আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালমান রুশদি ও নাইটহুড বিতর্ক

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে নাইটহুড বেশ পরিচিত না হলেও মোটামুটি চেনা একটি শব্দ। কথাটা চেনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সূত্রে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দুই বছর পর ১৯১৫ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ তাকে নাইটহুড দেন। কিন্তু বৃটিশ বাহিনীর জালিয়ানওয়ালাবাগ গণহত্যার প্রতিবাদে ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড পরিত্যাগ করেন।

ঘটনাটি না ঘটলে রাজার দেয়া সম্মান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ স্যার হিসেবেই সম্বোধিত হতেন। মধ্যযুগে নাইট উপাধি দেয়া হতো রাজা-রানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ভদ্র, নম্র ও অনুগত সেনা নায়ক ও শাসনকাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। পরে নাইটহুডের পরিধি বৃদ্ধি পায়। নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নাইটহুড দেয়ার রীতি চালু হয়। বৃটিশ রাজতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর রাজা-রানী পরিণত হন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধানে।

আর নাইটহুড প্রতীকী ব্যাপারে পরিণত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নাইটহুডকেই বৃটিশ এসটাবলিশমেন্টের পক্ষ থেকে দেয়া সেরা সম্মান হিসেবে গণ্য করা হয়। এটা রানীর নামে রানীর জন্মদিনে ঘোষণা করা হলেও, প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন সরকারের মতোই এখন নাইটহুড দেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ফলে নামে নাইটহুড হলেও এটি এখন বৃটেনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। স্বাভাবিকভাবেই কাউকে নাইটহুড খেতাব দেয়া হলে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম হয়।

বহু মানুষ তাদের সম্মানের সঙ্গে স্যার বলে সম্বোধনও করেন। এর আগে নাইটহুড নিয়ে সর্বশেষ বিতর্ক জমেছিল বেনজামিন জেফানিয়ার নাইটহুড প্রত্যাখ্যানের ঘটনা থেকে। ২০০৩ সালে বৃটেনের রাস্তাফারিয়ান লেখক ও প্রতিবাদী ব্ল্যাক কবি জেফানিয়াকে নাইটহুড দেয়া হলে তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, অফিসার অফ দি অর্ডার অফ বৃটিশ এমপায়ার পদকটি আমাকে মনে করিয়ে দেয় কিভাবে বৃটিশ শাসকদের দ্বারা আমার পিতামহীরা ধর্ষিত হয়েছিলেন এবং নিহত হয়েছিলেন আমার পিতামহরা। তিনি এটি গ্রহণ করাকে তুলনা করেছিলেন নিপীড়কদের কাবে যোগ দেয়ার সঙ্গে। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও নাইটহুড যে তার সম্মান বা গুরুত্ব হারায়নি তা আবার প্রমাণিত হলো সালমান রুশদির নাইটহুড পাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে।

বিতর্কিত গ্রন্থ স্যাটানিক ভার্সেস লেখার পর রুশদি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জীবন যাপন করেছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে খুব কমই অংশ নিয়েছেন। কিন্তু লেখা থামাননি। লেখার পুরস্কার হিসেবে নানা ইউনিভার্সিটির সম্মান, বুকার, বুকার অফ দি বুকারসসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। ইসলামিক রাজনীতির মোড় ফেরার পর নব্বইয়ের শুরু থেকে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে সরব হতেও শুরু করেছেন।

এসব নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবাদ বা কথাবার্তা হয়নি। অনেকেই ভেবেছিলেন, আপাতত ফতোয়া ও এ সম্পর্কিত ঘটনাপ্রবাহের ইতি ঘটেছে। ফলে রুশদির নাইটহুড প্রাপ্তির পর ইরান ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমি অনেক মিডিয়া অবাক হয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে ব্যাপারটা সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রতিবাদ জানানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে।

পার্লামেন্টে আলোচনা করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সঙ্গে রাস্তার বিক্ষোভ তো আছেই। ইসলামী বিশ্বে সালমান রুশদিকে নিয়ে বিতর্ক আছে, থাকবে। বিতর্ক সাময়িকভাবে পেছনে চলে গেলেও এর সমাধান আসেনি। রুশদি সাহিত্যিক হিসেবে তার অবদান রেখেছেন, বিশ্বে তার পাঠক প্রচুর।

কিন্তু মুসলিমরা স্যাটানিক ভার্সেসের স্মৃতি ভুলতে পারেননি। তাই রুশদির স্যার উপাধি ১৮ বছর আগের সে ইসুটিকে একেবারে সামনের কাতারে এনে দিয়েছে। এবার পাকিস্তান বা ইরানের মুসলিমরাই শুধু নন, বৃটেনের মুসলিম নেতারাও প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠেছেন। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রস্থানের আগে এটা তার কাছ থেকে আসা শেষ আঘাত। দাবি উঠেছে, এটি প্রত্যাহার করা হোক।

স্বাভাবিকভাবেই বৃটেন সরকার চাপে পড়েছে। নাইটহুড নিয়ে মুসলিমদের আবেগ খুব বেশি থাকবে এটা ভাবা যায় না। ইরাকে আগ্রাসন চালানো অন্যতম রাষ্ট্রীয় শক্তি বৃটেন। তাদের দেয়া রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে মুসলিমরা খুব বেশি আবেগপ্রবণ থাকবেন সেটা ভাবা একটু কঠিন। তাহলে কোন ব্যাপারটি তাদের মনে ১৮ বছর আগেকার একটি ইসু নতুন করে জাগিয়ে তুললো।

এ প্রশ্নের সহজ উত্তর আপাতত নেই। সাহিত্য মহলেও রুশদির নাইটহুড নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখক হিসেবে পরিচিত রুশদি ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত কাছাকাছি এসেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলেই তার ভাগ্যে এ সম্মান জুটেছে। কেউ কেউ একে রুশদির নৈতিক বিচ্যুতি হিসেবে দেখছেন। আলোচনা চলছে তার সাহিত্যিক অবদান নিয়েও।

পোস্ট কলোনিয়াল ইংরেজি সাহিত্যে রুশদিকে একটি ধারার উদ্যোক্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। তার হাতে বিকশিত হয়েছে ইনডিয়ান ইংরেজি ফিকশন। এখন বিশ্বে ইনডিয়ান ইংরেজি সাহিত্যের রমরমা চলছে। অরুন্ধতী, কিরণ দেশাই, অমিতাভ ঘোষ, অমিত চৌধুরির মতো সাহিত্যিকরা নতুন একটি সাহিত্যিক মহাদেশের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার পর এদিকে পাঠক ও সমালোচকের দৃষ্টি পড়েছে।

আর এর বড় ক্রেডিট সালমান রুশদিকে দেয়া হচ্ছে। মিডনাইটস চিলড্রেন (১৯৮১), মুরস লাস্ট সাই (১৯৯৫), ফিউরি (২০০১) থেকে সর্বশেষ উপন্যাস শালিমার দি ক্লাউন (২০০৫) পর্যন্ত রুশদি পরিবর্তিত হয়েছেন অনেক। তার মতের পরিবর্তন ঘটেছে। এ পরিবর্তনের আভাস শালিমার দি কাউন ও সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারগুলোতে বিশেষভাবে টের পাওয়া গেছে। পশ্চিমি নীতিগুলোর খানিকটা সমালোচনাও স্থান পেয়েছে তার বক্তব্যে।

নিজের কাশ্মিরি শেকড়কে নতুনভাবে অনুধাবন ও অনুভব করার তাগিদ বোধ করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া রুশদির বয়স এ বছর ১৯ জুনে ষাটে পড়লো। স্যার উপাধি ও সে নিয়ে বিতর্কের পর ষাটে বড় একটা হোচট খেলেন স্যার আহমেদ সালমান রুশদি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.