মাধ্যমিকের ফল বেড়িয়েছে । চলছে বিভিন্ন স্কুলে উচ্চ-মাধ্যমিকে ভর্তির পালা । ক'দিন ধরেই বিভিন্ন স্কুলের সামনে সকাল থেকেই ফর্ম তোলার লম্বা লাইন পরছে । যারা ৬৫০-র নিচে নম্বর পেয়েছে তাদের ভালো স্কুলে ভর্তির কোনো আশাই নেই ।
আমাদের এখানের 'বিদ্যানিকেতন'-র চাহিদা আলাদা।
এখানে পড়তে না পারলে জীবনটাই বৃথা- এরকম একটা ধারনা আমাদের মধ্যে ছিল। আমার ভাস্তিও এবার পাশ করেছে। ওতো 'বিদ্যানিকেতন'-এ পড়বেই বলে জেদ ধরেছে । অগত্যা আমিও সকাল থেকেই ফর্ম তোলার জন্য লাইনে দাড়িয়েছি। আমার মতো অনেকেই সকাল থেকে লাইনে আছে।
লাইনে রাজাদাও আছেন । তারও এক ভাস্তি এবার পাশ করেছে। তবে শুনেছিলাম যে তার ভাস্তি ৬০০-র নীচেই নম্বর পেয়েছে, ও কি করে বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হবে ।
আমার ভাস্তি ৬০০-র ওপরেই নম্বর পেয়েছে । তবুও ভর্তির সমস্যা রয়েইছে।
এত কম নম্বরে ভর্তি নাও নিতে পারে।
ঠিক তাই, এত কম নম্বরে আমার ভাস্তি বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হতে পারলনা। প্রধান শিক্ষক সরাসরি না করে দিলেন।
শেষে আমার ভাস্তিকে কোলকাতার একটি স্কুলে ভর্তির জন্য পাঠিয়ে দিতে হোল।
আমাদের চেনাজানা অনেকেরই বোন বা অন্য কেউ ভর্তি হতে পারেনি।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, রাজাদার ভাস্তি কিন্তু কম নম্বর পেয়েও বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হয়ে গেল।
স্বপন এসে একদিন বললো,রাজাদার ভাস্তি কম নম্বর পেয়েও বিদ্যানিকেতনে কি করে ভর্তি হয়ে গেলরে ?
টোপলা বললো রাজাদার ভাস্তি ৬০০-রো নিচে নম্বর পেয়েছে। রহস্যটা জানতে হবে ।
রহস্যটা আমি জানি - দেবু রাজাদার কাছের লোক।
আমিও জানি - বললাম আমি ।
আসলে বিদ্যানিকেতনের পরিচালন সমিতির সম্পাদক হচ্ছেন ডাঃ দীপক মজুমদার । তিনি বিলেত ফেরত এফ. আর. সি. এস। খেলোয়ারদের খুব ভালো বাসেন। তাদের বিনে পয়সায় চিকিৎসা করেন। ওষুধও বিনে পয়সায় দিয়ে দেন ।
খেলোয়ার হলেই সাত খুন মাপ। রাজাদা সেই সুযোগটা নিয়েছেন ।
সুযোগ নিলেই হোল ? কম নম্বর পেয়েও? স্বপনের বোনও ভর্তি হবার সুযোগ পায়নি ।
চল, আমরা হেড স্যারের কাছে যাই - আমি বললাম । আমার ভাস্তি কোলকাতার কোনো স্কুলেই সুযোগ পায়নি ।
আবার ফিরে এসেছে ।
আমরা বেশ আট ঘাট বেঁধেই হেড স্যারের কাছে গিয়ে হাজির। হেড স্যারকে জেরা করতে পেরে আমাদের বেশ মজা হচ্ছিল । আমরা চেচামেচি করে হেড স্যারের অবস্থা কাহিল করে ছাড়লাম।
শেষে হেড স্যার আমাদের সবার আবেদনে সাড়া দিলেন।
বললেন, রাজাদার ভাস্তি যত নম্বর পেয়েছে সেই নম্বরকে সামনে রেখে আমাদের সবার বোন, ভাস্তিকে ভর্তি নেবেন।
আমাদের সবার বোন, ভাস্তি সেবার বিদ্যানিকেতনে ভর্তি হতে পেরেছিল।
বিদ্যাসাগর বাংলায় নারী শিক্ষা প্রসার করেছিলেন ।
আমাদের ভাস্তি বোনেদের উচ্চ শিক্ষা প্রসারে রাজাদা বিদ্যাসাগরের ভূমিকাই নিয়েছিলেন সেবার ।
যুগ যুগ জিয়ো রাজাদা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।