একটা কিনলে একটা ফ্রি।
রাজাদা একদিন সকালবেলাতে এসে হাজির ।
মহানগরে যাবো, সঙ্গে তোকে যেতে হবে । আমিতো কোনোদিন কোলকাতা যাইনি । ভাবছি তোকে সঙ্গে নিয়ে যাবো ।
আমি কোলকাতার রাস্তাঘাট ঠিক চিনিনা ।
কি করতে যাবে - আমি শুধোলাম ।
একটু বেড়াবো, কিছু কেনাকাটা আছে, ডাক্তারও দেখাবো।
তোমার কি অসুখ হয়েছে যে কোলকাতায় যেতে হবে - আমি জিজ্ঞেস করলাম।
তুই বুঝবিনা ।
তোকে যেতে হবে ব্যস - রাজাদার ফরমান ।
কবে যাবে ।
পরশু রাতে যাবো - তোর টিকিটও কেটেছি । তোকে কিচ্ছুটি নিতে হবেনা। তোর কোনো খরচও নেই।
সব আমার খরচ। ঠিক আছে ?
হ্যাঁ ঠিক আছে - আমি বিনে পয়সায় কোলকাতা ঘোরার লোভ সামলাতে পারলামনা ।
কোলকাতায় ক'দিন থাকবে - কোথায় থাকবো আমরা ।
হোটেলে । কাজ হলেই চলে আসবো।
পরশুর রাতের ট্রেন, ব্যাগ গুছিয়ে রাখিস বলে রাজাদা চলে গেলেন।
এবং আমি ভুলে গেলাম ।
যাবার দিন সন্ধ্যেবেলায় রাজাদার ফোন পেয়ে মনে পড়ল । রাজাদার সঙ্গে কোলকাতা যেতে হবে আজই।
তাড়াতাড়ি কোনোরকমে হাতের কাছে যা পেলাম তাই ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে রাজাদার সঙ্গে কোলকাতার ট্রেনে উঠে বসলাম ।
ভোরে কোলকাতায় নামলাম । ষ্টেশনে অতো লোকজন দেখে রাজাদার ভিরমি যাবার জোগাড়। কোনোমতে রাজাদাকে টেনে নিয়ে একটা হোটেলে উঠলাম ।
রাজাদা - পেষ্ট সাবান কিছুই আনিনি আমি, আসলে তাড়াতাড়িতে আনতে ভুলে গেছি - তুমিকি কিছু এনেছো - বাথরুম থেকে আমি জিজ্ঞেস করলাম।
নারে - ওগুলো বাড়ি থেকে বয়ে আনতে হয় নাকি? - ওগুলো এখানেই কিনে নেবো ।
হোটেলেই পাওয়া যায়।
নাওনা রাজাদা - প্লিজ, আমি সকাতর ।
রাজাদা খুব স্মার্ট হয়ে হোটেলের নিচে নেমে গেলেন।
কিছুক্ষণ পড়ে অনেকগুলো সাবান, শ্যাম্পু, পেষ্ট নিয়ে রাজাদা ফিরে এলেন।
আমাকে একটা সাবান, শ্যাম্পু, পেষ্ট দিয়ে বললো - নে খুব সস্তায় পেলাম, একটা কিনলে একটা ফ্রি।
আম তৈরী হয়ে এসে রাজাদাকে বললাম, নাও তুমি তৈরী হয়ে নাও।
ব্রেকফাষ্ট করে আমরা বেড়োলাম। রাজাদা এক ঠিকানা দিয়ে বললো, চল এর কাছে যাবো এ খুব নামকরা ডাক্তার।
গেলাম এবং তারিখ নিলাম।
দুপুরে একটা ভাল হোটেলে রাজাদার পয়সায় খাওয়াদাওয়া সারলাম।
তারপর, বিকেলে হঠাৎ রাজাদার বাই উঠলো - চল গড়িয়া যাই।
গড়িয়া কোলকাতার খুব নামকরা বাজার। ধনী লোকেদের বাড়ির গৃহিনীরা শপিং করতে সন্ধ্যেয় এখানে আসেন। অনেক রাত অব্দি এখানে কেনাকাটা চলে।
তুমি গড়িয়ার নাম জনলে কি করে - আমি অবাক।
যানতি পারি, যানতি পারি - কোলকাতায় আসিনি জন্যে কি গড়িয়া'র নাম জানিনা ?
গড়িয়া বাজারে রাজাদা খুঁজে খুঁজে বেশ কিছু জিনিষ কিনলেন।
বেশীরভাগই একটি নিলে একটি ফ্রি।
রাতে হোটেলে ফিরে স্নান করতে গিয়ে দেখি শ্যাম্পুটার গায়ে দামের জায়গায় একটা আলাদা স্টিকার লাগানো।
রাজাদা তুমি কত দিয়ে নিয়েছিলে ? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
কেনরে ? আশি টাকা ।
শ্যাম্পুটার গায়ে লেখা ছিল চল্লিশ টাকা। আলাদা স্টিকার লাগিয়ে করেছে আশি টাকা । এবং একটি নিলে একটি ফ্রি। দু'টো মিলে আশি টাকা । তুমি সস্তায় পেলে কোথায়?
কি বলিসরে? রাজাদা সব খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে বললেন, তাইতো, ঠকিয়ে দিয়েছেরে।
বিকেলে গড়িয়া বাজার থেকে যতগুলো একটি নিলে একটি ফ্রি নিয়েছে সব প্রায় তাই।
রাজাদা অনেকক্ষণ কোনো কথাই বললেন না। রাতের খাবারও খেলেননা।
সকালে উঠে বললেন আজ আর কোথাও যাবোনারে ? শুধু একবার স্টেশানে যাবো। ফেরার টিকিট কাটতে হবে ।
রাজাদা ফিরে এলেন।
বিনে পয়সায় কোলকাতা ঘোরাটা আমার মাঠে মারা গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।