খাঁচার পাখি উড়ে গেলে শুন্য হবে খাঁচা
মনের পাখি মনে থাকে, যায় না তারে দেখা
সোনাদানা বাড়ি গাড়ী, দামি গহনা
সব কিছু রবে পড়ে সঙ্গে কিছু যাবেনা
কবির ছন্দবদ্ধ লাইন গুলাতে জীবনের এক চরম দার্শনিক সত্য প্রকাশ পেয়েছে। এক সময় আমরা ছিলাম না, এখন আছি আবার কিছুদিন পরে থাকবনা। দুনিয়াটা আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। যে যা কামাই করব সেটি নিয়েই আমাদের পরকালের পথ ধরতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ পাক বলেন
আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (Adh-Dhaariyat: 56)
পরকালে আমাদের সংগী হবে আমল । এবং আমলকে মিযানে পরিমাপ করা হবে। মিযান অর্থ দাড়িপাল্লা। আল্লাহ পাক বলেন
যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, (Al-Muminoon: 102)
যদি নেক আমল বেশি হয় তবে সেটাই হবে সাফল্য।
আল্লাহ পাক আল কুরআন মাজীদে বলেন
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় নির্ঝরিণীসমূহ। এটাই মহাসাফল্য। (Al-Burooj: 11) “
যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। (Al-Hadid: 12)
আর যদি বদ আমল বেশি হয় তবে সেটা হবে আমাদের দুর্গতির কারন।
বদ আমলের কারনে মুসলিম অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। আর কাফির রা চিরকাল জাহান্নামে পতিত থাকবে। কারন তারা আল্লাহের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত না।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা কাহ্ফ-এর ৪৯ নং আয়াতে বলেন-
আর যখন আমল নামা সম্মুখে রেখে দেয়া হবে, তখন তোমরা দেখবে অপরাধীগণ ভীত সম্ভ্রস্ত হয়ে উঠেছে। আর বলছে, হায়রে আমাদের দুর্ভাগ্য! এটা কেমন বই, আমাদের ছোট বড় এমন কোন কাজ বাদ যায়নি (যা এই বইতে) লেখা হয়নি।
তারা যে যা কিছু করেছিল তা সমস্তই নিজের সামনে (লেখা ও ছবিসহ) উপস্থিত দেখতে পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি কোন জুলুম করবেন না। (সূরা কাহ্ফ)
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে-
আজ প্রত্যেকটি প্রাণীকেই তার (পৃথিবীতে জীবিত থাকতে) উপার্জনের প্রতিফল দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি জুলুম করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত দ্রুত হিসাব গ্রহণ করবেন।
(আল-মু’মিন- ১৭)
নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে চিরকাল থাকবে। (Az-Zukhruf: 74)
এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। (Maryam: 86)
আমরা প্রতি নিয়ত আল্লাহপাকের অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে ডুবে আছি। মাছ যেমন সমুদ্রের মধ্যে ডুবে থেকে বুঝতে পারেনা যে সে কত আরামে আছে, ডাঙ্গায় তুললে মাছ যেমন তরপাতে থাকে তেমনি আমরাও আল্লাহ পাকের অসংখ্য নেয়ামতের মাঝে ডুবে থেকে বুঝতে পারিনা যে কত নেয়ামতের মাঝে আমরা ডুবে আছি। যেমন সূর্য এমন এক আলোর উৎস যে সবাইকে সমানভাবে আলো দেয়।
কাফির কে যেমন আলো দেয় তেমনি মুসলিম কেও আলো দেয়, ধনীকে যেমনি আলো দেয় তেমনি গরীবকেও তেমনি আলো দেয়। আর যেই মহান সত্তা এই সূর্য কে সৃষ্টি করেছেন তিনি কত বড় দাতা তা আমরা একটু ভাবলেই বুঝতে পারি। ঈমানদার কে আল্লাহ পাক যেমনি ফল, ফসল, অক্সিজেন , আলো বাতাসের মত নেয়ামত দিচ্ছেন তেমনি কাফিরদের কেও দিচ্ছেন।
তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যে বীজ তোমরা বপন করে থাকো তা থেকে ফসল উৎপন্ন তোমরা করো, না আমি? আমি চাইলে এসব ফসলকে দানাবিহীন ভূষি বানিয়ে দিতে পানি৷ তখন তোমরা নানা রকমের কথা বলতে থাকবে৷ সুরা ওয়াকেয়া ৬৩-৬৫
যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
(An-Nahl: 18)
এবং এইসকল নেয়ামত সম্পর্কে আল্লাহ পাক আমাদের জিজ্ঞাসা করবেন।
এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (At-Takaathur: 8)
আমরা এতসব নেয়ামত ভোগ করেও ভুলে যাচ্ছি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য যা আল্লাহ পাক বলেছেন। আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি দুনিয়াবি সব কাজ নিয়ে। আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর পিছনে ছুটছি,টাকা-পয়সা,ব্যাংক-ব্যালেন্স জমানোর প্রতিযোগীতা করছি হারাম হালালের তোয়াক্কা না করে।
আল্লাহপাক এ সম্পর্কে বলেন
Rivalry in worldly increase distracteth you . Until ye come to the graves(সুরা তাকাসুর ১-২)
কবি আইনুদ্দিন আল আজাদ বলেন
ওরে মানুষ হইছ বেহুশ দুনিয়ার পিছে
কি জবাব দিবিরে তুই আল্লাহরি কাছে
হালাল হারাম না মানিয়া কত টাকা করছ কামাই
এত টাকা রাখবা কোথায় কাফনের তো পকেট নাই/
আমরা ভুলে যাচ্ছি যে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে। তখন আমরা কি জবাব দিব? তাই এখনো সময় আছে, আল্লাহর কাছে ফিরে যাবার আগেই পরকালের উপার্জন করে নেয়ার। দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী, আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এই স্বল্প সময়ের জীবনের গতিপথে যেন আমরা ভুল পথে হারিয়ে না যাই – এই প্রত্যাশায় – মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে আমাদের সকলের হেদায়েত কামনা করছি। আমিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।