১৯৭১-এর সেই ভয়াবহ ২৬৬ দিনে জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের ব্যানারে গোলাম আজম স্বাধীনতাবিরোধী খুনিদের সুসংগঠিত করেছিল। ৭১-এর ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় বইয়ে প্রকাশিত ৭১-এর সময়কার দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ ও সংগ্রাম থেকে গোলাম আজমের ভূমিকার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে সংকলিত আকারে ধরা হলো এই পোস্টে ...
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গোলাম আজম জামাতের শ্রম ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শফিকুল্লাহ ও তেজগাঁও থানা শান্তিকমিটির লিয়াজোঁ অফিসার মাহবুবুর রহমান গুরহা এবং রাজাকারবাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ মোহাম্মদ ইউনুস সহ ঢাকার মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে আলবদর হেড কোয়ার্টার এবং রাজাকারবাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে। সেখানে রাজাকার ও আলবদরদের উদ্দেশ্যে ভাষণে গো.আ. বলে, ''রাজাকারবাহিনী কোনো দলের নয়, তারা পাকিস্তানে বিশ্বাসী সকল দলের সম্পদ। ''
স্বাধীনতামনা বাঙ্গালিদের প্রসঙ্গে গো.আ. বলে, ''বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রু বেশি ক্ষতিকর।
এদের ব্যাপারে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং রাজাকাররা তাদের পেছনে এগিয়ে এসেছে। ''
রাজাকারদের ভালোভাবে ট্রেনিং গ্রহণ করে যতোশীঘ্র সম্ভব গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে গো.আ. বলে, ''অভ্যন্তরীণ শত্রুকে তাড়াতাড়ি দমন করে সেনাবাহিনীকে শত্রুমুক্ত করার কাজে জলদি সহায়তা করতে হবে। ''
এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমেণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরাজয়ের সংবাদ আসতে শুরু করে। সুযোগ বুঝে গো.আ. জামাতের সহকারী প্রধান মওলানা আবদুল রহিম এবং প্রাদেশিক রাজস্বমন্ত্রী এ কে এম ইউসুফকে নিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এবং সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকে।
২৩ নভেম্বর ১৯৭১। স্বাধীনতা সূর্য উদিত হওয়ার ঠিক এই সময়টায় লাহোরে সাংবাদিক সম্মেলনে গো.আ. রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের উন্নতমানের ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে জোর দাবি জানায়।
২৭ নভেম্বর ১৯৭১। রাওয়ালপিন্ডিতে এক সমাবেশে গো.আ. বলে, ''দুশমনদের (মুক্তিযোদ্ধা) এখন আক্রমণই সর্বোত্তম পন্থা। আর নয় আত্মরক্ষা।
''
৭১-এ বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশায় জড়িত ছিল গো.আ.। ১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল ততকালীন বিচিত্রায় '৭১-এ ভুল করিনি - গোলাম আজম ও জামাতের রাজনীতি' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ''সেপ্টেম্বরে রাও ফরমান আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে গো.আ. বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা পেশ করে। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আবদুল মালেক, ব্যারিস্টার কোরবান আলী, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, আব্বাস আলী খান সহ প্রমুখ জামাত নেতারা জড়িত ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী উদ্ধারকৃত দলিলে প্রমাণ মেলে এই ষড়যন্ত্রের। বিভিন্ন দলিলপত্রে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া ছিল যে, ''পূর্ব পাকিস্তান যেহেতু টিকবে না, তাই এখানকার বুদ্ধিজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, ডাক্তারকে চিরতরে শেষ করে দিতে হবে যেন পূর্ব পাকিস্তান কখনো দেশ চালাতে না পারে।
''
বিভিন্ন লিস্ট করে, সেই মোতাবেক বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা, কাউকে পাওয়া না গেলে স্বজনদের গ্রেফতার ও অত্যাচারের মাধ্যমে সেই ব্যক্তির খোঁজ বের করা সহ বিভিন্ন নির্দেশনামা আরবী ও বাংলাতে সেইসব দলিলপত্রে খুঁজে পাওয়া গেছে। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন সম্পর্কে বিচিত্রায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের কোনো জবাব তখন জামাতে ইসলামী নেতারা দেয়নি।
নভেম্বর মাসেই জামাতে ইসলামীর এক নেতা আলবদরের সমাবেশে বলে, ''পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য এ যুদ্ধ নয় - এ যুদ্ধ ইসলামের। নমরুদদের হাত থেকে পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার জন্য জামাতের আমীর গোলাম আজমের নির্দেশ পালন করুন। ''
বুদ্ধিজীবী হত্যা কার্যকর করার জন্য উপযুক্ত রাজাকার ও আলবদর বাছাইয়ের জন্য গো.আ. ডিসেম্বরের প্রথম দিকে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের পরিচালিত আলবদর ও রাজাকার প্রশিক্ষণ শিবির পরিদর্শন করে।
২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। ঢাকার শেরাটন হোটেলে জামাতের দেয়া সংবর্ধনায় গো.আ. বলে, ''জামাতে ইসলামী পাকিস্তান ও ইসলামকে এক ও অভিন্ন মনে করে। পাকিস্তান সারা বিশ্বের জন্য মুসলিমদের ঘর। পাকিস্তান না থাকলে কোনো জামাত কর্মীর বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। ''
প্রথম পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।