ঢাকা শহরে গাড়ীর সংখ্যা কমানোয় “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী”র ভূমিকা
সারকথাঃ
আমাদের দেশের বড় বড় ডিগ্রীধারী ব্যক্তিগন বিভিন্ন সেমিনার বা টেলিভিশন টক শো তে অনেক সময় এমন ধরনের মন্তব্য করে থাকেন যে সেসব শোনার পর তাদের জ্ঞান সম্বন্ধে আমরা সন্দেহ প্রবণ হয়ে পড়ি । যেমন, ঢাকার যানজটের সমাধানের কথা প্রসঙ্গে একজন বললেন, বাস বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে। আর একজন জানালেন, রাস্তায় ভাল ট্রাফিক সিগনাল দিতে হবে, কোন কোন রাস্তা সিংগল লাইন করলেই সমাধান হবে। আবার, কারো কারো ধারনা, পুরান গাড়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হলে বা গাড়ী ব্যবহারের খরচ বাড়িয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । এই সঙ্গে রাজনীতিকরা তো পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মনো-রেল সহ কত বড় বড় কথাই বলে আসছেন ।
এই সব প্রস্তাবের অসারত্ব বা প্রয়োগ-সমস্যা আমরা একটু পরেই দেখব ।
এই প্রবন্ধে আমরা “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” নামে একটি নতুন জিনিসের কথা আলোচনা করব । “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” হচ্ছে গাড়ী ব্যবহারের প্রচলিত নিয়ম একটু পরির্তন করে একই গাড়ী দিনের দুই ভাগে দুই ভাবে ব্যবহারের ব্যবস্থা । এটি প্রবর্তিত হলেই ঢাকার যান বাহন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আমরা তা বলি না । আমরা বলি, সঠিক ভাবে প্রবর্তিত হলে এটি শহরের গাড়ির সংখ্যা কমানোর যোগ্যতা রাখে ।
সেই সঙ্গে আমরা বোঝাতে চেষ্টা করব, বেশী তাকে খরচ না করেও শহরের কোন কোন সমস্যার সমাধান করা যায় । এই আলোচনা আরও দেখিয়ে দেবে, সেমিনার বা টক শোতে বড় বড় ডিগ্রীধারী ব্যক্তি বা রাজনীতিকগন যে সব কথা বলেন তাতে কত বিভ্রান্তি থাকে ।
ঢাকার যানবাহন সমস্যাঃ
ঢাকা শহরের যানবাহন সমস্যা সম্বন্ধে আমরা সবাই কম বেশী অবগত আছি । যানবাহনে যাতায়াত সমস্যা এখন প্রধানতঃ যানজটের সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে । সেমিনার বা টেলিভিশন টক শো তে বলা বক্তব্যে আসছি ।
(০১) যারা বলছেন, “বাস বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে” তাদের জানা উচিত, ঢাকায় বাসের কোন অভাব নেই, বা প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে বাস আনায়ও কোন অসুবিধা নাই। সমস্যা হল, যানজটের কারনে প্রতিটি বাসের ট্রাভেল টাইম এত বেড়ে যায় যে, যারা বাস চালায় তাদের ভাড়ায় পোষায় না । এই অবস্থায় প্রতি ট্রিপএর ট্রাভেল টাইম না কমিয়ে বাসের সংখ্যা বাড়ালে কোন কাজ হবে না ।
(০২) “সিগনাল উন্নয়ন” বা সিংগল লেন কিছু সুবিধা দেবে সন্দেহ নাই । কিন্তু বর্তমানে যে বিরাট সমস্যায় আমরা আছি তার কোন সমাধান দেবে না ।
(০৩) “পুরান গাড়ীর লাইসেন্স বাতিল করা” সম্বন্ধে বলতে হয়, পুরানো গাড়ীর লাইসেন্স বাতিল করা হলে লোকে নতুন গাড়ী কিনে নেবে ।
(০৪) “গাড়ী ব্যবহারের খরচ বাড়ানো” হলে যাদের গাড়ী একান্ত প্রয়োজন তারা অন্য খাতে খরচ কমিয়ে গাড়ী ব্যবহার করবে । এদিকে মানুষের আয় বাড়তে থাকলে নতুন মানুষেরা গাড়ী কিনবে । তাই গাড়ীর সংখ্যা কমার কোন সম্ভাবনা থাকবে না ।
এর পর থাকল, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মনো-রেল ইত্যাদির কথা ।
আমরা জানি, যে সব দেশে রাজনীতি করার খরচ স্বচ্ছ পথে আসে না সে সব দেশে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী খরচ প্রধানতঃ এই ধরনের বড় বড় প্রকল্পের কমিশন থেকে সংগ্রহ করা হয় । এই কারনেই এই সব দপ্তরের মন্ত্রীগন দলে সবচেয়ে বেশী খাতির পেয়ে থাকেন । তাই এগুলি সমস্যার কোন সমাধান দিক বা না দিক, রাজনীতিক ও আমলারা নিজেদের স্বার্থেই এগুলি করবেন। এগুলি বাস্তুবায়িত হতে দীর্ঘ সময় লাগে । রাজনীতিকরা ভালই জানেন, সমস্যার সমাধান না হলেও অতদিন বা বছর পরে কেউ আর তাদের দায়ী করতে আসবে না ।
এ ধরনের প্রকল্প গ্রহনে এটিই তাদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ।
যানবাহন সমস্যার সমাধানঃ
ঢাকার যানবাহন সমস্যার সমাধান সম্বন্ধে বলা যায়, সরকারের এই সমস্যা সমাধানের কোন আন্তরিক ইচ্ছা নেই । সরকারের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র লোক দেখানো কাজ এবং তার মাধ্যমে নিজেদের লোকের আর্থিক উন্নতি ও নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ । ঢাকা শহরের আরও অনেক সমস্যা সহ যানবাহন সমস্যা যে কেবল মাত্র অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারনে তা এটা একটা শিশুরও অজানা নয় । তাহলে সরকার তা বুঝতে পারবে না কেন ? আর সেটা বুঝতে পারলে তো সরকার তা ক্রমান্বয়ে কমানোর ব্যবস্থা করতো ।
তাদের দলীয় ঘোষনায় তো গ্রাম উন্নয়ন ও উপজেলা বাস্তুবায়নের কথা আছে । সরকার কি তা করেছে ? সরকার বরং উন্নয়নের টাকা প্রধানতঃ ঢাকায় এবং সাংসদদের নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করে চলেছে । এ বিষয়ে আদালতের একটি মামলার কথা মনে করা যেতে পারে ।
সরকার প্রকাশ্যে কখনই বলবে না, কিন্তু সরকারের কার্য্যাবলী থেকে একথা পরিষ্কার যে তাদের নীতি নির্ধারকগন বাংলাদেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে “শুধুমাত্র ঢাকা শহরের স্থাবর সম্পদের মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা”য় ব্যস্ত । এটি না করে সরকার যদি আন্তরিক ভাবে সমগ্র দেশের এবং পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলির উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করতো তাহলে ফলশ্রুতিতে স্বাভাবিক ভাবেই ঢাকার অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো ।
একথা ঠিক যে ঢাকা শহরের অনেক সমস্যাই বিগত সরকারগুলির সৃষ্টি । সেই সঙ্গে এটাও সত্য যে এই সরকার শুরু থেকে ঢাকার নানাবিধ সমস্যা সমাধানের জন্য বুদ্ধি এবং আন্তরিকতা নিয়ে কোন চেষ্টা করে নি । ইতিমধ্যে পাতাল রেল, মনোরেল, আবাসন, বাস বিক্রি, জমি বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরের নানা সমস্যা নিয়ে বহু সেমিনার করেছে । বলাই বাহুল্য এই সব প্রতিষ্ঠানের সবারই নিজস্ব ধান্দা আছে । এর বাইরে নিরপেক্ষভাবে যে সিদ্ধান্ত নিতে পারত সে হচ্ছে নির্বাচিত সরকার ।
ঢাকাবাসীর দুর্ভাগ্য, আমাদের সরকার তেমন কিছুই করে নাই ।
দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ীঃ
আমাদের আলোচনার বিষয় ঢাকা শহরের যান বাহন সমস্যার সমাধান নয়, বরং শহরে চলাচলকারী গাড়ীর সংখ্যা কমানোর একটি উপায় সম্বন্ধে । আমরা বাংলাদেশের ঢাকা শহরে “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” নামে একটা নতুন জিনিস প্রবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। এ ধরনের সম্ভাবনা বিচারের জন্য তা যে দেশ ও সমাজে প্রবর্তিত হবে তার পটভূমি খুব ভালো ভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন । এই সূত্র ধরেই প্রাসঙ্গিক ভাবে আমরা উপরের বিষয়গুলি আলোচনা করলাম ।
আমরা দেখেছি, গাড়ীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাসগুলি ভালো গতিতে চলতে পারছে না । এমন অবস্থায় বাসের সংখ্যা বাড়ালেই যে গাড়ীর সংখ্যা কমবে না, তা বলাই বাহুল্য । নিজের বাড়ীর দরজা থেকে একজন মানুষ গাড়ীতে ওঠেন, নিজের ইচ্ছামতন পথে ভ্রমন করে একেবারে নির্দিষ্ট স্থানে নেমে যান । এতোটা সুবিধা কি বাসে পাওয়া সম্ভব ? শহরে একটা গাড়ী রাখা কিন্তু কম সমস্যার ব্যাপার নয় । গ্যারেজ লাগবে, ড্রাইভার লাগবে, গ্যাস ষ্টেশনে যেতে হবে, আরও কত ।
যারা খুব ধনী তাদের কথা বাদ দিই । গাড়ীর কাছাকাছি সুবিধার অন্য কোন যানবাহন পেলে যে সব মধ্যবিত্ত এখন প্রায় বাধ্য হয়ে গাড়ী রাখেন তাদের সবাই না হলেও অধিকাংশই তা বাদ দেবেন । আমরা আগেই বলেছি, বাস কখনও গাড়ীর সঙ্গে তূলনীয় নয় । কিছুটা সংস্কার সাপেক্ষ্যে (যেমন, ড্রাইভারকে একাউন্টেবল রাখা, নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ী পাওয়ার নিশ্চয়তা, ভাড়ায় অস্থিরতা না থাকা ইত্যাদি) গাড়ীর সঙ্গে যা তূলনীয় হতে পারে তা হলো ট্যাক্সি ।
এখন আমরা যদি ঢাকায় প্রচুর ট্যাক্সি প্রবর্তন করি তাহলে রাস্তা আরো জ্যাম হয়ে যাবে ।
এই অবস্থায় আমরা যা প্রবর্তন করতে পারি তা হচ্ছে “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” । এ জন্য কোন নতুন গাড়ী আনতে হবে না, নতুন ড্রাইভারও লাগবে না । যা লাগবে তা হলো সরকারের সদিচ্ছা এবং কয়েকটি আইন প্রনয়ন করা । সরকার এই মর্মে আইন করবেন যে, কিছু প্রাইভেট গাড়ী ও মাইক্রোবাসকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ট্যাক্সি হিসেবে এবং বাকি সময় প্রাইভেট গাড়ী হিসেবে চলার লাইসেন্স দেয়া হবে। আবার অন্য কিছু গাড়ীকে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ট্যাক্সি হিসেবে এবং বাকি সময় প্রাইভেট গাড়ী হিসেবে চলার লাইসেন্স দেয়া হবে।
কেমন করে কার্যকরী করতে হবেঃ
শুনতে যত কঠিনই মনে হোক, আসলে কাজটি অত্যন্ত সোজা । এখানে সরকারকে তেমন কোন খরচই করতে হবে না । যা করতে হবে তা হল কিছু আইন প্রনয়ন করা । বিভিন্ন পক্ষ, বিশেষতঃ জনগন নিজেদের স্বার্থেই একাজে এগিয়ে আসবেন । বর্তমানে যাদের গাড়ী আছে তাদের মধ্যে যারা এই সুবিধা নিতে ইচ্ছুক তারা এই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সকালের ও বিকালের জন্য আলাদা লাইসেন্স নম্বর দেয়া হবে । যেহেতু আমাদের দেশের আমলা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সততার মান প্রশংসনীয় পর্য্যায়ের নয় তাই“দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” প্রবর্তনের সময় আবশ্যকীয় কিছু নিয়মও এখানে বলে দেয়া হচ্ছে । লাইসেন্স দেয়ার সময় কর্তৃপক্ষকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে ।
গাড়ীর ক্ষেত্রেঃ গাড়ীটি ট্যাক্সি হিসেবে চলার উপযুক্ত এবং সাম্প্রতিককালে তৈরী ।
ড্রাইভারের ক্ষেত্রেঃ ড্রাইভারকে ঢাকা শহরে গাড়ী চালানোর অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে ।
এসব ড্রাইভারের সকল তথ্য একটি ওয়েবসাইটে থাকবে ।
ট্যাক্সি চালানোর ক্ষেত্রেঃ (ক) ট্যাক্সি হিসেবে চলাকালে ড্রাইভারের ছবি, লাইসেন্স নং, মোবাইল নং ইত্যাদি দরজার বাইরে প্রকাশ্যে লাগানো থাকবে ।
(খ) ট্যাক্সি মিটারে চলবে ।
(গ) ট্যাক্সির ছাদে পরিচয়জ্ঞাপক চিণ্হ থাকবে ।
লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রেঃ (ক) শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংখ্যায় লাইসেন্স দিতে হবে ।
(খ) সব চাইতে নতুন গাড়ী প্রথমে বিবেচিত হবে । এখানে ‘টাই’ হয়ে গেলে আবেদনকারীদের যার আয় কম তাকে বিবেচনা করতে হবে । এখানেও‘টাই’ হয়ে গেলে প্রবীন আবেদনকারীকে বিবেচনা করতে হবে ।
(গ) বহুতল ভবনের আবেদন কারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ২০টি পরিবারের জন্য ১টী মাইক্রোবাস বা ২ টী গাড়ীর অনুমতি দেয়া যেতে পারে ।
কাদের সুবিধা / অসুবিধাঃ
যে কোন নতুন নিয়মই কারো সুবিধা আর কারো অসুবিধা সৃষ্টি করে থাকে ।
“দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী”র ক্ষেত্রেও একথা সত্য । তবে সব দিক বিবেচনা করলে এতে সুবিধার পরিমানই বেশী । এখানে যাদের স্বার্থ জড়িত তারা হল, (০১) গাড়ী এবং একই সঙ্গে ট্যাক্সির মালিক, (০২) ড্রাইভার, (০৩) যানবাহনে চলাচলকারী লোকজন এবং (০৪) ঢাকা শহর । আমরা একে একে এদের সবার কথা আলোচনা করছি ।
(০১) গাড়ী ও ট্যাক্সির মালিকঃ সুবিধা - এক বেলা ট্যাক্সি হিসেবে চালানোয় মালিক কিছুটা আর্থিকভাবে লাভবান হবে ।
অসুবিধাঃ তার গাড়ীর মেইনটেইনেন্স খরচ কিছুটা বাড়বে এবং গাড়ী আগের মতন বয়স (লাইফ) পাবে না ।
(০২) ড্রাইভারঃ সুবিধা - এক বেলা মালিকের কাছ থেকে বেতন পাবার নিশ্চয়তা থাকবে । এর ফলে তার আচার আচরন ভাল হবার এবং গাড়ী চালানোয় সতর্ক হবার সম্ভাবনা আছে । অসুবিধা – নাই ।
(০৩) যান বাহনে চলাচলকারী লোকজনঃ সুবিধা -বেশী সংখ্যায় ও নির্দিষ্ট স্থানে ট্যাক্সি পাওয়ায় এবং ড্রাইভারের একাউন্টেবিলিটি থাকায় লোকজনের সুবিধা হবে ।
ড্রাইভার বা মালিকদের জনগনকে জিম্মি করে দাবী আদায়ের সম্ভাবনা থাকবে না । অসুবিধা – নাই ।
(০৪) ঢাকা শহরঃ সুবিধা -শহরে প্রাথমিক অবস্থায় মোট গাড়ীর সংখ্যা না কমলে ও ট্যাক্সির সংখ্যা বাড়বে । একটি গাড়ী যত মানুষকে সেবা দিতে পারে একটি ট্যাক্সি তার চেয়ে বেশী মানুষকে সেবা দিতে পারে । আবার ট্যাক্সি যত বেশী বেশী পাওয়া যাবে লোকজনের গাড়ী রাখার বা কেনার প্রয়োজন ততই কমতে থাকবে ।
গাড়ীর সংখ্যা কমলেই বাস দ্রুত এবং বেশী সংখ্যায় চলতে পারবে । অসুবিধা – নাই ।
“দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” প্রচলনে আর যা করতে হবেঃ
আমরা দেখেছি কোন প্রোগ্রাম প্রথম থেকেই পরিপূর্ণ ভাবে না নেয়া হলে তা কখনই সুফল দেয় না । তাই, এই “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” প্রবর্তনের ক্ষেত্রে আরও একটি দরকারী কথা এখানে বলে নিচ্ছি । বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি আস্বাভাবিক এবং ত্রুটিপূর্ন দিক হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি ।
এর ফলে অনেক হিসাবই ঠিক থাকে না । আবার রাজনীতিকগন “বিশেষ কারনে” ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় জিনিষের স্বাভাবিক মূল্যপ্রবনতাও ঠিক থাকে না। যেমন, বাইরের পৃ্থিবীতে তেমন মূল্যবৃ্দ্ধি না হলেও সরকারের আমদানী নীতির কারনে গাড়ীর, এমনকি পুরানো গাড়ীর দামও ক্রমাগত বাড়ছে । এর ফলে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা এ রকম । ধরা যাক, একজন লোক ১০ লাখ টাকা দিয়ে একটি গাড়ী কিনল ।
৪ বৎসর ব্যবহারের পর তার এটি ৬ বা ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করার কথা । কিন্তু সরকারের “কারো স্বার্থে প্রণীত” বা ত্রুটীপূর্ণ আমদানী নীতির কারনে এটি একই (মানে ১০ লাখ) বা তারচেয়ে বেশী দামে বিক্রি হয়ে থাকে । কয়েক বৎসর গাড়ী ব্যবহারের পরিপূর্ণ সুবিধা পাওয়ার পরেও লাভে গাড়ী বিক্রির এই সুবিধা ঢাকা শহরে গাড়ীর সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন।
ব্যবসায়ীদের প্রভাবের কারনে সরকার উপরোক্ত ভূল নীতি পরিবর্তন করতে পারবেন কি না সন্দেহ । এমতাবস্থায় “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” প্রবর্তনের মাধ্যমে গাড়ীর সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য আমরা আরো একটি আইনের প্রস্তাব করছি ।
এটি হলো, পুরানো গাড়ী বিক্রয় বা এই ধরনের গাড়ীর লাইসেন্স নবায়ন করার সময় ‘ফি-স’ এমন ভাবে নির্ধারন (বৃদ্ধি) করতে হবে যাতে পুরানো গাড়ীর দাম যুক্তিনির্ভরভাবে কমে যায় । গাড়ী আমদানীকারকগনও এটি সমর্থন করবেন । এটি করা হলে ট্যাক্সিতে চলাচল গাড়ী ব্যবহারের চেয়ে লাভজনক হবে এবং শহরে গাড়ীর সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকবে ।
উপসংহারঃ
পৃথিবীর কোন দেশেই এখন পর্য্যন্ত “দ্বি-ব্যবহারিক গাড়ী” প্রবর্তন করা হয় নাই । তবুও একেবারে সাধারন জ্ঞান দিয়েই বোঝা যায়, এটি প্রবর্তনে কোন সমস্যা নাই ।
প্রশ্ন উঠতে পারে এই পদ্ধতি এতদিন কেন চালু হয় নি । এর উত্তর হচ্ছে, মাত্র কয়েক মাস আগে এই পদ্ধতিটি উদ্ভাবিত হয়েছে, যার আগে এটির কোন অস্তিত্ব ছিল না । উদ্ভাবনের পর এই লেখক বিদেশী পত্র পত্রিকায় এবং দেশী ইংরেজি পত্র পত্রিকায় এই সম্বন্ধে লেখালেখি করেন যা ইন্টারনেটএ দেখা যেতে পারে । বাংলাভাষী জনগনের অবগতির জন্য নতুন উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি এই প্রথমবারের মত বাংলায় প্রকাশ করা হলো ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।