আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাবিনা ইয়াসমিনের জন্য ভালবাসা ও শুভকামনা

তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

তখন পড়ি সম্ভবত ক্লাস সিক্সে। আমাদের স্কুলে (ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ) "মাদককে না বলুন" বিষয়ক সম্মেলন হবে সে নিয়ে আমাদের উৎসাহের সীমা-পরিসীমা নেই। উৎসাহের মূল কারন স্যার-ম্যাডাম মারফত আমরা খবর পেয়েছি অনেক তারকার সমাগম হবে সেখানে। গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন আসবেন, আসবেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সেই সাথে আরও অনেকেই। তখনও আমাদের মূলধারার চলচিত্র পঁচে যায়নি, তাই সবার আগ্রহটা ছিল আসলে এই দু'জনকে নিয়েই।

সম্মেলন শেষেই ইলিয়াস কাঞ্চন তুমুল বেগে স্টেজ থেকে নেমে গেলেন। ক'জন অতিউৎসাহী ছুটে গেল অটোগ্রাফের জন্য, সবাইকেই বিফল হতে হলো। তিনি খুব ভদ্র ভাবেই বললেন তাঁর হাতে একদমই সময় নেই। কিন্তু আমাদের সেটা পছন্দ হলো না। উনি স্কুলের সামনে পার্ক করা তাঁর গাড়িতে পৌঁছুতে পৌঁছুতেই বিচ্ছুর দল গাড়ির চাকা পাংচার করে দিল।

জরুরী কাজ ফেলে ভদ্রলোককে আমাদের স্কুলে আটকা থাকতে হলো আধা ঘন্টা। অন্য অতিথী যাঁরা ছিলেন তাঁদেরকে আপ্যায়নের জন্য আমাদের প্রধান শিক্ষিকার রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা অনেকেই সাবিনা ইয়াসমিনের অটোগ্রাফ সংগ্রহের জন্য রুমের সামনে ভিড় করলাম। আমাদের শিক্ষিকার সহকারী আমাদের খুব ঝাড়িবাজী করলো। ঠিক সে মুহূর্তে রুমের দরজা খুলে গেল, আমরা শুনলাম শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিন বলছেন একজন দুজন করে ছাত্রদেরকে পাঠিয়ে দিতে।

অন্য অতিথিরাও এটা করতে পারতেন, কিন্তু কেউ করেননি। বরং এমন একটা ভাব করেছেন যে আমরা সবাই তুচ্ছাতিতুচ্ছ। সাবিনা ইয়াসমিন যে সবাইকে অটোগ্রাফ দিলেন তাই না, সবার সাথে টুকটাক কথাও বললেন। আমি কোন ক্লাসে পড়ি, রোল নাম্বার কতো, এইসব বাক্যালাপ আর বুক পকেটে অটোগ্রাফ সম্বল করে আমি আমার বন্ধুদের মাঝে হিরো হয়ে উঠলাম। এরপর কেটে গেছে অনেকদিন, আমি কলেজে উঠেছি।

অটোগ্রাফ সংগ্রহের আগ্রহটা তখনও টিকে আছে। একদিন নিউমার্কেটে দেখা হয়ে গেল ওপার বাংলার গায়ক সুমনের সাথে। উনি ততদিনে কবির সুমন, সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গী, তিনিও সুমনের সাথেই ছিলেন। দুই তারকাকে পেয়ে ভিড় জমে গেছে। সবাই দূরত্ব বজায় রেখে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ওঁদের দিকে।

আমি কবির সুমনের সাথে সৌজন্যমূলক কথা বলে বুক পকেট থেকে একটা খাতা বের করে দিয়েছি অটোগ্রাফের জন্য, কলম দিতে গিয়ে দেখি কলম নেই! সাবিনা ইয়াসমিন তাঁর ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট সোনালী কলম বের করে দিলেন। উনি সেলিব্রটি মানুষ, স্বাভাবিক ভাবেই ভেবেছিলেন সুমনের অটোগ্রাফ নিয়ে আমি তাঁরও অটোগ্রাফ চাইবো। সেটা না করে আমি চট করে খাতাটা পকেটে চালান করলাম দেখে একটু বিস্মিতই হলেন। আমি কলম ফিরিয়ে দিতে দিতে বললাম, "আপনি অনেক আগে একবার ধানমন্ডি বয়েজে গিয়েছিলেন, একটা অনুষ্ঠানে। তখন আপনার অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম।

সেটা এখনও সযত্নে সংগ্রাহীত আছে। " উনি স্টার, এমন কথা, তোষামোদ-চাটুকারীতা অনেক সহ্য করতে হয়। কিন্তু আমার কথায় উনি লজ্জ্বা পেয়ে গেলেন। মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে কিছু বললেন, ঠিক ধরতে পারলাম না। গত রাত্তিরে মা ফোন করেছে।

সাবিনা ইয়াসমিনের জন্য মন খারাপ। খুব খুশি যে সরকার চিকিৎসার যাবতিয় খরচ বহন করবেন। মার কথা শুনে আমার ঘটনা দু'টো মনে পড়ে গেল। পাষাণ আমি এর আগে পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটায় নির্লিপ্ত ছিলাম, মার সাথে কথা বলে আমারও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। পোড়ার দেশটাতে গুনী মানুষের খুব অভাব।

অল্প যে কজন আছে তাঁদেরকে এভাবে হারাতে চাইনা। সাবিনা ইয়াসমিন সবার শিল্পী। শুনেছি এয়ারপোর্টে নাকি অগুনতি মানুষ এসেছিলেন তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে। এমন নির্লোভ ভালবাসা কজন পায় এক জীবনে! প্রিয় এ শিল্পীর জন্য আমার ভালোবাসা! সুস্থ হয়ে উঠুন, ফিরে আসুন আমাদের মাঝে... রজনীগন্ধা ফুলের মত গন্ধ বিলিয়ে যান দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে, আরও অনেক-অনেক দিন! (বি.দ্র. অটোগ্রাফ সংগ্রহের নেশাটা আর নেই, তাই খাতাটা রয়ে গেছে দেশে। সাথে থাকলে অটোগ্রাফটা স্ক্যান করে তুলে দিতে পারতাম) © অমিত আহমেদ আমি রজনীগন্ধা (একযোগে সচলায়তন, সামহোয়্যার ইন ও আমার ব্লগস্পটে প্রকাশিত)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.