আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনাদের পাড়ার রাজাদা (কাহিনী- ১৭)



স্বপনদা তখন সার্ভিসে কমিশন্ড অফিসার । স্বপনদার বিয়ে হয়েছে সবে । বৌদি পূববাংলার (তখন বাংলাদেশ হয়নি)মেয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম. এ করেছিলেন। বিদুষী এবং সুন্দরী।

কিন্তু আকর্ষণীয় ব্যক্তিক্ত্ব ছিলেন বৌদির বাবা,স্বপনদার শ্বশুর মশায়। ঢাকা শহরে তার বিরাট ব্যবসা ছিল। তিনি মাঝে মাঝে আসতেন । তাঁর বাচনভঙ্গিতে আমরা খুব আকৃষ্ট হতাম। তিনি ছিলেন বিরাট শিকারী ।

তিনি বলতেন - তাঁর মতো অমন বড় শিকারী তখন নাকি ঢাকা শহরে বিরল ছিল। অবশ্য মৎস শিকারী। সেবার তিনি এসেছেন। সঙ্গে এনেছেন একটি জাপানি বর্শি - সে বর্শির অনেক কায়দা, সেন্সর লাগানো আছে । অটো হুইল ।

নানান রকম তৈরী করা টোপ । আলাদা কোনো টোপ দিতে হয়না । আশেপাশে মাছ এলে সে বর্শিতে উঠবেই উঠবে। তিনি সেটা তাঁর জামাইকে গিফ্ট করলেন । তিনি ভালো চারও বানাতে জানতেন।

সে চার পুকুরে ফেললে মাছের মাথা নাকি ঘুরে যায়। মাছের কোনো দিশা থাকেনা । স্বপনদা সে বর্শি পেয়ে আনন্দে গদ গদ । আমাকে একদিন বললেন মাছ মারতে যাবি ? আমি বললাম তোমার শ্বশুর মশায় কি যাবেন ? না না তিনি যাবেন না । আমাকে চার বানানো শিখিয়ে দেবেন বলেছেন ।

আমি খুব একটা আগ্রহ দেখালাম না । আবার একদিন স্বপনদা বললেন, চলনা,মাছ মারতে যাই । শ্বশুর মশায় থাকতে থাকতে চার বানানোটা শিখে নিতে হবে । আমি বললাম - দেখি, যাবোখন । পুকুর ঠিক করি, তোমাকে জানাবো।

আমি সরে পড়লাম । রাজাদা একদিন সকালে এসে বললো চল, তাড়াতাড়ি কর, মাছ মারতে যাবো । স্বপনের বর্শি নিয়ে স্বপন যাবে বলেছে । স্বপনের শ্বশুর মশায় চার বানিয়ে দেবেন । আমি বললাম, তুমিতো মাছ মারতেই জানোনা, তুমি মাছ মারতে যাবে? - আমি একটু অবাকই হলাম।

কি করবো বল, স্বপনটা রোজ ঘ্যান ঘ্যান করছে । নে তাড়াতারি কর - রাজাদা তাড়া দেয়। আমরা রাজাদার নেতৃত্বে তিনজন মিলে একটা বড় পুকুরে মাছ মারতে গেলাম। স্বপনদার শ্বশুর মশাই চার বানিয়ে দিয়েছিলেন । পুকুরে গিয়ে স্বপনদা একটা জায়গা দেখে চার ফেললেন।

রাজাদা বললেন, চারতো সবে ফেলা হলো, মাছ আসতে দেরী আছে, চল একটু ঘুরে আসি। আমরা গ্রামটা ঘুরতে গেলাম । একটু পরে এসে ঠিক কোন জায়গায় চার ফেলা হয়েছিল তা আর খুঁজে পেলামনা। রাজাদা বললো আমার ঠিক মনে আছে, ওই শাপলা ফুল গুলোর পাশে তুই চার ফেলেছিলি, ওখানেই বর্শি ফেল। স্বপনদা ঠিক দুপুর নাগাদ বর্শি ফেললো ।

তারপর যায় যায়, মানে সময় যায়, মাছ আর ধরা পড়েনা । ধৈর্য্য আর মানেনা । স্বপনদার শ্বশুর মশায়ের তৈরী করা চারে মাছেরা দিশা হারিয়ে ফেলেছে- আমি বললাম । রাজাদা বললো, গান্ধীজি বলেছিলেন, কোনো কাজে সফল হতে হলে চরম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়- জানিস তো? তা জানিনা - তবে গান্ধীজি মাছ ধরছেন - এরকম একটা ছবি দেখেছিলাম আমি। বিকেল ।

তখনো স্বপনদা কোনো মাছই পায়নি । একটা লোক এসে আমাদের থেকে একটু দুরে ছিপ ফেলে বসলো । শাপলা ফুলের পাশেই। বসার সঙ্গে সঙ্গেই একটা চার থেকে পাঁচ কিলো সাইজের মাছ ধরে নিলো। আমরা হতবাক ।

ঠিক তার পর পরই আরেকটা, এটা প্রায় সাত-আট কিলো। স্বপনদার মুখটা দেখবার মতো। লোকটা দুটো মাছ মেরেই উঠে গেল। আমরা খেয়াল করিনি তেমনভাবে। ঠিক সন্ধে নাগাদ স্বপনদা উঠল - নাঃ আর লাভ নেই, চল যাই এবার আমরা।

শ্বশুর মশাইর চারটা কোনো কাজ দিলনা - স্বপনদার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সব গুছিয়ে নেবার পর দেখি রাজাদা নেই। খোঁজ খোঁজ, রাজাদাকে পাওয়া গেলনা। আমি বললাম, তুমি মাছ পাওনি তাই রাজাদা বোধহয় চলে গেছেন। চলো যাই আমরা।

আমরা চলে এলাম। স্বপনদার বাড়ীতে আসা মাত্রই হৈ চৈ ব্যাপার। স্বপনদার শ্বশুর মশাইর গলা পাচ্ছিলাম। কি বেয়াই কইছিলাম না, আমার চারে মাছ দিশিহারা হইয়া যায়। মাছে টোপ গিলবোই গিলবো ।

যাইবো কই । আর ছিপটা - হুঃ হুঃ জাপানি ছিপ। দুই-দুইডা - এক্কেবারে পাঁকাল । বেয়াই বঠি আনেন। স্বপনদা হতবাক - মুখে কোনো কথাই নেই ।

বৌদি বললেন - তোমাদের স্বপনদা দুটোই ধরেছেন ? বাবার বানানো চারতো-মাছ যাবে কোথায়? তোমাদের স্বপনদাও ভাল মাছ ধরেন তাইনা? বড় বড় দুটো মাছ- বলো? বৌদিকে খুব হাসি খুশি দেখাচ্ছিল। আমি রাজাদাকে খুঁজে বের করলাম। রাজাদা বললো, স্বপনের শ্বশুর মশাই সত্যিই ভালো চার বানান। লোকটা স্বপনের ফেলা চারের জায়গায় বসেছিলরে। আমি বললাম - লোকটার সঙ্গে কততে রফা করলে ? দুশো টাকা ।

সবচেয়ে বড় কথা, স্বপনের শ্বশুর মশাইর মান রেখেছি। আমি মনে মনে বললাম - রাজাদা তুমি গ্রেট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.