আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা ভার্সিটির কিছু চত্বর

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই কতদিন পর আজ আবার পুরানো স্মৃতিচারনে বসলাম, মনটা একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, সকাল আটটায় ক্লাশ শেষ না হতেই ইনকোর্স পরীক্ষার ধাক্কা, তার মধ্যে আছে বিকালে টিউশনি, আমার এক বন্ধু ছিল সে যখনই টিউশনিতে যেত আর কেউ যদি তাকে জিজ্ঞেস করত কোথায় যাচ্ছ? তার নির্বিকার উত্তর গাধার বাচ্চা মানুষ করতে যাচ্ছি । এর মধ্যে যারা আবার হৃদয় ঘঠিত ব্যাপারে জড়িত ছিল তাদের আবার সময় মত হাজিরা দিতে হত। শত ব্যস্ততার মধ্যেও একজন আর একজনকে বলে যেতাম হাকিম চত্বরে আসছিস তো।

ঢাকা ভার্সিটির কিছু জায়গার নাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শিক্ষার্থীরা মুখে মুখে দিয়ে গেছে চলছে পরের প্রজন্মে। মল চত্বর কলাভবন আর রেজিষ্ট্রার বিল্ডিংয়ের মাঝামাঝি মল চত্বর চেনেনা এমন কেঊ কি আছে? এর নাম করন নিয়ে আছে নানা মত, কারো কারো মতে এখানে এক সময় অনেক ময়লা ফেলা হত এই জন্য এর নাম করন মল চত্বর। আবার অনেকের মতে সকাল বেলা এখানে কাকের মল ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করা যায়না দেখে এর এই রূপ নাম করন। আমার মনে হয় ক্যাম্পাসে এমন কোন জুটি নেই যে প্রেম করার সময় এখানে দু’দন্ড বসেনি। মল চত্বরের আস্ল রুপ দেখা যায় সন্ধ্যের পর।

হলের ছাত্ররা সারা রাত এখানে মুখরিত করে রাখে। গান পাগল কিছু ছেলে গিটার, দোতারা নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেয় আর গান করে। আমাদের সময় জাহিদ গান করত। খালি গলায়, ওর ভরাট গলা শুনে অনেক রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে আমদের পাশে বসে পড়ত। লীন হয়ে যেত শিক্ষিত অশিক্ষিতের বেড়া, তখন যেন আমরা সবাই জাহিদের গানের শ্রোতা।

আবার কখনও কখনো কোন রিকশাওয়ালা ওই আসরে ধরে বসত আঞ্চলিক কোন গান স্তদ্ব হয়ে যেত রাতের নির্জনতা। হাকিম চত্বর হাকিম চত্বর হল যেভাবে : ১৯৬৭ সালের দিকে বাবার হাত ধরে দোহার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাড়ি জামান হাকিম ভাই। বয়স মাত্র পনের। পেটের দায়ে শুরু করেন চা বিক্রি। প্রথমদিকে পানও বিক্রি করতেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ঘেঁষা সবুজ চত্বরটি তখন জঙ্গলে ভরা। আজকের মতো এত মনোরম তথা পরিপাটি সুন্দর পরিবেশ ছিল না। কিন্তু হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকানে ভিড় থাকত সব সময়। ওই সময় ক্যাম্পাসে তেমন কোনো দোকানও ছিল না। সব আড্ডা হাকিম ভাইকেন্দ্রিক।

ছাত্ররা সব বিষয়ে আলাপ করত হাকিম ভাইয়ের সঙ্গে। তখন সেখানে একটি আম গাছ ছিল। আম গাছের নিচে বসে চা বিক্রি করতেন হাকিম ভাই। তখন থেকে ওই এলাকাকে হাকিম চত্বর বলা হতো। কিন্তু হাকিম চত্বর প্রসিদ্ধি পায় হাকিম ভাই মারা যাওয়ার পর।

৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুকালে দুই ছেলে আর তিন মেয়ে রেখে যান হাকিম ভাই। তার মৃত্যুর পর এক ছেলে ব্যবসা করতে হাকিম চত্বরে আসেন। মাস তিনেক পর চলে যান। শোনা যায় ৬০ এর দশকে হাকিম ভাইয়ের চা না খেলে নাকি অনেকের ঘুম হতনা, শত ব্যাস্ততার মধ্যেও অনেকে ছুটে যেত হাকিম চত্বরে। হাকিম ভাইর মিষ্টি ব্যাবহার আর আন্তরিক হাসি ছিল চা এর সাথে উপরি পাওনা।

এই হাকিম ভাইয়ের চা খেয়ে অনেক ছাত্র নেতা আজ মন্ত্রী মিনিষ্টার, এখনো অনেকের কাছে হাকিম ভাইর পাওনা আছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী থেকে রোকেয়া হলের সামনে পর্যন্ত হাকিম চত্বর। এখনো অনেক বড় বড় নেতা সময় পেলেই এখানে হাজিরা দেয়। এখানে হাকিম ভাইর কোন উত্তরসূরী না থাকলেও আছে নান্নুর দোকান আর আছে হাকিম ভাইর হাস্যোজ্জল ছবি। অলস চত্বর সকালে বসা কোন ছেলেকে সন্ধ্যায় যদি কেউ একই স্থানে বসে থাকতে দেখতে চাইত তবে অলস চত্বরে গেলেই হবে।

অর্থ্যাৎ সমস্ত আলসেদের বিরাট মিলন মেলা এই অলস চত্বর। কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন মধুর ক্যন্টিনের পাশেই অলস চত্বর। এই চত্বর ইদানিং সেলিম চত্বর নামেও পরিচিত পেয়েছে। মুলত সেলিমের চায়ের দোকানের জন্যি এই রকম নাম করন। সেলিমের দোকানে বাকী পরেনি এমন কোন ব্যক্তি নাকি ছাত্র রাজনিতীতে ছিল না।

সেলিম এখন ডাকসু ক্যাফের বাবুর্চি। বুদ্বিজীবি চত্বর নামে বুদ্বিজীবি হলেও এখানে কিন্ত কারো কবর নেই। ভিসির বাসার সামনে ১৪টি স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে দিয়ে এই চত্বর ঘরে উঠেছে। মূল রাস্তার সাথে হওয়ায় এখানে আড্ডা জমে সাধারনতঃ রাত নিঝুম হলে। আড্ডার রসদ দিতে সদা সর্বদা প্রস্তুত চা, পান, বিড়ি বিক্রেতারা।

ডাস চত্বর ডাস চত্বরের পরিচয় দেবার কিছু নেই, শামীম শিকদারের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সাথেই ডাস চত্বর। সারা দিন মান ছাত্রছাত্রীদের কোলাহল পদচারনায় ব্যাস্ত ডাস চত্বর। নব্বই দশকে যখন দেশের রাজনিতী ছিল উত্তাল, ঊত্তর পাড়া আর দক্ষিন পাড়ার মধ্যে অধিকাংশ বন্ধুক যুদ্ব এখানে সংগঠিত হয়েছে। উত্তর পাড়া আর দক্ষিন পাড়া দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দখল কৃত হলগুলোকে বুজায়। শ্যাডো কলাভবনের মূল ভবনের পাশে শ্যডো চত্বর।

কেউ কেউ একে আবার সাইকেল চত্বরো বলেন। সন্ধ্যের পর এখানে জোড়ায় জোড়ায় যুগল এসে বসে দেখে একে অনেকে ‘নিভৃত প্রেমকুঞ্জো’ বলে । তাজমহল চত্বর শহীদুল্লাহ হলের পিছনে পুকুরটির শান বাধানো চত্বরটি রাতের তাজমহল চত্বর নামে পরিচিত। এই পুকুর অনেকগুলো তাজা প্রান কেড়ে নিয়েছে, তাই এপুকুর নিয়ে তৈরী হয়েছে অনেক মিথ। এখন অনেকটা আইন করে পুকুরে নামা নিষিদ্ব।

মধুর ক্যন্টিন নিয়ে এখানে লিখলাম না ইচ্ছে আছে আমার প্রিয় অরুনদা ( মধুদার ছেলে, মধুর ক্যান্টিনের বর্তমান মালিক) কে নিয়ে পরে একটি পূর্নাঙ্গ পোষ্ট দেব।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.