তখন রান্নার গ্যাসের চাহিদা খুব। লাইসেন্স পাওয়াই যায়না। আবেদন করার প্রায় চার পাঁচ বছর পর লাইসেন্স পাওয়া যায়, তাও সিঙ্গল সিলিন্ডারের লাইসেন্স পাওয়া যায়।
বৌদি মানে আমাদের রাজাদার স্ত্রী আমাকে প্রায়ই বলেন, তোমাদের এত চেনা জানা, আমাকে একটা গ্যাসের লাইসেন্স করে দিতে পারোনা? কয়লা,ঘুটে,খড়ি জ্বালাতে জ্বালাতে জীবন জেরবার হয়ে গেল।
আমি বললাম, খুব পারি।
রাজাদাতো কোনোদিন বলেননি।
বৌদি বললেন, তুমি চেষ্টা করোনা ভাই, আমার খুব উপকার হয়। আমি বেঁচে যাই।
তখন বেঁচে যাওয়ার চাইতে- বাড়ীতে গ্যাস কানেকসান না থাকলে মান সন্মানই থাকতোনা।
যাদের বাড়িতে গ্যাস কানেকসান নেই, তাদের সে সময় কোনো স্ট্যাটাস বলে কিছু ছিলইনা।
আমার এক বন্ধু সরকারী দপ্তরে উচ্চপদে চাকরী করতেন। তাঁকে গিয়ে বললাম, আমাদের রাজাদাকে একটি গ্যাসের লাইসেন্স করে দাও।
ঠিকাছে - বললো আমার ব্যস্ত বন্ধু ।
আমার কিন্তু গ্যাসের লাইসেন্স চাইই চাই।
বললামতো - ঠিকাছে, এরই মধ্যে পেয়ে যাবি।
বন্ধু আশ্বাস দিলো।
আমিও বৌদিকে বললাম খুব শীগগীরই আপনার গ্যাস কানেকসান হয়ে যাবে। টাকাপয়সা যোগার রাখবেন। রাজাদাকেও বলবেন, সই সাবুদ করতে হবে ।
কয়েকদিন পরেই আমার বন্ধু আমাকে খবর দিলো, রাজাদার গ্যাসটা হয়ে গেছে, রাজাদাকে এসে নিয়ে যাস, সই সাবুদ করতে হবে ।
আমিও বৌদিকে সুখবরটা দিয়ে দিলাম।
পরের দিন রাজাদা আমার বাড়ীতে এসে হাজির । এসে প্রচন্ড গালাগালি । খবরদার, তুই আর আমার বাড়ীতে যাবিনা। তুই নিজেকে কি ভেবেছিস? সরকারী মহলে তোর দহরম মহরম - সেটা তোরই থাক।
আমাকে দেখাতে যাবিনা।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা । রাজাদাকে জোর ধমক দিয়ে বললাম, তুমি থামবেতো। কি ব্যাপার বলোতো আমায়।
তুই বাড়ীর মেয়েদের অলস করে দিবি ।
আমার কাঠের গোলায় এত চেড়া কাঠ, খড়ির অভাব নেই। গ্যাসের কি দরকার? খড়িতেই তো দিব্বি রান্নার কাজ হয়ে যাচ্ছে ।
ও-ও-ও, এতক্ষনে আমি বুঝতে পারলাম ।
তুমি গ্যাস নেবেনা? কেন? বৌদি যে বললেন।
লোকে গ্যাস পাচ্ছেনা আর তুমি পেয়েও নেবেনা ?
না আমি নেবোনা।
তোর কি? তুই বৌদির কাছে আর যাবিনা । মেয়েদের তুই অলস করে দিচ্ছিস।
রাজাদা সরকারী গ্যাসটা নিলেন না, মানে বৌদিকে নিতে দিলেন না। তারপর রাগ করে অনেকদিন রাজাদার বাড়িতে যাইনি।
অনেকদিন পর রাজাদা একদিন বাড়িতে এলেন ।
চা-টা খাবার পর বললেন, বাড়িতে যাস, তোর বৌদি তোকে ডেকেছে।
যাবার সময় রাজাদা বার বার বলে গেলেন, যাবি কিন্তূ ।
আমি গেলাম। বৌদি রান্না ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, নতুন গ্যাসে তোমাকে খাবার তৈরি করে খাওয়াবো - এসো ।
নতুন গ্যাস - মানে, ব্যাপারটা কি।
রাজাদা মিয়িমিটি হাসছেন।
বুঝলি না, গ্যাস থাকলে অনেক সুবিধে । এই ধর, চট করে রান্না হয়ে যায়- এই আর কি। খরচও অনেক বাঁচে।
কিন্তু নিলে কোথা থেকে? কানেকসানতো পাওয়া যাচ্ছেনা এখনও- আমি বললাম।
সে এক মাড়োয়ারি ডিলারের কাছ থেকে নিলাম । দাম একটু বেশীই পড়লো। সে যাক, গ্যাসটাতো করে দিয়েছে- ডাবল সিলিন্ডারই নিলাম, বুঝলি।
রাজাদাকে খুব খুশী খুশী দেখাচ্ছিল।
হায় রাজাদা - ধন্যি রাজাদা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।