাতি হিসেবে সে সবের মুখোমুখি হওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের আছে বলে মনে হয় না। দ্বিতীয় ভাগে পড়েন অনেকে।

তাদের মতে, বাংলাদেশ ১৯৪৭-এ স্বাধীন হয়নি, শুধু হাত বদল হয়ে ব্রিটিশদের হাত থেকে নতুন শাসকদের হাতে এসে পড়েছে। ফলে তখন বাংলাদেশের জন্ম হয় নাই, স্বাধীনতাও বাংলাদেশ পায় নাই। ফলে সেটা পালন করার প্রশ্ন ওঠে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। এবং সেটাই আমরা মানি এবং পালন করি।

আমিও দ্বিতীয় মতটার সমর্থক। আমাদের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে পোষণ করার মতো স্পর্ধা আমার জন্মায়নি। সে প্রস্তাবও আমি দিতেছি না। কিন্তু এটা মোক্ষম সত্য যে, ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক আছে। হিসাব মতো।

সেখানে ভুল হওয়ার কথা নয়। সেটা ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, ১৫ আগস্ট নয়। এই সহজ হিসাবটা বুঝতে আমার মেলা দিন লেগেছে। ১৯৯৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতার ৫০ বছর পালন করে। তার বছর খানেক পর ইতিহাস বিষয়ে পারদর্শী এক সাধারণ ব্যক্তির সঙ্গে আমার আলাপ হয়।

তিনি আমাকে বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট আমরা ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম আর সেটা আমাদের পালন করা উচিত। তৎক্ষণাত মনে হয়েছিল লোকটা পাকিস্তানপন্থী। যে স্বাধীনতা দেশভাগের মতো করুণ দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছে তা পালন করার কী থাকতে পারে? দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমার আগের পোস্টে যারা মন্তব্য করেছেন তারা দেশভাগের মতো বিষয়ের কথা কেউই উল্লেখ করেননি, এ ব্যাপারটিও আমাকে ভীষণ অবাক করেছে। ভারত ও পাকিস্তান ১৪ ও ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা পেয়েছে বটে। কিন্তু এর বিনিময়ে দেশ তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

কোটি কোটি মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে, মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ। সেদিন যারা জীবিত ছিলেন তাদের স্মৃতিতে সেই দৃশ্যগুলো ঘা হয়ে টিকে আছে আজও। কিন্তু আমরা ব্যাপারটির কথা উল্লেখ করতেই ভুলে যাই। আমাদের শত দেশপ্রেম আর মুক্তবুদ্ধি সত্ত্বেও ভুলে যাই। তারিখ মনে নেই, সেটাও সম্ভবত ১৯৯৮/১৯৯৯ সালের কথা।

কলকাতার প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক দেবেশ রায় ঢাকা এসেছিলেন সেলিম আল দীনের পঞ্চাশতম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। তাকে দূর থেকে বহুদিন যাবত শ্রদ্ধা করে এসেছি। বাংলা ভাষায় তিনি উপন্যাস চিন্তার পথিকৃৎ। আর তার উপন্যাস আমার মতো অনেকের কাছে অবশ্যপাঠ্য। বাংলা উপন্যাস ফর্ম ও কনটেন্টের দিক থেকে সর্বশেষ কোথায় গিয়ে ঠেকলো তা জানতে দেবেশ রায় পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্ত দেখি না।

তিনি একটি সেমিনারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বলতে গিয়ে আমাকে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ করে দিলেন। বললেন, বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের প্রথম ও একমাত্র জাতিরাষ্ট্র। কথাটায় তীব্রটা আছে, ঝাঁঝ আছে। কিন্তু তারও চেয়ে বেশি যা আছে তা হলো চিন্তা। গভীর চিন্তা, ইতিহাস বোধ ও অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কথাটা বলেছিলেন।

এর আগে এরকম কথা আমি শুনি নাই। (ক্রমশ আগাইবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।