আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পড়বি পড় মালির ঘাড়ে ?

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

তবে যাই বলিস চুলটাই হচ্ছে কিন্তু সব। শুনিস নি বিয়ের বাজারে একটা কথা প্রচলিত আছে- পাত্রীর দাবী একটাই, বরের মাথায় চুল থাকা চাই। গদাম করে টেবিলে একটা কিল বসিয়ে দাবী করলো আফতাব। যার জন্য আমাদের এই চুল বিষয়ক মত বিনিময় সভা সেই সুমন কিন্তু কোন আলোচনায় নেই।

সে তখনও বেঞ্জিনের যৌগ গঠনের রহস্য উদঘাটনে যোগ তপস্যায় মানে একনিষ্ঠ ধ্যানে মগ্ন। আমি আর আফতাব সমানে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছি আর মাঝে মাঝে সিঙ্গারায় কামড় বসাচ্ছি। আমি আফতাবের কথায় দ্রুত রিফ্লেক্স করি। চুলই সব হবে কেন? আবুল হায়াতকে দেখ না। কেমন তেল চকচকে মাথায় দিব্যি খেল দেখিয়ে বেড়াচ্ছে।

এখনো চাইলে ডজনখানেক সুন্দরীকে খাবি খাওয়াতে পারে। আরে বন্ধু, ওটা হচ্ছে ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম কোন উদাহরণ হতে পারে না। তাছাড়া সুমনের বয়েসে আবুল হায়াতের মাথা ভর্তি চুল ছিলো। আর সুমন তো কদিন বাদেই আবুল হায়াত হতে চলেছে।

তাই তড়িত ব্যবস্থা না নিলে ওকে চিরকুমার হয়ে থাকতে হবে। এবার আমি একটু নড়েচড়ে বসি। তড়িত ব্যবস্থা নেয়া মানে কি বোঝাতে চাচ্ছিস? ওকে কি এখনই বিয়ে করতে বলছিস? আরে ধুর! তোর আই,কিউ দেখছি একটা মাঝারি সাইজের পুঁটি মাছের চেয়েও কম। ও এখনই বিয়ে করবে কি? সেকেন্ড ইয়ারে পড়া ছেলে বিয়ে করে বউকে খাওয়াবে কি? তাহলে? তড়িত ব্যবস্থাটা কি? তড়িত ব্যবস্থা হলো, সুমনকে ভবিষ্যতের জন্য এখনই কোন ললনাকে পটাতে হবে। ভালোবাসাই ওর সমস্যার একমাত্র সমাধান।

কারণ ভালোবাসার গিট্টু শক্ত হলে তখন তেল চকচকে টাকই প্রেমিকার কাছে ক্রিস্টাল আয়না মনে হবে। হুম। তা ভালো বলেছিস বটে। তবুও যেসব টেকো লোকরা প্রেম করে না তাদের বুঝি আর বিয়ে হয় না। আচ্ছা আংকেল মানে তোর বাবারও কি এই সমস্যা ছিলো? উনার স্টেডিয়াম দেখে প্রশ্নটা করলাম।

কিছু মনে করিস না। আরে না। বাবার তো বিয়ের সময় বাবড়ি দোলানো চুল ছিলো। অনেকটা নজরুলের মতো আর কি। আর শুনেছি মা নাকি ওই চুলের জন্যই বাবাকে পছন্দ করেছিলেন।

তবে শুধু বিয়ে ব্যাপার না। টেকো হলে প্রচুর অসুবিধা আছে। আমাদের বেলা সেই সময় অসতে আরো বছর বিশেক আছে কিন্তু সুমনের বেলায় বড়জোড় দুই বছর। অসুবিধা কি? আমার তো মনে হয় সুবিধাই বেশি। এই যেমন ধর চুল আচড়ানোর ঝামেলা নেই, ফি সপ্তাহ শ্যাম্পু করার দরকার নেই, মাসে মাসে চুল কাটানোর ঝামেলা নেই।

অনেক অসুবিধা আছে বন্ধু। দাঁড়া প্র্যাকটিক্যালি প্রুফ করে দেখাই। বলেই সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্থাত, আমরা যে তিনতলা রেস্টুরেন্ট বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম সেটার আমাদের টেবিলের লাগোয় জানালাটায়। ঠিক সেসময় ওপাড় থেকে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক টেকো ভদ্রলোক।

আফতাব সুমনকে খোঁচা দিয়ে বলে- এই লস্টাইন (আইনস্টাইন থেকে), ওই যে লোকটা রাস্তা পার হয়ে আসছে। কত সময় আগে এখান থেকে একটা বস্তু ছেড়ে দিলে তার মাথায় হিট করতে সক্ষম হবে বলে তোর ধারণা। সুমন ক্যালকুলেট করতে লাগলো। ক্যালকুলেট শেষ করতে করতে লোকটা প্রায় কাছে চলে এলে সুমন উত্তর দেয়, পাঁচ সেকেন্ড। সাত সেকেন্ড সময় হাতে থাকার কারণে আফতাব আর কোন কিছু হাতে নেয়ার সময় পেলো না।

কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি প্রুফ করার জেহাদী জোশে টার্গেট বরাবর ছুড়ে দিলো থুথু মিশাইল। মিশাইল টার্গেট হিট করলেই আমরা জানালার কাছ থেকে সরে এলাম। এবার বিজয়ীর হাসি নিয়ে সে বললো- এবার বুঝলি হাদারাম। মাথায় চুল থাকলে অনেক প্রাকৃতিক ঝড়-ঝাপটার প্রাথমিক ধকল সেই সামলাতো। তা না হয় বুঝলাম।

কিন্তু এটা প্রাকৃতিক হলো কিভাবে? তুই তো ইচ্ছাকৃত ভাবেই এটা করেছিস। এই হলো তোর মাঝারি সাইজের পুঁটি মাছের বুদ্ধি। মানুষ কি প্রকৃতির বাইরের কিছু নাকি! সে যাক এখন আরেকটা প্রাকৃতিক কাজ শুরু করতে হবে। বলেই সে বেয়ারাকে দেয়াশলাইয়ের জন্য হাঁক দেয়। সিগারেট ধরিয়ে আরাম করে দু'টান দিতে না দিতেই পেছন থেকে এক ভদ্রলোক বললেন- লাইটারটা একটু দিবেন? আমি লাফ দিয়ে উঠি।

সাথে আফতাব ও সুমন। আংকেল, স্লামালেকুম। কেমন আছেন? কিছু কিনতে এসেছেন বুঝি? ওয়াইলাইকুম আস্সালাম। ভালো আছি বাবা, আজ তো ছুটির দিন তাই বাজার করতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু উপর থেকে কে যেন মাথায় থুথু ফেললো।

তাকিয়ে দেখি শুধু এই রেস্টুরেন্টটাই আছে যেটার জানলা খোলা। বাকি সব শোরুম। তাই সেই হারামজাদাটাকে খুঁজতে এলাম। বুঝতে পারলাম- আংকেল যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন তখন গাড়ির ভিড়ে আমরা তার চেহারা খেয়াল করিনি। আর কাছাকাছি চলে এলেও তখন খাড়া উপর থেকে দেখার কারণে এরকম দুর্ঘটনাটা ঘটে গেলো।

আফতাব ততক্ষণে সিগারেট ফেলে দিয়ে ঘামতে শুরু করেছে। আংকেল এবার ওর দিকে চেয়ে বললেন- তা খুব সিগারেট টানা চলছে বুঝি। কতদিন হলো এই কাজ শুরু করেছো? তোমরাও বুঝি বার্ডস অফ দ্যা সেইম ফিদার? আফতাব তোতলাতে তোতলাতে বললো- না আব্বা। আমরা তো প্রতিদিন সিগারেট খায় না। অকেশনালি দু'একটা খাই।

ও আচ্ছা। তা আজ কোন অকেশানে খাচ্ছো। হলি ডে সেলিব্রেশন নাকি? আফতাব একটু চিন্তা করে। তারপর ধুম করে বলে বসে- বাবা আজকে হিন্দুদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা তো, সেজন্য সেলিব্রেট করছিলাম। তাই না সুমন? আমরা প্রচন্ড কষ্টে হাসি আটকে রাখি, চুপ করে থাকি।

আংকেল বলেন- আচ্ছা, ঠিক আছে। বাসায় এসো। তখন সবাই মিলে না হয় আরেকবার হিন্দুদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা সেলিব্রেট করা যাবে। তোমরাও এসো কিন্তু বাবা। আংকেল বিদায় নিলে আমি আর সুমন ঠা ঠা করে হাসতে থাকি।

তার প্রতিটা আওয়াজ আফতাবের বুকে হাতুড়ি পেটায়। আমরা যত্ন করে সিঙ্গারাতে কামড় বসাই কিন্তু আফতাবের প্লেটে তারা অচ্ছুত হয়ে পড়ে থাকে। সে আবার সিগারেট জ্বালিয়ে সেলিব্রেট করে হিন্দুদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।